যে স্ত্রী স্বামীকে কষ্ট দেয়
যে স্ত্রী স্বামীকে কষ্ট দেন, তার সম্পর্কে ইসলামে কঠোর সতর্কবাণী এসেছে। দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই একে অপরের প্রতি সদয় ও যত্নশীল হওয়া উচিত।
ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে, স্বামীর মনে কষ্ট দেওয়া বা তার হক আদায় না করা একটি বড় পাপ হিসেবে গণ্য হয়।
প্রধান সতর্কতা ও পরিণতি:
ফেরেশতাদের অভিশাপ: হাদিসে এসেছে, যদি কোনো স্ত্রী তার স্বামীর বিছানায় যেতে অস্বীকার করে এবং স্বামী রাগান্বিত অবস্থায় রাত কাটান, তবে সেই স্ত্রীকে সকাল পর্যন্ত ফেরেশতারা অভিশাপ দিতে থাকেন। (সহীহ বুখারী, মুসলিম)
জান্নাতে প্রবেশে বাধা: যে স্ত্রী বিনা কারণে স্বামীর অবাধ্য হন বা তাকে কষ্ট দেন, তার জন্য জান্নাতে প্রবেশ কঠিন হতে পারে, যতক্ষণ না স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট হন।
আমল কবুল না হওয়া: অনেক আলেমের মতে, স্বামীর হক বা অধিকার ক্ষুণ্ণ করলে বা তাকে কষ্ট দিলে অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি কবুল হওয়া কঠিন হতে পারে, কারণ এটি বান্দার হকের অন্তর্ভুক্ত।
ক্ষমার অযোগ্যতা: আল্লাহ্ তাআলা মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া অনেককেই ক্ষমা করে দেন, তবে বান্দার হক (যেমন স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য) সম্পর্কিত পাপ বান্দা ক্ষমা না করলে আল্লাহ্ও ক্ষমা করেন না।
করণীয়:
দাম্পত্য জীবন সুন্দর রাখার জন্য স্ত্রীকে পরামর্শ দেওয়া হয়:
আনুগত্য: ইসলামের সীমারেখার মধ্যে স্বামীর বৈধ আদেশ মেনে চলা।
সদাচরণ: স্বামীর সাথে কোমল ও মিষ্টি ভাষায় কথা বলা এবং তার প্রতি সদাচারণ করা।
রাগ সংবরণ: স্বামীর ভালো দিকগুলোর প্রশংসা করা এবং ছোটখাটো ভুল বা মতের অমিল হলে ধৈর্যধারণ করা।
শারীরিক চাহিদা পূরণ: স্বামীর শারীরিক চাহিদার প্রতি সজাগ থাকা এবং বিনা ওজরে তাতে সাড়া দেওয়া।
অন্যদিকে, স্বামীকে সহনশীল হওয়ার এবং স্ত্রীর সাথে ভালো ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি স্ত্রী অবাধ্য হন, তবে ইসলামে স্বামীকে প্রথমে নরমভাবে বোঝানো, তারপর কিছু দিনের জন্য বিছানা আলাদা করে দেওয়া, এবং শেষ পর্যায়ে মৃদু শাসন (যা আঘাত না করে) করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে তালাক দেওয়াকে ইসলামে নিরুপায় অবস্থায় সর্বশেষ উপায় হিসেবে দেখা হয়।
আপনি যদি এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত ইসলামিক আলোচনা বা ওয়াজ শুনতে চান, তবে ইউটিউবে "স্বামীকে কষ্ট দিলে কি হয়" বা "স্বামীর হক আদায় না করলে কি হবে" লিখে সার্চ করতে পারেন।
ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হলো ভালোবাসা, দয়া ও একে অপরের প্রতি দায়িত্বশীলতার। কোনো স্ত্রী যদি অন্যায়ভাবে বা অযৌক্তিক কারণে স্বামীকে কষ্ট দেন, তবে এর বিরুদ্ধে ইসলামে কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
এখানে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হলো:
১. জান্নাতের হুরদের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি
হাদিসে এসেছে, কোনো স্ত্রী যখনই তার স্বামীকে (অন্যায়ভাবে) কষ্ট দেন, তখনই জান্নাতে তার জন্য অপেক্ষারত হুর স্ত্রী (আখিরাতের স্ত্রী) ঐ স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন:
"হে অভাগিনী! তাকে কষ্ট দিও না। আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন! তিনি তো তোমার নিকট সাময়িক মেহমান মাত্র। অচিরেই সে তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবে।" (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ)
এই হাদিসটি ইঙ্গিত দেয় যে স্বামীকে কষ্ট দেওয়া একটি গুরুতর কাজ যা জান্নাতের নেয়ামত থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে।
২. ইবাদত কবুল না হওয়ার সতর্কতা
যে স্ত্রী স্বামীর প্রতি অসন্তুষ্ট থাকেন এবং অযৌক্তিকভাবে তার আনুগত্য করেন না, তার ইবাদতের ক্ষেত্রেও সতর্কতা রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"তিন ব্যক্তির সালাত তাদের কান অতিক্রম করে না... (তাদের মধ্যে একজন হলো) এমন নারী, যে রাত যাপন করে অথচ তার স্বামী তার ওপর রাগান্বিত থাকে।" (তিরমিজি)
"স্বামী তার স্ত্রীকে (শারীরিক সম্পর্কের জন্য) শয্যায় ডাকলে সে যদি স্বামীর আহ্বানে সাড়া না দেয়, আর স্বামী তার প্রতি অসন্তুষ্ট অবস্থায় রাত কাটায়, তবে সকাল পর্যন্ত ফেরেশতারা তাকে লানত (অভিশাপ) দিতে থাকে।" (বুখারি ও মুসলিম)
৩. স্বামীর সন্তুষ্টিতে জান্নাত লাভ
অন্য একটি হাদিসে স্বামীর সন্তুষ্টিকে স্ত্রীর জান্নাত লাভের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে:
"যদি কোনো স্ত্রীলোক এমতাবস্থায় মারা যায় যে, তার স্বামী তার ওপর সন্তুষ্ট ছিল, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।" (তিরমিজি)
৪. স্বামীর করণীয়: ধৈর্য ও উপদেশ
তবে ইসলামে স্বামীকে ধৈর্যশীল হওয়ার এবং স্ত্রীকে সংশোধনের সুযোগ দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। স্ত্রীকে কষ্ট দেওয়া বা তার প্রতি অন্যায় করা স্বামীর জন্যও অত্যন্ত গর্হিত কাজ।
স্বামী প্রথমে স্ত্রীকে নরম ভাষায় উপদেশ দেবেন।
যদি তাতে কাজ না হয়, তবে সাময়িকভাবে শয্যা আলাদা করতে পারেন।
এরপরও যদি স্ত্রী সংশোধন না হন, তবে পরিবার থেকে উভয় পক্ষের সালিশকারী নিয়োগ করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা উচিত।
যদি কোনো স্বামী বা স্ত্রী একে অপরের প্রতি অসদাচরণ করেন, তবে উভয়েরই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং সম্পর্ক সংশোধনের চেষ্টা করা আবশ্যক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন