ডিভোর্স এর পর ভুলে থাকার কৌশল
ডিভোর্সের পর ভুলে থাকার কৌশল বলতে সাধারণত সেই মানসিক ও আবেগিক প্রক্রিয়াগুলোকে বোঝানো হয়, যা একজন ব্যক্তিকে বিচ্ছেদ পরবর্তী কষ্ট ও যন্ত্রণা থেকে বেরিয়ে আসতে এবং নতুন জীবন শুরু করতে সাহায্য করে।
এটি "ভুলে যাওয়া" নয়, বরং "গ্রহণ করা" এবং "আগে বেড়ে যাওয়া"-এর প্রক্রিয়া।
ডিভোর্সের পর মানসিকভাবে সুস্থ থাকার এবং জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কিছু কার্যকর কৌশল নিচে দেওয়া হলো:
১. আবেগীয় নিরাময় (Emotional Healing)
এই সময়টায় নিজের অনুভূতিগুলোকে চেপে না রেখে তাকে প্রকাশ করা জরুরি।
অনুভূতিগুলোকে স্বীকার করুন: দুঃখ, রাগ, হতাশা, অপরাধবোধ বা একাকীত্ব—যেকোনো অনুভূতিই আসুক না কেন, তাকে অস্বীকার করবেন না। এটি স্বাভাবিক। নিজেকে শোক করার (Grieve) জন্য সময় দিন।
মনের কথা লিখুন: একটি ডায়েরি রাখুন। সেখানে আপনার সব অনুভূতি, রাগ এবং কষ্টগুলো লিখে ফেলুন। লেখা শেষ হলে কাগজটি ছিঁড়ে ফেলা বা পুড়িয়ে ফেলা এক ধরনের মুক্তির অনুভূতি দিতে পারে।
থেরাপি বা কাউন্সেলিং নিন: যদি কষ্ট অসহনীয় মনে হয় বা দৈনন্দিন জীবনে এর প্রভাব পড়ে, তবে একজন মনোবিদ (Therapist) বা পরামর্শদাতা (Counsellor)-এর সাহায্য নিন। তারা আপনাকে স্বাস্থ্যকর উপায়ে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শেখাবেন।
যোগাযোগ সীমিত করুন: সাবেক স্বামী/স্ত্রীর সাথে অপ্রয়োজনীয় যোগাযোগ এড়িয়ে চলুন, বিশেষ করে শুরুর দিকে। প্রয়োজনে শুধু সন্তানের বা আইনি বিষয়ে কথা বলুন।
২. রুটিন ও স্বাস্থ্য বজায় রাখা
সুস্থ শরীর ও মন নতুন করে জীবন গড়ার জন্য শক্তি দেবে।
নতুন রুটিন তৈরি করুন: ডিভোর্সের পর জীবনে একটি বড় শূন্যতা তৈরি হয়। এই শূন্যতা পূরণের জন্য একটি নতুন ও ইতিবাচক রুটিন তৈরি করুন। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠুন এবং কাজ করুন।
নিজের যত্ন নিন: পর্যাপ্ত ঘুমান, নিয়মিত হালকা ব্যায়াম বা হাঁটুন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খান। আপনার শারীরিক সুস্থতা মানসিক সুস্থতার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
শখের পেছনে সময় দিন: পুরনো বা ভুলে যাওয়া শখগুলো আবার শুরু করুন। হতে পারে ছবি আঁকা, গান শোনা, বই পড়া বা বাগান করা। এতে মন ব্যস্ত থাকবে।
৩. নতুন জীবন গোছানো
ভুলে থাকার অর্থ হলো নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করা।
সামাজিক সমর্থন তৈরি করুন: বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের সাথে বেশি সময় কাটান। তাদের সাথে কথা বলুন। আপনার পাশে যারা আছেন, তাদের গুরুত্ব দিন।
নতুন কিছু শিখুন: একটি নতুন দক্ষতা অর্জন করুন—তা হতে পারে নতুন কোনো ভাষা শেখা, রান্না শেখা বা কোনো কোর্স করা। এটি আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।
পরিবর্তনকে মেনে নিন: ডিভোর্স আপনার জীবনের একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি। এটিকে একটি পরাজয় হিসেবে না দেখে নতুন সুযোগ হিসেবে মেনে নিন। অতীতকে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, কিন্তু ভবিষ্যৎ আপনার হাতে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করুন: ছোট ছোট লক্ষ্য স্থির করুন (যেমন: এই মাসে একটি নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া, একটি বই শেষ করা)। বড় কোনো ভ্রমণের পরিকল্পনাও করতে পারেন। এটি আপনাকে আশাবাদী করে তুলবে।
মনে রাখবেন, ডিভোর্স পরবর্তী নিরাময় একটি প্রক্রিয়া, কোনো সুইচ নয়। রাতারাতি আপনি ভুলে যেতে পারবেন না। নিজেকে সময় দিন, ধৈর্য ধরুন এবং নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন।
ডিভোর্সের পর ভুলে থাকার বা নতুন করে জীবন শুরু করার জন্য কোনো দ্রুত বা জাদুকরী কৌশল নেই। এটি একটি ধীরগতির প্রক্রিয়া, যেখানে প্রয়োজন ধৈর্য, আত্ম-যত্ন এবং মানসিক শক্তি। আপনাকে এই কঠিন সময়ে সাহায্য করার জন্য কিছু কার্যকর কৌশল নিচে দেওয়া হলো:
১. আবেগীয় ও মানসিক কৌশল
এই সময়টাতে নিজের অনুভূতিকে অস্বীকার না করে মেনে নেওয়া এবং সেগুলোকে পরিচালনা করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
অনুভূতিকে স্বীকার করুন: কষ্ট, রাগ, দুঃখ বা হতাশা—সব ধরনের অনুভূতিকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিন। নিজেকে বলুন, "এই অনুভূতিগুলো স্বাভাবিক এবং এগুলো চলে যাবে।" আবেগকে চেপে রাখলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে।
কান্না বা প্রকাশ: আপনার যদি কাঁদতে ইচ্ছে করে, তবে কাঁদুন। যদি রাগের বহিঃপ্রকাশ দরকার হয়, তবে বালিশে ঘুষি দিন বা জোরে দৌড়ান। স্বাস্থ্যকর উপায়ে আপনার আবেগ প্রকাশ করা প্রয়োজন।
থেরাপি বা কাউন্সেলিং নিন: যদি কষ্ট অসহনীয় মনে হয় বা দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে, তবে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ (কাউন্সিলর বা থেরাপিস্ট)-এর সাহায্য নিন। একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তি আপনাকে এই প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠুভাবে পার হতে সাহায্য করতে পারেন।
ক্ষমা করুন (নিজের জন্য): প্রাক্তন সঙ্গী বা নিজের প্রতি রাগ পুষে রাখলে তা কেবল আপনার ক্ষতিই করবে। ক্ষমা করা মানে সব ঠিক হয়ে যাওয়া নয়, বরং সেই ক্ষতিকর আবেগ থেকে নিজেকে মুক্ত করা।
অতীতের স্মৃতি নিয়ন্ত্রণ করুন: যে জিনিসগুলো প্রাক্তন সঙ্গীর কথা মনে করিয়ে দেয় (ছবি, উপহার, পুরনো টেক্সট) সেগুলো হয় সরিয়ে ফেলুন, নয়তো একটি বাক্সে ভরে দৃষ্টির আড়াল করে রাখুন। 'ভুলে থাকার' জন্য এটি একটি অপরিহার্য পদক্ষেপ।
২. দৈনন্দিন জীবন এবং অভ্যাস পরিবর্তন কৌশল
স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য রুটিন ও অভ্যাস পরিবর্তন করা জরুরি।
নতুন রুটিন তৈরি করুন: বিচ্ছেদের কারণে আপনার পুরনো রুটিন ভেঙে গেছে। এখন নতুন করে একটি দৈনিক রুটিন তৈরি করুন এবং কঠোরভাবে তা মেনে চলুন। কাজের সময়, খাওয়ার সময় এবং ঘুমের সময় নির্দিষ্ট করুন।
নিজেকে ব্যস্ত রাখুন: এমন কোনো শখের পেছনে সময় দিন যা আপনি আগে করতে পারেননি (যেমন: নতুন ভাষা শেখা, ছবি আঁকা, রান্না)। নিজেকে উদ্দেশ্যমূলক কাজে ব্যস্ত রাখলে মন অন্যদিকে কম যাবে।
শারীরিক সক্রিয়তা বাড়ান: নিয়মিত হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা বা জিমে যাওয়া মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী। শরীরচর্চা এন্ডোরফিন নামক "সুখী হরমোন" নিঃসরণে সাহায্য করে।
পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন: দুশ্চিন্তার কারণে ঘুমের সমস্যা হতে পারে। ঘুমানোর জন্য একটি শান্ত পরিবেশ তৈরি করুন এবং স্ক্রিন টাইম কমিয়ে দিন। ঘুম আপনার মানসিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
৩. সামাজিক ও ভবিষ্যৎ কৌশল
সামাজিক সমর্থন এবং ভবিষ্যতের দিকে মনোযোগ দেওয়া আপনাকে দ্রুত এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ বাড়ান: আপনার পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে সময় কাটান। তাদের সাথে কথা বলুন, হাসুন। সামাজিক সমর্থন এই সময়ে আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি।
নিজেকে নতুনভাবে সাজান: আপনার হেয়ারস্টাইল বা পোশাকের ধরনে পরিবর্তন আনতে পারেন। এটি আপনাকে আত্মবিশ্বাস দেবে এবং একটি নতুন অধ্যায় শুরু করার প্রতীকী বার্তা দেবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করুন: এখন থেকে আপনার লক্ষ্য কী? নতুন চাকরি, নতুন দক্ষতা অর্জন, ভ্রমণ? একটি লক্ষ্য তালিকা তৈরি করুন এবং ছোট ছোট পদক্ষেপ নিয়ে সেদিকে এগিয়ে যান।
ডেটিংয়ে তাড়াহুড়ো নয়: আপনি যখন মানসিকভাবে পুরোপুরি প্রস্তুত হবেন এবং আপনার ডিভোর্সের কষ্ট থেকে মুক্তি পাবেন, কেবল তখনই নতুন সম্পর্কে জড়ানোর কথা ভাবুন। তাড়াহুড়ো করলে তা আপনাকে আরও কষ্ট দিতে পারে।
মনে রাখবেন, ডিভোর্সের পর ভুলে থাকার আসল কৌশল হলো নিজেকে এবং নিজের ভবিষ্যৎকে অগ্রাধিকার দেওয়া। সময় দিন, নিজের যত্ন নিন—ভবিষ্যতে আপনি আরও শক্তিশালী এবং সুখী মানুষ হিসেবে জেগে উঠবেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন