স্ত্রী যদি স্বামীকে বলে আমি তোর মা

 স্ত্রী যদি স্বামীকে বলে আমি তোর মা


যদি কোনো স্ত্রী রাগের মাথায় বা অন্য কোনো পরিস্থিতিতে স্বামীকে "আমি তোর মা" বলে ফেলে, তবে ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে এই বিষয়টি সরাসরি জিহার-এর (Zihar) বিধানের সাথে সম্পর্কিত।

জিহার হলো এমন একটি কাজ, যেখানে স্বামী তার স্ত্রীকে তার শরীয়ত-সম্মত নিষিদ্ধ কোনো নিকটাত্মীয়ার (যেমন মা বা বোন) সাথে তুলনা করে।

জিহার সংক্রান্ত বিধানটি নিচে ইসলামী শরীয়তের আলোকে ব্যাখ্যা করা হলো:


জিহারের (Zihar) বিধান

ইসলামী শরীয়তে, স্বামী যদি স্ত্রীকে তার মা বা অন্য কোনো নিষিদ্ধ নিকটাত্মীয়ার সাথে তুলনা করেন, তবে তা জিহার হিসেবে গণ্য হতে পারে এবং এটি একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। পবিত্র কুরআনে সূরা মুজাদালাহর প্রথম কয়েকটি আয়াতে এর বিধান উল্লেখ আছে।

১. স্ত্রীর "আমি তোর মা" বলার ক্ষেত্রে বিধান

সাধারণ ইসলামী ফিকহ এবং অধিকাংশ আলেমের মতে:

  • জিহারের মূল অধিকার স্বামীর: জিহারের বিধানটি মূলত স্বামীর জন্য প্রযোজ্য। অর্থাৎ, স্বামী যদি স্ত্রীকে "তুমি আমার মায়ের মতো" বলেন, তবেই তা জিহার হিসেবে গণ্য হয় এবং এর কঠিন বিধান কার্যকর হয়।

  • স্ত্রীর কথা জিহার নয়: স্ত্রী যদি স্বামীকে "আমি তোর মা" বলে বা "তুমি আমার বাবার মতো" বলে, তবে এটি জিহার হিসেবে গণ্য হয় না। এটি মূলত অশোভন, বেয়াদবিমূলক এবং আবেগপ্রসূত কথা হিসেবে বিবেচিত হবে।

  • বিবাহ বিচ্ছেদ হয় না: এই কথার কারণে তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ কার্যকর হবে না এবং স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ওপরও সরাসরি জিহারের কোনো প্রভাব পড়বে না।

২. করণীয়

যদিও এই কথায় তালাক বা জিহার হয় না, তবুও এটি দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে মারাত্মকভাবে নিন্দনীয়। এমতাবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের জন্য করণীয় হলো:

  • তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা: স্ত্রী তার এই অন্যায় কথার জন্য আল্লাহর কাছে তওবা করবেন এবং স্বামীর কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইবেন।

  • ভবিষ্যতে সতর্কতা: ভবিষ্যতে এমন কোনো কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে যা সম্পর্কের মাধুর্য নষ্ট করে বা ধর্মীয় সীমালঙ্ঘন ঘটায়।

  • সমঝোতা: স্বামী-স্ত্রীর উচিত দ্রুত নিজেদের মধ্যে সৃষ্ট ভুল বোঝাবুঝি ও রাগারাগি মিটিয়ে ফেলা এবং দাম্পত্য জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করা।

পরামর্শ: যেহেতু এটি রাগ বা আবেগের মাথায় বলা কথা, তাই ধর্মীয়ভাবে এটি গুরুতর পাপ হলেও সরাসরি জিহার বা তালাক হয় না। তবে দাম্পত্য জীবনকে ইসলামসম্মত রাখতে এই ধরনের অশ্লীল ও আপত্তিকর ভাষা পরিহার করা অত্যন্ত জরুরি।

যদি কোনো স্ত্রী রাগের মাথায় বা ঝগড়ার সময় স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, "আমি তোর মা", তাহলে ইসলামী শরীয়তে এই উক্তিটিকে একটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয় হিসেবে দেখা হয়, যা জিহার (Zihar) নামে পরিচিত।


জিহার (Zihar) এর বিধান

জিহার হলো যখন স্বামী তাঁর স্ত্রীকে এমন কোনো নারীর সাথে তুলনা করেন, যার সাথে তাঁর বিবাহ সম্পূর্ণরূপে হারাম (যেমন তাঁর মা, বোন বা অন্য কোনো মাহরাম আত্মীয়)।

যদিও জিহারের অধিকাংশ বিধান স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে বলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তবে কিছু ফিকহবিদদের মতে, স্ত্রী যদি স্বামীকে বলেন "তুমি আমার পিতার মতো" বা "তুমি আমার ছেলের মতো", তবে এটিও দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।

স্ত্রী স্বামীকে "আমি তোর মা" বললে কী হয়?

যেহেতু তালাক দেওয়ার মূল ক্ষমতা স্বামীর, তাই স্ত্রী নিজে স্বামীকে "আমি তোর মা" বললেই তা সাধারণত তালাক হিসেবে গণ্য হয় না বা সরাসরি জিহার হিসেবে কার্যকর হয় না। তবে এর প্রভাব দুটি:

১. দাম্পত্য সম্পর্কের ওপর নৈতিক প্রভাব:

  • শরীয়তের দৃষ্টিতে নিন্দনীয়: স্ত্রীকে মায়ের সাথে তুলনা করা (স্বামীর ক্ষেত্রে) বা স্বামীকে পিতার সাথে তুলনা করা (স্ত্রীর ক্ষেত্রে) ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে অন্যায় ও অত্যন্ত নিন্দনীয়। এটি দাম্পত্য সম্পর্কের পবিত্রতা নষ্ট করে এবং সম্পর্ককে এক ধরনের হারাম বা নিষিদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়।

  • বিচ্ছেদের ইঙ্গিত: যদি স্ত্রী এই উক্তিটি তালাকের বা বিচ্ছেদের নিয়তে বলে থাকেন এবং এর ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য চরমে ওঠে, তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

২. আইনি/পারিবারিক সমাধানের পথ:

  • ক্ষমা চাওয়া ও তাওবা: এই ধরনের উক্তি করার জন্য স্ত্রীর উচিত দ্রুত আল্লাহর কাছে তাওবা করা এবং স্বামীর কাছে ক্ষমা চাওয়া

  • আপোস ও মীমাংসা: যদি এই উক্তির কারণে দাম্পত্য সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি হয়, তবে পারিবারিক বা স্থানীয় মুরব্বিদের মাধ্যমে সালিশ বা মীমাংসার ব্যবস্থা করা উচিত।

  • তালাক-ই-তাফويضের প্রশ্ন: যদি স্ত্রীর কাছে তালাক-ই-তাফويضের (তালাক দেওয়ার অর্পিত ক্ষমতা) অধিকার থাকে এবং তিনি এই কথাটি বিচ্ছেদের ইঙ্গিত হিসেবে বলে থাকেন, তবে আইনিভাবে বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। তবে এই একটি মাত্র বাক্য সাধারণত তালাক-ই-তাফويض হিসেবে গণ্য হয় না, যদি না তিনি স্পষ্ট করে তালাকের নোটিশ না দেন।


করণীয়

স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই উচিত:

  1. শান্তিপূর্ণভাবে বসে কথা বলা এবং এই ধরনের উক্তি ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি না করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া।

  2. বিষয়টি নিয়ে গুরুতর সন্দেহ থাকলে, স্থানীয় একজন মুফতি বা বিজ্ঞ আলেমের পরামর্শ নেওয়া, যিনি তাদের পরিস্থিতি বিবেচনা করে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারবেন।

যেকোনো দাম্পত্য সমস্যার সমাধান রাগ বা অভিশাপের মাধ্যমে না খুঁজে, বরং আলোচনার মাধ্যমে এবং ধর্মীয় ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করা উচিত।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন