স্ত্রী যদি স্বামীকে তালাক দেয় তাহলে কি তালাক হবে

 স্ত্রী যদি স্বামীকে তালাক দেয় তাহলে কি তালাক হবে


স্ত্রী যদি স্বামীকে তালাক দেন, তাহলে সেই তালাক কার্যকর হবে কি না, তা নির্ভর করে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইনি ও ধর্মীয় শর্তের ওপর।

সাধারণভাবে ইসলামী শরীয়ত এবং বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুসারে, তালাক দেওয়ার মূল অধিকার স্বামীর। তবে স্ত্রী কয়েকটি বিশেষ উপায়ে স্বামীকে তালাক দিতে পারেন।


১. তালাক-ই-তাফويضের মাধ্যমে তালাক (Delegated Power)

এটি স্ত্রীর তালাক দেওয়ার সবচেয়ে প্রচলিত ও বৈধ উপায়।

  • কীভাবে সম্ভব: বিবাহের সময় কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে যদি স্বামী স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা অর্পণ (তাফويض) করে থাকেন, তবে স্ত্রী সেই ক্ষমতা ব্যবহার করে স্বামীকে তালাক দিতে পারেন।

  • তালাক কি হবে?: হ্যাঁ, তালাক কার্যকর হবে, যদি স্ত্রী আইন অনুযায়ী সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন।

আইনি প্রক্রিয়া (তাফويض কার্যকর করতে)

তালাক-ই-তাফويض কার্যকর করার জন্য স্ত্রীকে অবশ্যই বাংলাদেশের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ অনুযায়ী নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে:

  1. নোটিশ প্রদান: স্ত্রীকে লিখিত নোটিশের মাধ্যমে স্বামী এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভার চেয়ারম্যান/সিটি কর্পোরেশনের মেয়র-কে তালাকের বিষয়টি জানাতে হবে।

  2. সালিশি পরিষদ: নোটিশ পাওয়ার পর চেয়ারম্যান একটি সালিশি পরিষদ গঠন করবেন, যারা ৯০ দিনের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করবেন।

  3. কার্যকর হওয়া: নোটিশ দেওয়ার ৯০ দিন পর তালাকটি চূড়ান্তভাবে কার্যকর হবে (যদি স্ত্রী গর্ভবতী না হন এবং এই সময়ের মধ্যে প্রত্যাহার না করা হয়)।


২. খুলা-এর মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ (Mutual Consent)

খুলা হলো স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সমঝোতা ও চুক্তির ভিত্তিতে বিবাহ বিচ্ছেদ।

  • কীভাবে সম্ভব: স্ত্রী যদি আর সংসার করতে না চান, তবে তিনি খুলার প্রস্তাব দিতে পারেন। স্বামী যদি সেই প্রস্তাবে সম্মতি দেন, তবে খুলা কার্যকর হয়।

  • শর্ত: খুলা-এর বিনিময়ে স্ত্রী সাধারণত তার দেনমোহরের সম্পূর্ণ বা আংশিক অংশ ছেড়ে দেন।


৩. আদালতের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ

যদি স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা দেওয়া না হয় এবং স্বামী খুলা দিতে সম্মত না হন, তবুও স্ত্রী আদালতের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদের ডিক্রি চাইতে পারেন। এটি বিবাহ বিচ্ছেদ আইন, ১৯৩৯ অনুযায়ী সম্ভব।

  • কীভাবে সম্ভব: স্ত্রী তার স্বামীকে তালাকের জন্য আদালতে মামলা করবেন এবং আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট কোনো কারণ (যেমন নিষ্ঠুরতা, ভরণপোষণ না দেওয়া, দীর্ঘদিন ধরে নিরুদ্দেশ থাকা ইত্যাদি) প্রমাণ করতে পারলে আদালত বিবাহ বিচ্ছেদের ডিক্রি জারি করতে পারে।


সংক্ষিপ্ত উত্তর

স্ত্রী মুখে তালাক দিলেই তালাক হবে না। তালাক তখনই হবে, যখন কাবিননামায় স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা দেওয়া থাকবে এবং তিনি আইনি প্রক্রিয়ায় নোটিশ দেবেন, অথবা আদালতের মাধ্যমে ডিক্রি পাবেন, অথবা স্বামী খুলায় সম্মতি দেবেন।

তালাক সংক্রান্ত যেকোনো পদক্ষেপের আগে একজন আইনজীবী এবং আলেমের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আপনার পরিস্থিতি অনুযায়ী সবচেয়ে সঠিক পদক্ষেপ কী হবে, তা জানতে আপনি কি কোনো আইনি বা ধর্মীয় পরামর্শ খুঁজছেন?

আপনার প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্ত্রী যদি স্বামীকে তালাক দেন, তাহলে তালাক কার্যকর হবে কি না, তা নির্ভর করে বিবাহের সময় স্ত্রীকে সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল কি না এবং বাংলাদেশের আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে কি না তার ওপর।

সাধারণত, মুসলিম শরিয়া আইন অনুযায়ী তালাক দেওয়ার প্রধান অধিকার স্বামীর। তবে স্ত্রী কয়েকটি নির্দিষ্ট উপায়ে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন।


১. তালাক কার্যকর হওয়ার মূল ভিত্তি

স্ত্রী নিজে থেকে মুখে 'তালাক' বললেই তা কার্যকর হয় না, যদি না তাঁর কাছে তিনটি বিশেষ পদ্ধতির কোনো একটির অধিকার থাকে:

ক) তালাক-ই-তাফويض (Delegated Right of Divorce)

এটিই স্ত্রীর তালাক দেওয়ার সবচেয়ে কার্যকর আইনি উপায়।

  • শর্ত: বিবাহের সময় কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে স্বামী স্ত্রীকে শর্তহীনভাবে বা শর্তসাপেক্ষে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা অর্পণ (তাফويض) করে থাকলে স্ত্রী সেই অধিকার বলে স্বামীকে তালাক দিতে পারেন।

  • তালাক হবে কি না: হ্যাঁ, এই ক্ষেত্রে তালাক কার্যকর হবে, তবে তাঁকে অবশ্যই আইনগত প্রক্রিয়া মানতে হবে।

খ) খুলা (Khula - Mutual Consent)

'খুলা' হলো স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে বিবাহ বিচ্ছেদ।

  • শর্ত: স্ত্রী বিচ্ছেদ চাইলে স্বামীর কাছে খুলার প্রস্তাব দেন এবং স্বামী তাতে সম্মত হন। সাধারণত এর বিনিময়ে স্ত্রী দেনমোহরের কিছু অংশ স্বামীকে ফেরত দেন বা মাফ করে দেন।

  • তালাক হবে কি না: হ্যাঁ, পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে তালাক কার্যকর হবে।

গ) আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ (Judicial Divorce)

যদি স্ত্রীকে তালাক-ই-তাফويضের ক্ষমতা দেওয়া না হয় এবং স্বামী খুলা দিতে সম্মত না হন, তবে স্ত্রী আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদ মামলা (মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন, ১৯৩৯ অনুযায়ী) দায়ের করতে পারেন।

  • শর্ত: স্ত্রীকে স্বামীর বিরুদ্ধে আইন দ্বারা স্বীকৃত যৌক্তিক কারণ (যেমন: ভরণপোষণ না দেওয়া, নিষ্ঠুর আচরণ, দীর্ঘকাল অনুপস্থিতি ইত্যাদি) প্রমাণ করতে হবে।

  • তালাক হবে কি না: হ্যাঁ, আদালত যদি স্ত্রীর পক্ষে রায় দিয়ে বিচ্ছেদের ডিক্রি জারি করেন, তবে বিবাহ বিচ্ছেদ কার্যকর হবে।


২. বাংলাদেশের আইনগত প্রক্রিয়া (১৯৬১ সালের অধ্যাদেশ)

বাংলাদেশে তালাক-ই-তাফويضের মাধ্যমে স্ত্রী যখন তালাক দেন, তখন তাঁকে অবশ্যই নিম্নলিখিত আইনি ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে, অন্যথায় তালাকটি আইনগতভাবে বৈধ হবে না:

  1. লিখিত নোটিশ: স্ত্রীকে অবশ্যই তার তালাকের বিষয়টি স্বামী এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভার চেয়ারম্যান/সিটি কর্পোরেশনের মেয়র-এর কাছে লিখিত নোটিশের মাধ্যমে জানাতে হবে।

  2. সালিশি পরিষদ: নোটিশ পাওয়ার পর চেয়ারম্যান একটি সালিশি পরিষদ গঠন করবেন, যারা ৯০ দিনের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করবেন।

  3. কার্যকর হওয়া: নোটিশ দেওয়ার ৯০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও যদি সমঝোতা না হয় (এবং স্ত্রী গর্ভবতী না থাকেন), তবে তালাকটি চূড়ান্তভাবে কার্যকর বলে গণ্য হবে।

সংক্ষেপে:

স্ত্রী যদি তালাক-ই-তাফويضের ক্ষমতা ব্যবহার করে আইনগত প্রক্রিয়া (নোটিশ প্রদান ও ৯০ দিন অপেক্ষা) অনুসরণ করেন, তাহলে অবশ্যই তালাক কার্যকর হবে। অন্যথায় শুধু মুখে 'তালাক' বললেই তা কার্যকর হয় না।

তালাক সংক্রান্ত যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে কাবিননামা যাচাই এবং একজন আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন