স্ত্রী মারা গেলে সম্পত্তির ওয়ারিশ হবে
যদি কোনো মুসলিম স্ত্রী মারা যান, তবে তার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে স্বামী উত্তরাধিকারী বা ওয়ারিশ হবেন। মুসলিম উত্তরাধিকার আইন (ফারায়েজ) অনুযায়ী স্বামীর অংশ নির্দিষ্ট করা আছে।
স্ত্রীর সম্পত্তিতে স্বামী দুটি অবস্থায় অংশ পান। এই অংশ নির্ভর করে তাদের সন্তান-সন্ততি আছে কি না তার ওপর।
স্ত্রীর সম্পত্তিতে স্বামীর অংশ (মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী)
মৃত স্ত্রীর উত্তরাধিকারীদের মধ্যে অন্যান্য ওয়ারিশ (যেমন—পিতা-মাতা, সন্তান, ভাই-বোন) থাকলেও স্বামী নির্ধারিত অংশ পাবেন।
| পরিস্থিতি | স্বামী কত অংশ পাবেন? |
| ১. সন্তান বা পুত্রের সন্তান (নাতি) থাকলে | মোট সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ (১/৪ অংশ) |
| ২. কোনো সন্তান বা পুত্রের সন্তান (নাতি) না থাকলে | মোট সম্পত্তির অর্ধেক (১/২ অংশ) |
উদাহরণ
সন্তান আছে: স্ত্রী মারা গেলেন। তাঁর স্বামী এবং একটি ছেলে জীবিত।
স্বামী পাবেন = মোট সম্পত্তির ৪১ অংশ।
বাকি সম্পত্তি অন্যান্য ওয়ারিশদের মধ্যে ভাগ হবে (এক্ষেত্রে ছেলে অবশিষ্ট সম্পত্তি পাবে)।
সন্তান নেই: স্ত্রী মারা গেলেন। তাঁর স্বামী এবং তাঁর পিতা-মাতা জীবিত।
স্বামী পাবেন = মোট সম্পত্তির ২১ অংশ।
বাকি সম্পত্তি অন্যান্য ওয়ারিশদের মধ্যে ভাগ হবে (এক্ষেত্রে স্ত্রীর পিতা-মাতা অবশিষ্ট সম্পত্তি পাবেন)।
মনে রাখবেন:
অন্যান্য ওয়ারিশ: স্বামীর অংশ নির্ধারিত হওয়ার পর, অবশিষ্ট সম্পত্তি স্ত্রীর অন্যান্য ওয়ারিশদের মধ্যে (যেমন—মা, বাবা, ছেলে, মেয়ে, ভাই, বোন ইত্যাদি) তাদের নির্ধারিত হার অনুযায়ী ভাগ হবে।
দেনমোহর ও ঋণ: স্ত্রীর মৃত্যুর পর তাঁর রেখে যাওয়া সম্পত্তি বণ্টনের আগে তাঁর যেকোনো ঋণ (যদি থাকে) এবং তাঁর অনাদায়ী দেনমোহর (যদি স্বামীর কাছে পাওনা থাকে) পরিশোধ করতে হবে। এই ঋণ পরিশোধের পর অবশিষ্ট সম্পত্তির ওপর ওয়ারিশদের অধিকার জন্মাবে।
আইনি প্রক্রিয়া: সম্পত্তির সঠিক হিসাব এবং বন্টনের জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশন থেকে ওয়ারিশান সনদ সংগ্রহ করা এবং একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
স্ত্রী মারা গেলে তার সম্পত্তির ওয়ারিশ (উত্তরাধিকার) কারা হবেন, তা নির্ভর করে ইসলামি শরিয়া আইন এবং বাংলাদেশের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১-এর বিধান অনুযায়ী। এই আইনে মৃত ব্যক্তির নিকটতম জীবিত আত্মীয়দের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ করে দেওয়া হয়।
স্ত্রী মারা গেলে তার সম্পত্তির প্রধান ওয়ারিশ হবেন তার স্বামী এবং তার সন্তানরা (যদি থাকে)।
স্ত্রী মারা গেলে স্বামী যেটুকু সম্পত্তি পাবেন
স্বামী মৃত স্ত্রীর সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ পাবেন, যা নির্ভর করে তাদের সন্তান আছে কি নেই তার ওপর।
| পরিস্থিতি | স্বামী যে অংশ পাবেন |
| সন্তান থাকলে | (এক-চতুর্থাংশ) অংশ। (পুত্র, কন্যা বা পুত্রের পুত্র-কন্যা যারাই থাকুক না কেন) |
| সন্তান না থাকলে | (অর্ধেক) অংশ। |
অন্যান্য ওয়ারিশদের অংশ
স্বামীর অংশ দেওয়ার পর বাকি সম্পত্তি মৃত স্ত্রীর অন্যান্য ওয়ারিশদের মধ্যে ভাগ হবে। এই ক্ষেত্রে ওয়ারিশদের প্রধান ক্রমানুসারে অংশ নির্ধারণ করা হয়:
১. পুত্র-কন্যা (সন্তান)
স্বামী তার অংশ (এক-চতুর্থাংশ) নেওয়ার পর বাকি সম্পত্তি পুত্র-কন্যারা পাবেন।
এক্ষেত্রে পিতা-মাতার অংশ (যদি তারা জীবিত থাকেন) আগে বের করে দিতে হবে।
পুত্র ও কন্যার মধ্যে বন্টনের অনুপাত হবে ২:১ (অর্থাৎ, এক পুত্র দুই কন্যার সমান অংশ পাবেন)।
২. পিতা-মাতা
যদি মৃত স্ত্রীর পিতা-মাতা জীবিত থাকেন:
সন্তান থাকলে: পিতা-মাতা প্রত্যেকে (এক-ষষ্ঠাংশ) করে পাবেন।
সন্তান না থাকলে: পিতা-মাতা বাকি সম্পত্তি পাবেন। এই ক্ষেত্রে স্বামী অর্ধেক অংশ নেওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি পিতা-মাতার মধ্যে ভাগ হবে।
৩. অন্যান্য ওয়ারিশ (ভাই-বোন ইত্যাদি)
যদি মৃত স্ত্রীর সন্তান বা পিতা-মাতা কেউ জীবিত না থাকেন, তবেই কেবল ভাই-বোন বা অন্যান্য নিকটাত্মীয়রা সম্পত্তি পাবেন।
উদাহরণ
ধরুন, একজন স্ত্রী মারা গেলেন এবং তার জীবিত আত্মীয়দের মধ্যে আছেন: স্বামী, ১ ছেলে, ১ মেয়ে, এবং মা।
স্বামী: সন্তান থাকার কারণে স্বামী পাবেন মোট সম্পত্তির অংশ।
মা: সন্তান থাকার কারণে মা পাবেন মোট সম্পত্তির অংশ।
অবশিষ্ট সম্পত্তি: অংশ।
ছেলে ও মেয়ে: এই ১২৭ অংশ ছেলে ও মেয়ের মধ্যে ২:১ অনুপাতে ভাগ হবে।
গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ: সম্পত্তির সঠিক বন্টন একটি জটিল আইনি প্রক্রিয়া, যা মৃত ব্যক্তির জীবিত সকল আত্মীয়ের তালিকা ও তাদের সাথে সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে। তাই কোনো সম্পত্তি বন্টনের আগে অবশ্যই একজন মুসলিম উত্তরাধিকার আইন বিশেষজ্ঞ বা আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন