ডিভোর্স কত প্রকার ও কি কি

 ডিভোর্স কত প্রকার ও কি কি


বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ অনুযায়ী বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাককে প্রধানত দুটি মূল প্রকারে ভাগ করা যায়। তবে ইসলামি শরিয়াহ আইন এবং আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করলে এটি আরও কয়েকটি প্রকারে বিভক্ত হয়।

এখানে ডিভোর্সের প্রধান প্রকারভেদ এবং সংশ্লিষ্ট পদ্ধতিগুলো উল্লেখ করা হলো:

১. নোটিশ দ্বারা তালাক (একতরফা বিবাহবিচ্ছেদ)

এটি সেই পদ্ধতি যেখানে স্বামী বা স্ত্রী (যদি স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা দেওয়া থাকে) অন্য পক্ষের সম্মতি ছাড়াই আইন অনুযায়ী নোটিশ প্রদানের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ করেন।

  • স্বামী কর্তৃক তালাক (তালাক-এ-আহসান/তালাক-এ-হাসান): স্বামী কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই স্ত্রীকে তালাক দিতে পারেন। তবে তালাক কার্যকর করতে হলে অবশ্যই স্থানীয় চেয়ারম্যান/মেয়র এবং স্ত্রীকে লিখিত নোটিশ দিতে হবে এবং ৯০ দিনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এটিই বাংলাদেশে একতরফা তালাক হিসেবে বেশি পরিচিত।

  • স্ত্রী কর্তৃক তালাক (তালাক-ই-তৌফিজ): বিবাহের সময় কাবিননামার ১৮ নং কলামে স্বামীকে যদি স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা অর্পণ করেন, তবে স্ত্রী সেই ক্ষমতার বলে স্বামীকে তালাক দিতে পারেন। এটিও নোটিশের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় এবং প্রক্রিয়া স্বামীর তালাকের মতোই।

২. পারস্পরিক/সম্মতিক্রমে বিবাহবিচ্ছেদ

এই ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের সম্মতিতেই বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। এখানে সাধারণত কোনো নোটিশের প্রয়োজন হয় না, তবে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক।

  • খুলা (Khula): এটি মূলত স্ত্রীর পক্ষ থেকে ডিভোর্সের প্রস্তাব, যেখানে স্ত্রী স্বামীকে তার দেনমোহরের কিছু অংশ বা অন্য কোনো আর্থিক সুবিধা ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে বিবাহবিচ্ছেদ চান। স্বামীর সম্মতি থাকলে এটি কার্যকর হয়।

  • মুবারাত (Mubarat): এটি এমন এক ধরনের বিবাহবিচ্ছেদ যেখানে স্বামী এবং স্ত্রী উভয়েই একে অপরের প্রতি ঘৃণা বা বিতৃষ্ণা পোষণ করেন এবং উভয়েই স্বেচ্ছায় সম্পর্ক ছিন্ন করতে সম্মত হন।

৩. আদালতের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ (জুডিশিয়াল ডিভোর্স)

যদি স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা (তালাক-ই-তৌফিজ) না দেওয়া থাকে, তবে ১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদ আইন (Dissolution of Muslim Marriages Act, 1939) অনুযায়ী স্ত্রী নির্দিষ্ট কিছু যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখিয়ে পারিবারিক আদালতে আবেদন করে বিবাহবিচ্ছেদ চাইতে পারেন।

স্ত্রী যে সকল কারণে আদালতের মাধ্যমে ডিভোর্স চাইতে পারেন (উদাহরণস্বরূপ):

  • স্বামী চার বছর বা তার বেশি সময় ধরে নিরুদ্দেশ থাকলে।

  • স্বামী দুই বছর ধরে স্ত্রীর ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থ হলে।

  • স্বামী সাত বছর বা তার বেশি মেয়াদের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে।

  • স্বামী স্ত্রীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করলে।

  • স্বামী তিন বছর ধরে দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে।

আদালতের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ হলে আদালত ডিক্রি জারি করেন এবং সেই ডিক্রির সত্যায়িত কপি চেয়ারম্যান/মেয়রের কাছে পাঠানো হয়, যার ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হয়।


গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

বাংলাদেশে বর্তমানে মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ অনুযায়ী, স্বামী বা স্ত্রী যে পক্ষই তালাক দিক না কেন, লিখিত নোটিশ এবং ৯০ দিনের মধ্যে সালিশি পরিষদের মাধ্যমে মীমাংসার চেষ্টা করা বাধ্যতামূলক। নোটিশ ছাড়া মুখে তালাক দিলেও আইনিভাবে তা কার্যকর হয় না এবং এটি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাকের প্রকারভেদ বিভিন্ন দিক থেকে বিবেচনা করা যায়। বাংলাদেশে মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইন দ্বারা মুসলিমদের তালাক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয়।

আইনের কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে প্রধানত দুই প্রকারের তালাক দেখা যায়:

১. নোটিশ দ্বারা তালাক (একতরফা বিবাহবিচ্ছেদ)

এটি এমন এক প্রক্রিয়া যেখানে স্বামী বা স্ত্রী, অপর পক্ষের সম্মতি ছাড়াই, আইনগতভাবে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন। এটিই সাধারণত একতরফা ডিভোর্স নামে পরিচিত।

ক. স্বামী কর্তৃক তালাক (তালাক)

ইসলামী আইন অনুযায়ী স্বামী যেকোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই তাঁর স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার নিরঙ্কুশ ক্ষমতা রাখেন। তবে বাংলাদেশে এই তালাক কার্যকর করার জন্য ১৯৬১ সালের অধ্যাদেশের ৭ ধারার নিয়মগুলো মেনে নোটিশ জারি করা বাধ্যতামূলক।

খ. স্ত্রী কর্তৃক তালাক (তালাক-ই-তৌফিজ)

এটি হলো প্রদত্ত বা অর্পিত তালাক। বিয়ের সময় কাবিননামার ১৮ নং কলামে স্বামীকে যদি স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা অর্পণ করার কথা উল্লেখ থাকে, তবে স্ত্রীও স্বামীর মতোই নোটিশের মাধ্যমে তালাক দিতে পারেন। এটি একতরফা হলেও মূলত স্বামীর দেওয়া ক্ষমতার ব্যবহার।


২. আদালতের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ

যদি স্ত্রী তালাকের ক্ষমতা (তালাক-ই-তৌফিজ) না পেয়ে থাকেন, তবে তিনি নির্দিষ্ট আইনি কারণ দেখিয়ে পারিবারিক আদালতে মামলা দায়েরের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ চাইতে পারেন।

ক. স্ত্রী কর্তৃক বিচারিক বিবাহবিচ্ছেদ (Dissolution of Muslim Marriage Act, 1939 অনুযায়ী)

মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদ আইন, ১৯৩৯ অনুযায়ী, স্ত্রী সুনির্দিষ্ট কিছু কারণে আদালতের মাধ্যমে স্বামীর থেকে তালাক চাইতে পারেন। এই কারণগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো:

  • স্বামী চার বছর বা তার অধিক সময় নিরুদ্দেশ থাকলে।

  • স্বামী দুই বছর বা তার অধিক সময় স্ত্রীর ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থ হলে।

  • স্বামী সাত বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে।

  • স্বামী তিন বছর ধরে দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে (যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া)।

  • স্বামী নিষ্ঠুর আচরণ করলে।


৩. পারস্পরিক সম্মতিতে বিবাহবিচ্ছেদ

এটি এমন প্রক্রিয়া যেখানে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই স্বেচ্ছায় এবং পারস্পরিক সম্মতিতে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটান। এই ক্ষেত্রে নোটিশ জারির আনুষ্ঠানিকতা বাধ্যতামূলক নয়।

ক. খোলা তালাক (খোলা)

যখন স্ত্রী বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করার জন্য স্বামীর কাছে প্রস্তাব করেন এবং তাঁর দেনমোহরের কিছু অংশ বা অন্য কোনো আর্থিক সুবিধা ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে স্বামী সেই প্রস্তাবে সম্মত হন, তখন তাকে খোলা তালাক বলে। এটি মূলত স্ত্রীর পক্ষ থেকে বিচ্ছেদের প্রস্তাব।

খ. মোবারাত (Mubarat)

যখন স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই একে অপরের থেকে আলাদা হতে চান এবং দু'জনের মধ্যেই বিচ্ছেদের জন্য তীব্র অনিহা সৃষ্টি হয়, তখন উভয়ের সম্মতিতে যে তালাক হয়, তাকে মোবারাত বলা হয়। এটি খোলের মতোই পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে হয়ে থাকে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন