ডিভোর্স লেটার পাঠানোর নিয়ম
বাংলাদেশে বিবাহবিচ্ছেদ বা ডিভোর্স লেটার (তালাকের নোটিশ) পাঠানোর নিয়ম ধর্ম ও আইন অনুযায়ী নির্ধারিত। মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ (Muslim Family Laws Ordinance, 1961) অনুযায়ী এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক।
ডিভোর্স লেটার বা নোটিশ পাঠানোর প্রধান নিয়মগুলো নিচে ধাপে ধাপে উল্লেখ করা হলো:
১. তালাকের নোটিশ তৈরি
আইন অনুযায়ী, তালাকের নোটিশে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো উল্লেখ করতে হবে:
নোটিশদাতার নাম ও ঠিকানা: যিনি তালাক দিচ্ছেন (স্বামী বা স্ত্রী)।
নোটিশগ্রহীতার নাম ও ঠিকানা: যাকে তালাক দেওয়া হচ্ছে (স্বামী বা স্ত্রী)।
বিবাহের তারিখ: তালাক দেওয়া দম্পতির বিবাহের তারিখ।
তালাকের ঘোষণা: স্পষ্টভাবে তালাক কার্যকর করার ইচ্ছা ঘোষণা করতে হবে।
তালাকের কারণ (ঐচ্ছিক): তালাকের কারণ উল্লেখ করা যেতে পারে, তবে আইনে তা বাধ্যতামূলক নয়।
স্বাক্ষর ও তারিখ: নোটিশদাতার স্বাক্ষর এবং যে তারিখে নোটিশটি তৈরি করা হচ্ছে সেই তারিখ।
২. নোটিশ দাখিল ও প্রেরণ
তালাক প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য যিনি তালাক দিচ্ছেন (নোটিশদাতা) তাকে তিনটি জায়গায় এই নোটিশ পাঠাতে হবে:
ক. চেয়ারম্যান/মেয়রের নিকট দাখিল
নোটিশের একটি কপি অবশ্যই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (গ্রামীণ এলাকার জন্য) বা সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভার মেয়র (শহরাঞ্চলের জন্য) অথবা তাদের কর্তৃক মনোনীত সালিসি পরিষদের কাছে (Arbitration Council) নিবন্ধিত ডাকযোগে (Registered Post) প্রেরণ করতে হবে।
নোটিশের সঙ্গে বিবাহ নিবন্ধনের ফটোকপি (কাবিননামা) এবং অন্য কোনো প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র জমা দিতে হতে পারে।
খ. অন্য পক্ষকে প্রেরণ
নোটিশের দ্বিতীয় কপিটি অবশ্যই অন্য পক্ষের ঠিকানায় (স্বামী বা স্ত্রীর ঠিকানায়) নিবন্ধিত ডাকযোগে (Registered Post) পাঠাতে হবে। এটি নিশ্চিত করে যে যাকে তালাক দেওয়া হচ্ছে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পেরেছেন।
গ. নিজের কাছে সংরক্ষণ
নোটিশের তৃতীয় কপিটি প্রমাণস্বরূপ নিজের কাছে সংরক্ষণ করতে হবে।
৩. তালাক কার্যকর হওয়ার সময়সীমা (ইদ্দতকাল)
মুসলিম পারিবারিক আইন, ১৯৬১ অনুযায়ী তালাক নোটিশ পাঠানোর পর সেটি তৎক্ষণাৎ কার্যকর হয় না।
চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছে নোটিশ পৌঁছানোর তারিখ থেকে ৯০ দিন (ইদ্দতকাল) সময়কাল গণনা শুরু হয়।
এই ৯০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান বা মেয়র সালিসি পরিষদ গঠন করে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আপস বা সমঝোতার চেষ্টা করবেন।
যদি এই ৯০ দিনের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী আপস না করেন এবং নোটিশটি প্রত্যাহার না করা হয়, তবে ৯০ দিন পার হওয়ার পর তালাকটি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর বলে গণ্য হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
স্ত্রী যদি গর্ভবতী হন, তবে সন্তানের জন্ম না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না।
স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক-ই-তাফويض (স্ত্রী কর্তৃক তালাক দেওয়ার ক্ষমতা) দিয়ে থাকেন, তবে স্ত্রী একইভাবে নোটিশের মাধ্যমে তালাক কার্যকর করতে পারেন।
গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
ডিভোর্স অত্যন্ত সংবেদনশীল আইনি প্রক্রিয়া। ভুল প্রক্রিয়ার কারণে তালাক কার্যকর না-ও হতে পারে।
তাই, ডিভোর্স লেটার তৈরি ও পাঠানোর ক্ষেত্রে একজন দক্ষ আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।
আপনার পরিস্থিতি অনুযায়ী আইনি পরামর্শের প্রয়োজন আছে কি?
বাংলাদেশে মুসলিম পারিবারিক আইন ও সংশ্লিষ্ট বিধি অনুযায়ী ডিভোর্স লেটার (তালাকের নোটিশ) পাঠানোর নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে, যা বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণ করতে হয়। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হলে তালাক আইনগতভাবে কার্যকর হয় না।
মুসলিম স্বামী বা স্ত্রী যেই তালাক দিক না কেন, তাকে নিচের ধাপগুলি অনুসরণ করতে হবে:
ডিভোর্স লেটার পাঠানোর নিয়মাবলী
ধাপ ১: তালাকের নোটিশ তৈরি
প্রথমে তালাক বা ডিভোর্সের কারণ উল্লেখ করে একটি তালাকের নোটিশ (নোটিশ অব ডিভোর্স) তৈরি করতে হবে। সাধারণত, একজন আইনজীবীর মাধ্যমে এই নোটিশ তৈরি করানো আইনগতভাবে সবচেয়ে নিরাপদ।
ধাপ ২: নোটিশ প্রেরণ ও বিতরণ
নোটিশটি একযোগে মোট তিনটি ঠিকানায় রেজিস্টার্ড ডাকে এডি (A/D) সহকারে (প্রাপ্তিস্বীকার রসিদ সহ) পাঠাতে হবে:
১. সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে:
* স্বামী বা স্ত্রী যেই তালাক দিক না কেন, তাদের বসবাসের বর্তমান স্থায়ী ঠিকানার অন্তর্ভুক্ত সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদের মেয়র/চেয়ারম্যান-কে নোটিশের একটি কপি পাঠাতে হবে।
* গুরুত্বপূর্ণ: ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর (যিনি মেয়রের পক্ষে তালাকের নোটিশ গ্রহণ ও সালিশি বোর্ড পরিচালনা করেন) বরাবর নোটিশ পাঠাতে হবে।
২. বিপরীত পক্ষকে (স্বামী/স্ত্রী):
* তালাকদাতা পক্ষ অপর পক্ষকে (স্বামী বা স্ত্রী) নোটিশের একটি কপি পাঠাবেন।
ধাপ ৩: সালিশি পরিষদ (Arbitration Council) গঠন ও প্রক্রিয়া
নোটিশ পাঠানোর পর আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়:
নোটিশ প্রাপ্তি: নোটিশ পাওয়ার তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট মেয়র বা চেয়ারম্যান একটি সালিশি পরিষদ (Arbitration Council) গঠন করবেন।
সালিশি বোর্ডের কাজ: এই সালিশি পরিষদ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আপস বা সমঝোতা ঘটানোর চেষ্টা করবে। উভয় পক্ষকে নোটিশ দিয়ে নির্দিষ্ট তারিখে সালিশি বোর্ডে উপস্থিত হওয়ার জন্য ডাকা হবে।
ধাপ ৪: তালাক কার্যকর হওয়া
নোটিশ পাঠানোর পর ৯০ দিন অপেক্ষা করতে হবে।
যদি নোটিশ পাঠানোর ৯০ দিনের মধ্যে আপস না হয় এবং তালাক প্রত্যাহার করা না হয়, তাহলে ৯০ দিন পূর্তির দিন তালাকটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হয়ে যাবে।
যদি স্ত্রী গর্ভবতী থাকেন, তাহলে সন্তানের জন্ম না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না।
তালাকের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে:
তালাক প্রত্যাহার: তালাকের নোটিশ দেওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে যেকোনো পক্ষ তালাক প্রত্যাহার করে নিতে পারে।
ধর্ম: এই নিয়ম মুসলিম স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে ডিভোর্সের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন (যেমন: আদালতের মাধ্যমে)।
আইনগত সহায়তা: যেহেতু ডিভোর্স একটি সংবেদনশীল আইনি প্রক্রিয়া, তাই একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে নোটিশ তৈরি ও প্রেরণ করানো এবং সালিশি বোর্ডের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
আপনার যদি তালাকের আইনি প্রক্রিয়া বা অন্য কোনো বিষয় সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার থাকে, তবে জিজ্ঞেস করতে পারেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন