গর্ভাবস্থায় স্ত্রী সহবাস

 গর্ভাবস্থায় স্ত্রী সহবাস


সাধারণত, জটিলতামুক্ত সুস্থ গর্ভাবস্থায় স্ত্রী সহবাস করা নিরাপদ বলে চিকিৎসকরা মনে করেন। গর্ভের শিশুটি জরায়ুর শক্তিশালী পেশী, অ্যামনিওটিক ফ্লুইড এবং প্লাসেন্টা দ্বারা সুরক্ষিত থাকে, তাই সহবাসের কারণে সরাসরি শিশুর ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি নেই।

তবে, কিছু সতর্কতা অবলম্বন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।


কখন সহবাস করা নিরাপদ নয় (ডাক্তারের পরামর্শ নিন)

নিম্নলিখিত জটিলতাগুলো থাকলে গর্ভাবস্থায় সহবাস থেকে বিরত থাকতে বলা হয়:

  • রক্তপাত বা স্রাব: গর্ভাবস্থায় মাসিকের রাস্তা দিয়ে যদি কোনো প্রকার ভারী রক্তপাত বা অস্বাভাবিক তরল স্রাব হয়।

  • প্লাসেন্টা প্রিভিয়া (Placenta Previa): যদি প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল জরায়ুর নিচের অংশে থাকে এবং জরায়ুমুখ আংশিক বা সম্পূর্ণ ঢেকে রাখে।

  • সার্ভিকাল ইনকম্পিটেন্স (Cervical Incompetence): জরায়ুমুখের দুর্বলতা বা জটিলতা থাকলে।

  • অকাল প্রসবের ইতিহাস: যদি পূর্ববর্তী গর্ভাবস্থায় নির্ধারিত সময়ের আগেই সন্তান প্রসব হয়ে থাকে।

  • অ্যামনিওটিক থলি ফেটে যাওয়া: যদি প্রসবের আগে পানি ভেঙে যায় (Water break)।

  • একাধিক সন্তান ধারণ: যদি যমজ বা তার বেশি সন্তান ধারণ করে থাকেন।


সহবাসের সময় অনুসরণীয় নিয়ম ও সতর্কতা

গর্ভাবস্থার বাড়ার সাথে সাথে কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললে সহবাস নিরাপদ ও আরামদায়ক হতে পারে:

  • ডাক্তারের পরামর্শ: সহবাসের আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন এবং তার অনুমতি নিন।

  • আরামদায়ক অবস্থান: এমন অবস্থান বেছে নিন যা গর্ভবতী স্ত্রীর পেটে চাপ সৃষ্টি না করে এবং তিনি আরামদায়ক বোধ করেন।

    • পাশাপাশি শুয়ে থাকা (Spoon position): পিঠের দিকে মুখ করে পাশাপাশি শুয়ে সহবাস করা নিরাপদ।

    • নারী উপরে: এই অবস্থানে নারী তার স্বাচ্ছন্দ্য অনুযায়ী গতি ও গভীরতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

  • গভীরতা এড়িয়ে চলুন: পেটে অতিরিক্ত চাপ বা আঘাত হয় এমন যেকোনো অবস্থান বা নড়াচড়া এড়িয়ে চলুন।

  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: সংক্রমণ এড়াতে সহবাসের আগে ও পরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা জরুরি।

  • অস্বস্তি হলে বন্ধ করুন: সহবাসের সময় ব্যথা, খিঁচুনি বা অন্য কোনো অস্বস্তি অনুভব করলে সাথে সাথে তা বন্ধ করুন এবং ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।


গর্ভাবস্থায় সহবাসের উপকারিতা

শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে এর কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে:

  • মানসিক বন্ধন: এটি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আবেগিক ও মানসিক বন্ধন আরও দৃঢ় করে।

  • স্ট্রেস হ্রাস: সহবাস মানসিক চাপ কমাতে এবং মেজাজ ভালো রাখতে সহায়তা করে।

  • উন্নত রক্ত ​​সঞ্চালন: এটি শরীরে রক্ত ​​সঞ্চালন উন্নত করতে সাহায্য করে, যা মা ও শিশু উভয়ের জন্যই সহায়ক হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় সহবাসের বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে আপনি গর্ভাবস্থায় সহবাস করা যাবে? | গর্ভাবস্থায় কখন সহবাস ঝুঁকিপূর্ণ | Dr. Umme Tahmina Shima এই ভিডিওটি দেখতে পারেন।

সাধারণত, জটিলতামুক্ত গর্ভাবস্থায় স্বামী-স্ত্রী সহবাস করা নিরাপদ এবং এতে গর্ভের শিশুর কোনো ক্ষতি হয় না। শিশুটি জরায়ুর শক্তিশালী পেশি, অ্যামনিওটিক থলির তরল এবং জরায়ুমুখের শ্লেষ্মা দ্বারা সুরক্ষিত থাকে।

তবে, এই নাজুক সময়ে কিছু সতর্কতা মেনে চলতে হয় এবং কিছু পরিস্থিতিতে সহবাস করা একেবারেই উচিত নয়।


গর্ভাবস্থায় সহবাসের নিরাপত্তা ও সুবিধা

বিষয়বিবরণ
শিশুর নিরাপত্তাজরায়ু এবং অ্যামনিওটিক ফ্লুইডের কারণে সহবাস শিশুর কোনো ক্ষতি করে না।
সম্পর্কের উন্নতিঘনিষ্ঠতা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মানসিক বন্ধন ও ভালোবাসা সুদৃঢ় করে।
শারীরিক উপকারএটি মানসিক চাপ (Stress) কমাতে সাহায্য করে এবং হবু মায়ের মেজাজ ভালো রাখতে পারে।
প্রসব উদ্দীপনাপ্রসবের নির্ধারিত তারিখ কাছাকাছি এলে, অনেক চিকিৎসক প্রসবকে ত্বরান্বিত করতে সহবাসের পরামর্শ দেন, কারণ শুক্রাণুতে থাকা প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন জরায়ুর সংকোচনকে উদ্দীপিত করতে পারে।

কখন সহবাস এড়িয়ে চলতে হবে?

যদি আপনার গর্ভাবস্থায় নিম্নোক্ত জটিলতাগুলো থাকে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সহবাস করা উচিত নয়:

  • প্লাসেন্টা প্রিভিয়া: যদি গর্ভফুল (প্লাসেন্টা) জরায়ুর নীচের অংশে থাকে এবং জরায়ুমুখকে আংশিক বা সম্পূর্ণ ঢেকে রাখে।

  • অকাল প্রসবের ঝুঁকি: যদি আগে নির্ধারিত সময়ের আগে প্রসবের ইতিহাস থাকে বা বর্তমানে অকাল প্রসবের কোনো ঝুঁকি থাকে।

  • অস্বাভাবিক রক্তপাত বা তরল নিঃসরণ: গর্ভাবস্থায় যোনিপথে কোনো ধরনের ভারী রক্তপাত বা অন্য কোনো তরল নিঃসরণ হলে।

  • জরায়ুমুখে দুর্বলতা (Incompetent Cervix): যদি জরায়ুমুখের পেশী দুর্বল হয়।

  • একাধিক সন্তান ধারণ: যদি একই সাথে দুই বা তার বেশি (যেমন যমজ) সন্তান ধারণ করে থাকেন।


সহবাসের নিয়ম ও সতর্কতা

পেটে চাপ না লাগে এবং স্ত্রী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, এমন ভঙ্গি বা পজিশন বেছে নিতে হবে। গর্ভাবস্থার বিভিন্ন ধাপে (ত্রৈমাসিকে) আরামদায়ক অবস্থানের পরিবর্তন হতে পারে।

  • প্রথম ত্রৈমাসিক: সাধারণত নিরাপদ, তবে হরমোনের পরিবর্তন ও বমি বমি ভাবের কারণে স্ত্রীর আগ্রহ কম থাকতে পারে।

  • দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে আরামদায়ক সময়, কারণ প্রথম ত্রৈমাসিকের সমস্যাগুলো কমে যায় এবং পেট খুব বেশি বড় হয় না।

  • তৃতীয় ত্রৈমাসিক: পেটের আকার বড় হওয়ার কারণে সাবধানতা ও আরামদায়ক ভঙ্গির প্রয়োজন হয়।

মনে রাখবেন, স্ত্রীর আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্যকে সব সময় প্রাধান্য দিতে হবে। কোনো ধরনের ব্যথা, রক্তপাত বা অস্বস্তি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে সহবাস বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।

এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আপনি ভিডিওটি দেখতে পারেন: গর্ভাবস্থায় সহবাস করা যাবে? | গর্ভাবস্থায় কখন সহবাস ঝুঁকিপূর্ণ | Dr. Umme Tahmina Shima।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন