স্বামী স্ত্রীর তদবির

 স্বামী স্ত্রীর তদবির


স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের উন্নতি এবং ভালোবাসা বৃদ্ধির জন্য ইসলামে কিছু আমল (তদবির) ও দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই আমলগুলো মূলত আল্লাহর কাছে দোয়া করা, তাঁর গুণবাচক নাম জপ করা এবং সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন যাপন করার মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর হৃদয়ে পারস্পরিক মহব্বত সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে করা হয়।

নিচে কিছু প্রচলিত ইসলামিক আমল বা তদবির তুলে ধরা হলো:

১. আল্লাহর গুণবাচক নামের আমল

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মহব্বত সৃষ্টি করার জন্য আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম হলো:

  • اَلْوَدُوْدُ (আল-ওয়াদুদু)

    • অর্থ: প্রকৃত বন্ধু, যিনি তাঁর অনুগতদের ভালোবাসেন এবং তাদের প্রতি ইহসানকারী।

    • আমল পদ্ধতি: যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য বা দূরত্ব তৈরি হয়, তবে পবিত্র হয়ে 'আল-ওয়াদুদু' শব্দটি ১০০১ বার পাঠ করে কোনো মিষ্টি জাতীয় খাবার বা পানীয়ের ওপর ফুঁ (দম) করে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে তা খেতে পারেন। আল্লাহর ইচ্ছায় এতে উভয়ের মধ্যে আন্তরিকতা ও মিল-মহব্বত সৃষ্টি হয়।

২. কুরআনের আয়াত দ্বারা আমল

ভালোবাসা বৃদ্ধির জন্য পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতের আমল প্রচলিত আছে (তবে এটি কেবল বৈধ সম্পর্কের জন্য প্রযোজ্য):

  • সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৬৫-এর অংশ:

    • আরবি: وَمِنَ النَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ اللَّهِ أَندَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ ۖ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِّلَّهِ

    • উচ্চারণ: 'ওয়া মিনান নাসি মাইয়্যাত্তাখিজু মিন দুনিল্লাহি আন্দাদাঁ ইউহিব্বূনাহুম কাহুব্বিল্লাহ; ওয়াল্লাজিনা আমানু আশাদ্দু হুব্বাল্লিল্লাহ...' (সম্পূর্ণ আয়াত নয়)

    • আমল পদ্ধতি: যদি স্বামীর ভালোবাসা কমে যায় বলে স্ত্রী অনুভব করেন, তবে তিনি পবিত্র হয়ে নির্জনে বসে এই অংশটি ৭ বা ১১ বার পাঠ করে মিষ্টি জাতীয় খাদ্যে ফুঁ দিয়ে স্বামীকে খাওয়াতে পারেন। এটি ৭ বা ১১ দিন পর্যন্ত নিয়মিত করা যেতে পারে। (শর্ত: এটি অবশ্যই কেবল বৈধ স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের উন্নতির জন্য করতে হবে এবং শিরক বা জাদু-টোনা থেকে দূরে থাকতে হবে)।

৩. কুরআনের দোয়া দ্বারা আমল

দাম্পত্য জীবনে শান্তি, ভালোবাসা এবং চক্ষুশীতলকারী সন্তান লাভের জন্য পবিত্র কুরআনের এই দোয়াটি নিয়মিত পাঠ করা অত্যন্ত কার্যকরী:

  • সূরা আল-ফুরকান, আয়াত ৭৪:

    • আরবি: رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا

    • উচ্চারণ: 'রাব্বানা- হাব লানা- মিন আয্ওয়া-জিনা- ওয়া যুর্রিইয়্যা-তিনা- ক্বুর্রাতা আ’য়ুন, ওয়া জা’আল্না- লিল মুত্তাক্বীনা ইমা-মা-।'

    • অর্থ: 'হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের জন্য আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্য থেকে চোখের শীতলতা দান করুন এবং আমাদেরকে মুত্তাকিদের জন্য ইমাম (পথপ্রদর্শক) বানিয়ে দিন।'

৪. সম্পর্ক উন্নয়নে সুন্নাহভিত্তিক পরামর্শ (আমল হিসেবে গণ্য)

তদবিরের পাশাপাশি, দাম্পত্য জীবনে সুন্নাহভিত্তিক আচার-আচরণও মহব্বত বাড়াতে সহায়ক:

  • ভালো ব্যবহার ও মিষ্টি কথা: স্ত্রীর সাথে উত্তম ব্যবহার করা, হাসিমুখে কথা বলা এবং তার পছন্দের দিকে খেয়াল রাখা। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম।"

  • পরস্পরের দোষ গোপন রাখা: স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পোশাক স্বরূপ, তাই উভয়ের উচিত পরস্পরের দোষ ও ঘরের কথা গোপন রাখা।

  • ইস্তেগফার ও তাহাজ্জুদ: নিয়মিত ইস্তেগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) করা এবং গভীর রাতে তাহাজ্জুদের নামাজে আল্লাহর কাছে সম্পর্ক ভালো করার জন্য কান্নাকাটি করে দোয়া করা।

  • স্ত্রীর প্রতি যত্ন: স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করা, তার অনুভূতিকে গুরুত্ব দেওয়া এবং তাকে উৎফুল্ল রাখতে সুগন্ধি ব্যবহার করা।

  • একসঙ্গে আহার: সম্ভব হলে একই পাত্র বা থালায় খাওয়ার অভ্যাস করা।

গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা: ইসলামে যে কোনো আমল বা তদবির করার সময় শিরক বা জাদু-টোনাকে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলতে হবে। আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর ওপর ভরসা করে বিশুদ্ধ নিয়তে আমল করাই উত্তম পন্থা।

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের উন্নতি এবং ভালোবাসা বৃদ্ধির জন্য ইসলামে বিভিন্ন ধরনের আমল (তদবির)দোয়ার কথা বলা হয়েছে। এগুলো মূলত আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে সাহায্য চাওয়ার উপায়।

এখানে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মিল-মহব্বত সৃষ্টি ও ভালোবাসা বৃদ্ধির জন্য কিছু আমল ও দোয়া উল্লেখ করা হলো:

১. কোরআনের বিশেষ আমল

স্বামী বা স্ত্রী যার ভালোবাসা বা মনোযোগ কম মনে হয়, তিনি এই আমলটি করতে পারেন:

  • পবিত্রতা অর্জন: প্রথমে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করুন এবং সম্ভব হলে দু'রাকাত নফল নামাজ পড়ুন।

  • দরুদ শরীফ: কয়েকবার দরুদ শরীফ পড়ুন।

  • পবিত্র কোরআনের আয়াত পাঠ: সূরা বাকারার ১৬৫ নম্বর আয়াতটি ৭ বার পড়ুন।

    • আয়াত (বাংলা উচ্চারণ):

      "ওয়া মিনান নাসি মাইয়্যাত্তাখিযু মিন দুনিল্লাহি আন্দাদাঁ ইউহিব্বূনাহুম কাহুব্বিল্লাহ; ওয়াল্লাজিনা আমানু আশাদ্দু হুব্বাল্লিল্লাহি ওয়ালাও ইয়ারাল্লাজিনা জালামু ইজ ইয়ারাওনাল আজাবা আন্নাল কুওওয়াতা লিল্লাহি জামীআওঁ ওয়াআন্নাল্লাহা শাদীদুল আজাব।"

    • আমলের পদ্ধতি: আয়াতটি পাঠ করার পর কোনো মিষ্টি জাতীয় খাবার (যেমন চিনি, মিষ্টি, বা শরবত) -এর ওপর ফুঁ (দম) দিন। এরপর সেই খাবারটি আপনার স্বামীকে/স্ত্রীকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করুন। এই আমলটি ৭ বা ১১ দিন নিয়মিত আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রেখে চালিয়ে যেতে পারেন।

    • (দ্রষ্টব্য: এই আমলটি শুধুমাত্র বৈধ স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের উন্নতির জন্য কার্যকর, অবৈধ সম্পর্কের ক্ষেত্রে নয়।)

২. আল্লাহর গুণবাচক নামের আমল

আল্লাহ তাআলার একটি গুণবাচক নাম হলো اَلْوَدُوْدُ (আল-ওয়াদুদু), যার অর্থ হলো 'প্রকৃত বন্ধু' বা 'প্রেমময়'

  • আমলের পদ্ধতি:

    • যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হয়, তবে (اَلْوَدُوْدُ) 'আল-ওয়াদুদু' নামটি ১০০১ (এক হাজার এক) বার পাঠ করে কোনো খাবার-দ্রব্যের মাঝে ফুঁ দিয়ে উভয়কে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করলে, আল্লাহর রহমতে তাদের মধ্যে মিল-মহব্বত ও আন্তরিকতা সৃষ্টি হয়।

৩. পরিবারে শান্তির জন্য দোয়া (কুরআনী দোয়া)

এই দোয়াটি পরিবারের মধ্যে ভালোবাসা ও সম্প্রীতির জন্য আল্লাহর কাছে একটি গভীর আবেদন।

  • দোয়া (কুরআনের সূরা আল-ফুরকানের ৭৪ নম্বর আয়াত):

    رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا

  • বাংলা উচ্চারণ:

    "রব্বানা হাব লানা মিন্ আযওয়াজিনা ওয়া যুররিয়্যাতিনা কুররাতা আ'য়ুনিন্ ওয়াজআ'লনা লিল্ মুত্তাক্বীনা ইমামা।"

  • অর্থ:

    "হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের পক্ষ হতে দান কর নয়নপ্রীতি (গভীর প্রশান্তি) এবং আমাদেরকে মুত্তাকিদের (পরহেজগারদের) জন্য এক আদর্শ নেতা বানাও।"

  • আমলের পদ্ধতি: এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়ুন। বিশেষত ফরজ নামাজের পর বা তাহাজ্জুদের সময় আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে এই দোয়া করা দাম্পত্য জীবনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হতে পারে।

সাধারণ প্রচেষ্টা ও সতর্কতা

  • নিজের ভুল সংশোধন: প্রথমে নিজের ভুলত্রুটি খুঁজে দেখা এবং তা সংশোধনের চেষ্টা করা।

  • পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ: ছোটখাটো বিষয়ে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা তৈরি করা এবং ঘরের কথা বাইরে প্রকাশ না করা।

  • ভালো ব্যবহার: হাসি মুখে কথা বলা, স্বামীর পছন্দের পোশাক পরা ও সুগন্ধি ব্যবহার করা।

  • ইবাদত বৃদ্ধি: নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজে কান্নাকাটি করা এবং বেশি বেশি ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করা।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন