স্ত্রী ডিভোর্স দিলে দেনমোহরের টাকা পাবে
বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে দেনমোহর (Mahr) পরিশোধের বিষয়টি নির্ভর করে কে ডিভোর্স দিচ্ছেন এবং কী প্রক্রিয়ায় ডিভোর্স হচ্ছে তার ওপর।
বাংলাদেশে প্রচলিত মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী, সাধারণত স্ত্রী ডিভোর্স দিলেও (যদি তা আইনি পদ্ধতির মাধ্যমে হয়) তিনি দেনমোহরের সম্পূর্ণ অর্থ পাওয়ার অধিকারিণী হন, তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আছে।
দেনমোহর পাওয়ার নিয়মাবলী
দেনমোহর হলো বিয়ের সময় স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে দেওয়া একটি বাধ্যতামূলক আর্থিক নিরাপত্তা।
১. স্বামী ডিভোর্স দিলে (তালাক)
স্বামী যদি স্ত্রীকে ডিভোর্স দেন (তালাক প্রদান করেন), তবে স্ত্রী অবশ্যই দেনমোহরের সম্পূর্ণ টাকা (বাকি থাকলে) পাওয়ার অধিকারী হবেন। এই ক্ষেত্রে কোনো বিতর্ক নেই।
২. স্ত্রী ডিভোর্স দিলে (তালাক-ই-তৌফিজ বা আদালতের মাধ্যমে)
যদি স্ত্রী আইনসম্মত উপায়ে ডিভোর্স দেন, তবে তিনি সাধারণত দেনমোহরের টাকা পান:
তালাক-ই-তৌফিজ (অর্পিত তালাক): কাবিননামার শর্তানুযায়ী স্ত্রী যদি তালাকের ক্ষমতা প্রয়োগ করে স্বামীকে ডিভোর্স দেন, তবে স্ত্রী দেনমোহরের সম্পূর্ণ টাকা পাবেন। এটি স্ত্রীর আইনি অধিকার।
আদালতের মাধ্যমে ডিভোর্স (ফাসখ): স্ত্রী যদি আদালতের মাধ্যমে স্বামীর নিষ্ঠুরতা, ভরণপোষণ না দেওয়া বা অন্যান্য বৈধ কারণ দেখিয়ে ডিভোর্স পান, তবে স্ত্রী দেনমোহরের সম্পূর্ণ টাকা পাওয়ার অধিকারী হবেন।
৩. খোলা তালাক দিলে (Khula)
খোলা তালাক হলো যখন স্ত্রী স্বামীর কাছে ডিভোর্সের প্রস্তাব করেন এবং স্বামী তাতে রাজি হন, সাধারণত কোনো ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে।
ক্ষতিপূরণ দেওয়া বাধ্যতামূলক: খোলা তালাকের ক্ষেত্রে স্ত্রী তার স্বামীকে দেনমোহরের কিছু অংশ বা সম্পূর্ণ দেনমোহর ফেরত দেওয়ার বিনিময়ে বিচ্ছেদ চাইতে পারেন।
সিদ্ধান্তের ভিত্তি: এই ক্ষেত্রে স্ত্রী দেনমোহর পাবেন কি না, তা নির্ভর করে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক আলোচনা এবং চুক্তির ওপর। যদি দেনমোহর ফেরত দেওয়ার শর্তে ডিভোর্স হয়, তবে স্ত্রী তা আর দাবি করতে পারবেন না।
৪. মুবারাত (পারস্পরিক সম্মতিতে বিচ্ছেদ)
যদি স্বামী-স্ত্রী পারস্পরিক সমঝোতা এবং সম্মতির ভিত্তিতে (মুবারাত) বিবাহবিচ্ছেদ করেন, তবে এই ক্ষেত্রে দেনমোহরের বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়। এই চুক্তির ওপরই দেনমোহরের অর্থ প্রদান বা মওকুফ হওয়া নির্ভর করে।
সংক্ষিপ্ত সারমর্ম
| ডিভোর্সের ধরন | কে শুরু করছেন | দেনমোহর পাওয়ার অধিকার |
| তালাক (Talak) | স্বামী | সম্পূর্ণ প্রাপ্য (বাকি থাকলে) |
| তালাক-ই-তৌফিজ | স্ত্রী | সম্পূর্ণ প্রাপ্য |
| আদালতের মাধ্যমে | স্ত্রী | সম্পূর্ণ প্রাপ্য (কারণ প্রমাণ সাপেক্ষে) |
| খোলা তালাক (Khula) | স্ত্রী (প্রস্তাবক) | সাধারণত দেনমোহর বা এর অংশবিশেষ ত্যাগ করতে হয় |
পরামর্শ: আপনার পরিস্থিতি যেহেতু ডিভোর্সের, তাই দেনমোহরের প্রাপ্যতার বিষয়ে আইনি জটিলতা এড়াতে আপনার কাবিননামা নিয়ে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ।
হ্যাঁ, স্ত্রী ডিভোর্স দিলে তিনি অবশ্যই দেনমোহরের (Mahr) টাকা পাবেন, তবে কোন পদ্ধতিতে ডিভোর্স হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে এর পরিমাণের ভিন্নতা আসতে পারে।
বাংলাদেশে মুসলিম পারিবারিক আইন এবং শরিয়া আইন অনুযায়ী দেনমোহরের বিধান নিচে দেওয়া হলো:
১. তালাক-ই-তৌফিজ (অর্পিত তালাক) বা স্বামী কর্তৃক তালাক দিলে
যদি স্ত্রী তাঁর অর্পিত ক্ষমতার বলে (কাবিননামার ১৮ নং কলাম) ডিভোর্স দেন অথবা স্বামী সরাসরি স্ত্রীকে তালাক দেন, তবে স্ত্রী সম্পূর্ণ দেনমোহরের টাকা পাবেন।
দেনমোহর পাওয়ার বিধান: এই ক্ষেত্রে স্ত্রীকে দেনমোহর থেকে কোনো অংশই ছাড় দিতে হয় না। দেনমোহরের যে অংশ পরিশোধ করা হয়নি, তা ডিভোর্স কার্যকর হওয়ার সাথে সাথেই স্বামীর জন্য পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক হয়ে যায়।
২. খোলা তালাক (Khula) বা পারস্পরিক সম্মতিতে বিচ্ছেদ হলে
খোলা তালাক হলো এমন পদ্ধতি, যেখানে স্ত্রী স্বামীর কাছে বিচ্ছেদের প্রস্তাব করেন এবং স্বামী তাতে রাজি হন।
দেনমোহর পাওয়ার বিধান: খোলা তালাকের ক্ষেত্রে সাধারণত স্ত্রী নিজেই স্বামীকে দেনমোহরের সম্পূর্ণ বা আংশিক অংশ ফিরিয়ে দেওয়ার বা না নেওয়ার প্রস্তাব দেন। এটি মূলত দেনমোহরের বিনিময়ে স্বামীকে রাজি করিয়ে বিচ্ছেদ নেওয়া।
চুক্তি অনুযায়ী: এক্ষেত্রে দেনমোহরের বিষয়টি স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক চুক্তির ওপর নির্ভর করে। চুক্তিতে যা নির্ধারিত হবে, স্ত্রী সেটাই পাবেন বা ছাড় দেবেন।
৩. আদালতের মাধ্যমে ডিভোর্স (ফাসখ) হলে
যদি স্ত্রী সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে পারিবারিক আদালতে মামলা করে ডিভোর্স পান (যেমন: স্বামীর নিষ্ঠুরতা বা ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থতা), তবে:
দেনমোহর পাওয়ার বিধান: দেনমোহর পাওয়ার ক্ষেত্রে স্ত্রীর অধিকার এখানে পূর্ণ থাকে। আদালত ডিভোর্সের পক্ষে রায় দিলে স্ত্রী সম্পূর্ণ দেনমোহর পাওয়ার অধিকারী হন।
দেনমোহরের টাকা কখন পাওনা হয়?
দেনমোহর দুই প্রকার:
তাৎক্ষণিক (Prompt) দেনমোহর: বিবাহের পর চাহিবামাত্র স্ত্রীকে যা পরিশোধ করতে হয়।
বিলম্বে পরিশোধযোগ্য (Deferred) দেনমোহর: ডিভোর্স বা স্বামীর মৃত্যুর পর যা পরিশোধ করতে হয়।
ডিভোর্স যেই দিক থেকেই হোক না কেন, বিলম্বে পরিশোধযোগ্য দেনমোহরের অংশটি তালাক কার্যকর হওয়ার দিনেই স্ত্রীর জন্য পাওনা হয়ে যায়। যদি দেনমোহরের কোনো অংশ পরিশোধ না করা হয়ে থাকে, তবে স্ত্রী তার সম্পূর্ণ পাওনা দেনমোহর আদায়ের জন্য পারিবারিক আদালতে মামলা করার অধিকার রাখেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন