একতরফা ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম

 একতরফা ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম


আপনি বাংলাদেশে মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী একতরফা ডিভোর্স বা তালাক দিতে চাইলে নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন:

সাধারণত স্বামী বা স্ত্রী—যে কেউ একতরফা তালাক দিতে পারেন, তবে স্ত্রীর ক্ষেত্রে কিছু শর্ত প্রযোজ্য হতে পারে।

১. তালাকের নোটিশ প্রস্তুত ও প্রেরণ:

* যিনি তালাক দিতে চান, তিনি প্রথমে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে একটি তালাকনামা বা তালাকের নোটিশ প্রস্তুত করবেন।

* এই নোটিশের একটি কপি রেজিস্টার্ড ডাকযোগে বা অন্য কোনো বৈধ মাধ্যমে আপনার জীবনসঙ্গী (যাকে তালাক দিচ্ছেন) এবং সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠাতে হবে।

* নোটিশে দুইজন পুরুষ সাক্ষীর স্বাক্ষর থাকা বাধ্যতামূলক।

* স্বামী তালাক দিলে সাধারণত কোনো কারণ দর্শানোর প্রয়োজন হয় না।

* স্ত্রীর ক্ষেত্রে: কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে যদি স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা (তালাক-ই-তৌফিজ) দেওয়া থাকে, তবে স্ত্রীও একই প্রক্রিয়ায় তালাক দিতে পারবেন। এই ক্ষমতা না থাকলে স্ত্রীকে পারিবারিক আদালতে আবেদন করে তালাক দিতে হবে, যেখানে নির্দিষ্ট কারণ (যেমন: স্বামীর নিরুদ্দেশ থাকা, ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থ হওয়া ইত্যাদি) দেখাতে হয়।

২. সালিশি পরিষদ গঠন:

* নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উভয় পক্ষের মধ্যে আপস বা সমঝোতার উদ্দেশ্যে একটি সালিশি পরিষদ গঠন করবেন।

* এই সালিশি পরিষদ ৯০ দিনের মধ্যে দু'পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করবে।

৩. তালাক কার্যকর:

* চেয়ারম্যানের কাছে নোটিশ পৌঁছানোর তারিখ থেকে ঠিক ৯০ দিন অপেক্ষা করতে হবে।

* এই ৯০ দিনের মধ্যে যদি কোনো সমঝোতা না হয় এবং তালাক প্রত্যাহার করা না হয়, তবে ৯০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর তালাকটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আইনগতভাবে কার্যকর হয়ে যাবে।

* যিনি তালাক গ্রহণ করছেন, তিনি নোটিশ গ্রহণ করুন বা না করুন, সই করুন বা না করুন—তালাক কার্যকর হওয়ার ক্ষেত্রে তাতে কোনো প্রভাব ফেলে না, যদি নোটিশটি আইন অনুযায়ী সঠিকভাবে পাঠানো হয়ে থাকে।

৪. তালাক রেজিস্ট্রেশন:

* তালাক কার্যকর হওয়ার পর তালাক প্রদানকারীকে সংশ্লিষ্ট নিকাহ নিবন্ধক (কাজী) বরাবর আবেদন করে তালাকটি রেজিস্ট্রি করতে হবে। কাজী নির্ধারিত ফি নিয়ে তালাক রেজিস্ট্রি করবেন এবং প্রত্যয়িত কপি প্রদান করবেন।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

  • তালাকের নোটিশ দেওয়ার সময় স্বামীর পক্ষ থেকে পুরো দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক।

  • আইনি প্রক্রিয়ায় কোনো ত্রুটি এড়াতে একজন আইনজীবীর সহায়তা নেওয়া উত্তম।

আপনার পরিস্থিতি এবং ধর্মের ওপর নির্ভর করে আইনের প্রক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে। আপনি মুসলিম আইন অনুযায়ী ডিভোর্স জানতে চাওয়ায় উপরোক্ত তথ্যগুলি দেওয়া হলো।

আপনি যেহেতু একতরফা ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন, তাই ধরে নিচ্ছি আপনি বাংলাদেশের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ অনুযায়ী নোটিশ দ্বারা তালাকের (একতরফা বিবাহবিচ্ছেদ হিসেবেও পরিচিত) প্রক্রিয়া জানতে চাইছেন।

এখানে ধাপে ধাপে প্রক্রিয়াটি দেওয়া হলো:

১. তালাক উচ্চারণ (স্বামীর ক্ষেত্রে): স্বামী তাঁর স্ত্রীকে তালাক বা বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা দেবেন।

২. নোটিশ প্রদান: তালাক ঘোষণার পর, যত দ্রুত সম্ভব, স্বামীকে বা স্ত্রীকে (যদি কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা দেওয়া থাকে, অর্থাৎ 'তালাক-ই-তৌফিজ' থাকে) লিখিত নোটিশ প্রস্তুত করতে হবে।

* এই নোটিশের একটি কপি তালাক গ্রহণকারী পক্ষকে দিতে হবে।

* আরেকটি কপি স্থানীয় সিটি কর্পোরেশনের মেয়র/চেয়ারম্যান (বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান)-কে নিবন্ধিত ডাকযোগে (Registered Post) পাঠাতে হবে।

* কাজীর বইতে ২ জন পুরুষ সাক্ষীর স্বাক্ষর নিতে হবে।

৩. সালিশি পরিষদ গঠন: নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান/মেয়র পক্ষদ্বয়ের মধ্যে আপস বা সমঝোতার উদ্দেশ্যে একটি সালিশি পরিষদ (Arbitration Council) গঠন করবেন।

৪. আপসের চেষ্টা: সালিশি পরিষদ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করবে।

৫. তালাক কার্যকর: যদি সালিশি পরিষদের মাধ্যমে কোনো আপস না হয় এবং তালাক প্রত্যাহার করা না হয়, তাহলে নোটিশ প্রদানের তারিখ থেকে ঠিক ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হবে।

* যদি স্ত্রী গর্ভবতী থাকেন, তবে গর্ভাবস্থা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না।

* বিপরীত পক্ষ নোটিশ গ্রহণ করুক বা না করুক, নির্ধারিত ৯০ দিন পর তালাক আইনত কার্যকর হয়ে যায়।

৬. তালাক রেজিস্ট্রি ও সনদ: ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হলে নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) নির্ধারিত ফি নিয়ে তালাক রেজিস্ট্রি করবেন এবং তালাকনামার প্রত্যয়িত কপি প্রদান করবেন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য:

  • স্ত্রীর পক্ষ থেকে তালাক: স্ত্রী তখনই সরাসরি নোটিশ দ্বারা তালাক দিতে পারবেন যখন কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে তাঁকে তালাকের ক্ষমতা (তালাক-ই-তৌফিজ) দেওয়া থাকে। এই ক্ষেত্রেও স্বামীর জন্য প্রযোজ্য একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।

  • তালাক-ই-তৌফিজ না থাকলে: যদি স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা না দেওয়া থাকে, তবে স্ত্রীকে আদালতে পারিবারিক আদালতে আবেদন করে বিবাহবিচ্ছেদের ডিক্রি (Judicial Divorce) নিতে হবে।

  • আইনগত প্রক্রিয়াটি জটিল হতে পারে, তাই যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে একজন আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া ভালো।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন