ডিভোর্স হলে সন্তান কার কাছে থাকবে

 ডিভোর্স হলে সন্তান কার কাছে থাকবে


ডিভোর্সের পর সন্তান কার কাছে থাকবে, এই বিষয়টি বাংলাদেশে মুসলিম পারিবারিক আইন এবং অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন, ১৮৯০ (Guardians and Wards Act, 1890) অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। এখানে দুটি প্রধান ধারণা কাজ করে: ১. হাজানত (Hizanat) বা জিম্মা এবং ২. অভিভাবকত্ব (Guardianship)

সাধারণত, শিশুর যত্ন ও শারীরিক লালন-পালনের অধিকার মা-কে দেওয়া হয় (হাজানতের অধিকার), আর সম্পত্তির দেখভালসহ আইনি অভিভাবকত্বের অধিকার থাকে বাবার

নিচে সন্তানের বয়স এবং লিঙ্গ অনুযায়ী অধিকারের বিস্তারিত নিয়ম দেওয়া হলো:


১. হাজানতের অধিকার (Hizanat/Custody) — মা কখন সন্তানের জিম্মায় থাকেন?

হাজানত মানে হলো সন্তানের যত্ন ও হেফাজতের অধিকার। ডিভোর্সের পর নিম্নলিখিত বয়স পর্যন্ত মা এই অধিকার পান:

সন্তানের লিঙ্গসর্বোচ্চ বয়সসীমাঅধিকার
পুত্র সন্তান৭ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্তমা হাজানতের অধিকারী হবেন।
কন্যা সন্তানবয়ঃসন্ধি (সাধারণত ১৮ বছর) না হওয়া পর্যন্তমা হাজানতের অধিকারী হবেন।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

  • এই সময়ের মধ্যে মা যদি এমন কোনো কাজ করেন যা সন্তানের নৈতিক বা শারীরিক ক্ষতির কারণ হতে পারে (যেমন: অন্য কারও সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া, বাচ্চার প্রতি অবহেলা করা), তবে বাবা আদালতের মাধ্যমে মায়ের কাছ থেকে সন্তানের জিম্মা বা কাস্টডি নিতে পারেন।

  • যদি মা অন্য কোনো পুরুষকে (যিনি সন্তানের মাহরাম নন, অর্থাৎ যার সাথে বিয়ে হালাল) বিয়ে করেন, তবে তিনি হাজানতের অধিকার হারাতে পারেন। তবে এই ক্ষেত্রেও আদালত সন্তানের কল্যাণকে গুরুত্ব দেয়।


২. অভিভাবকত্বের অধিকার (Guardianship) — বাবা কখন সন্তানের অভিভাবক?

আইন অনুযায়ী, সন্তানের আইনগত অভিভাবক (Legal Guardian) হলেন বাবা।

  • বাবার অধিকার: সন্তানের দেখভাল, সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা, ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত (যেমন শিক্ষা, চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত) নেওয়ার অধিকার বাবার থাকে।

  • ৭ বছর/ বয়ঃসন্ধির পরে: পুত্র সন্তানের ৭ বছর পূর্ণ হলে এবং কন্যা সন্তান বয়ঃসন্ধি পেরোলে তাদের হাজানতের অধিকারও সাধারণত বাবার কাছে চলে যায়। তবে এর ব্যতিক্রম হতে পারে, যদি বাবা অযোগ্য প্রমাণিত হন।


৩. আদালতের ভূমিকা (সর্বোচ্চ কল্যাণ নীতি)

বাবা-মা যখন সন্তানের জিম্মা বা কাস্টডি নিয়ে একমত হতে না পারেন, তখন পারিবারিক আদালতে (Family Court) মামলা দায়ের করতে হয়।

  • সন্তানের কল্যাণ (Best Interest of the Child): আদালত সবসময় মনে করে যে সন্তানের সর্বোচ্চ মঙ্গল কার কাছে থাকলে হবে। সন্তানের শারীরিক, মানসিক, নৈতিক ও আর্থিক নিরাপত্তা কার কাছে নিশ্চিত হবে—আদালত সেই দিকটিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়।

  • প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের মত: যদি সন্তানের বয়স বুদ্ধি বিবেচনা করার মতো হয় (সাধারণত ১০-১২ বছরের বেশি), তবে আদালত অনেক ক্ষেত্রে সন্তানের ব্যক্তিগত মতামতও জানতে চায় যে সে বাবা না মায়ের—কার কাছে থাকতে চায়।

৪. সন্তানের সাথে দেখা-সাক্ষাতের অধিকার (Visitation Right)

সন্তান যার জিম্মাতেই থাকুক না কেন, অন্য পক্ষ সন্তানের সাথে দেখা-সাক্ষাতের অধিকার হারান না।

  • বাবা-মা উভয়ই একটি নির্দিষ্ট সময়সূচী অনুযায়ী (যেমন: প্রতি সপ্তাহে বা নির্দিষ্ট ছুটিতে) সন্তানের সাথে দেখা করতে, সময় কাটাতে বা এমনকি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিজের কাছে নিয়ে যেতে পারেন।

  • এই অধিকারও আদালত দ্বারা নিশ্চিত করা হয়।

সংক্ষেপে, ডিভোর্সের পর সন্তান কার কাছে থাকবে, তা নির্ধারণের মূল ভিত্তি হলো সন্তানের বয়স, লিঙ্গ এবং সন্তানের সর্বোত্তম স্বার্থ। এই বিষয়ে আইনি পরামর্শের জন্য একজন পারিবারিক আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করা উচিত।

তালাকের পর সন্তান কার কাছে থাকবে, তা বাংলাদেশের আইনে দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত: শারীরিক জিম্মা বা হেফাজত (Hizanat) এবং আইনগত অভিভাবকত্ব (Guardianship/Walayat)

আইন সব সময় শিশুর সর্বোত্তম মঙ্গল (Best Interest of the Child) বিবেচনা করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, পারিবারিক আদালত নিম্নলিখিত নিয়মগুলো মেনে চলেন:


১. সন্তানের শারীরিক জিম্মা বা হেফাজত (Hizanat)

এই অধিকার বলে সন্তান কার সাথে থাকবে এবং তার দৈনন্দিন যত্ন কে নেবে—তা নির্ধারিত হয়। ডিভোর্সের পর সন্তানের জিম্মার প্রাথমিক অধিকার মায়ের থাকে, যা একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত বলবৎ থাকে।

সন্তানের প্রকারভেদজিম্মার প্রাথমিক অধিকারসময়সীমা
ছেলে সন্তানমা৭ বছর বয়স পর্যন্ত।
মেয়ে সন্তানমাবয়ঃসন্ধি (সাধারণত ১৮ বছর) পর্যন্ত।
৭ বছর/বয়ঃসন্ধির পরবাবাহেফাজতের অধিকার সাধারণত বাবার কাছে চলে যায়।

গুরুত্বপূর্ণ দ্রষ্টব্য:

  • মায়ের অযোগ্যতা: যদি মা অসৎ জীবন যাপন করেন, সন্তানের প্রতি অবহেলা করেন, বা অন্য কোনো অযোগ্যতা প্রমাণিত হয়, তবে আদালত যেকোনো সময় মায়ের কাছ থেকে জিম্মা কেড়ে নিতে পারেন।

  • বাবার অযোগ্যতা: যদি বাবা সন্তানের ভরণপোষণ দিতে অপারগ হন বা সন্তানের ওপর শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করেন, তবে আদালত মায়ের কাছে সন্তানের জিম্মা বহাল রাখতে পারেন।

  • শিশুর ইচ্ছাপত্র: সন্তান যদি ৭ বছর বা তার বেশি বয়সী হয়, তবে আদালত তার নিজের কাছে থাকার ইচ্ছাকেও গুরুত্ব দিতে পারেন।


২. সন্তানের আইনগত অভিভাবকত্ব (Guardianship)

শারীরিক হেফাজত যার কাছেই থাকুক না কেন, সন্তানের আইনগত অভিভাবক (Legal Guardian) কে হবেন, তা আলাদাভাবে নির্ধারিত হয়।

অভিভাবকত্বের ধরনঅধিকারীদায়িত্ব
আইনগত অভিভাবকবাবাবাবা হচ্ছেন নাবালক সন্তানের প্রাকৃতিক ও আইনগত অভিভাবক। সন্তানের সম্পত্তি, ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত (যেমন শিক্ষা, বিয়ে) এবং ভরণপোষণের দায়িত্ব আইনত বাবার।

অর্থাৎ:

ডিভোর্সের পর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত সন্তান মায়ের কাছে (শারীরিক জিম্মা) থাকে, কিন্তু সন্তানের ভবিষ্যতের আইনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং ভরণপোষণের দায় সব সময় বাবার থাকে।


৩. ভরণপোষণের দায়িত্ব

সন্তান যার কাছেই থাকুক না কেন, বাবা আইনত সন্তানের ভরণপোষণ (Maintenance) দিতে বাধ্য। এই ভরণপোষণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত:

  • খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এবং চিকিৎসার ব্যয়।

  • শিক্ষার ব্যয়।

যদি বাবা ভরণপোষণ দিতে অস্বীকার করেন, তবে মা পারিবারিক আদালতে ভরণপোষণের মামলা করে আদালতের মাধ্যমে তা আদায় করতে পারেন।

আইনি জটিলতা এড়াতে এবং সন্তানের অধিকার নিশ্চিত করতে, ডিভোর্সের আগে অবশ্যই একজন পারিবারিক আইন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন