বাচ্চা থাকলে ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম
বাচ্চা (সন্তান) থাকা অবস্থায় ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম বা আইনি প্রক্রিয়া মৌলিকভাবে একই থাকে, তবে সন্তানের অভিভাবকত্ব (Custody), ভরণপোষণ (Maintenance) এবং দেখাশোনার অধিকার (Access/Visitation Rights) সংক্রান্ত বিষয়গুলো এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশে মুসলিম পারিবারিক আইন ও পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশের অধীনে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
১. তালাক বা ডিভোর্স দেওয়ার সাধারণ প্রক্রিয়া
বাচ্চা থাকুক বা না থাকুক, ডিভোর্স প্রক্রিয়াটি নিম্নোক্ত ধাপগুলো মেনে সম্পন্ন করতে হয়:
তালাক ঘোষণা: স্বামী বা স্ত্রী (যদি স্ত্রীকে কাবিননামার মাধ্যমে তালাকের ক্ষমতা দেওয়া থাকে) মৌখিকভাবে বা লিখিতভাবে তালাক ঘোষণা করবেন।
নোটিশ জারি: ঘোষণার পর যত দ্রুত সম্ভব তালাকের নোটিশ (তালাকনামা) নিম্নলিখিত দুটি ঠিকানায় রেজিস্টার্ড ডাকযোগে পাঠাতে হবে:
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/পৌরসভার মেয়র/সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বরাবর।
অন্য পক্ষ (স্ত্রী বা স্বামী) বরাবর।
সালিশি পরিষদ: নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান/মেয়র পক্ষদ্বয়ের মধ্যে সমঝোতা করানোর জন্য একটি সালিশি পরিষদ গঠন করবেন।
কার্যকারিতা: নোটিশ জারির দিন থেকে ৯০ দিন পার হওয়ার পর (যদি এই সময়ের মধ্যে প্রত্যাহার না করা হয়), তালাকটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হবে।
২. সন্তানের ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়া (ডিভোর্সের পর)
ডিভোর্সের পর সন্তানের অধিকার ও দায়িত্ব নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হলে পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করতে হয়।
ক. অভিভাবকত্ব (Custody)
অভিভাবকত্বের সিদ্ধান্ত আদালতের মাধ্যমে হয়, যেখানে সন্তানের কল্যাণ (Welfare of the Child)-কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
| সন্তানের বয়স | সাধারণত যিনি অভিভাবকত্ব পান |
| ছেলে: ৭ বছর বয়স পর্যন্ত | মা (সাধারণত আদালতের প্রথম পছন্দ) |
| ছেলে: ৭ বছর বয়সের পর | বাবা |
| মেয়ে: বয়ঃসন্ধি (Puberty) না হওয়া পর্যন্ত | মা (সাধারণত আদালতের প্রথম পছন্দ) |
| মেয়ে: বয়ঃসন্ধির পর | বাবা |
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই নিয়মটি চূড়ান্ত নয়। আদালত সবসময় বিবেচনা করে দেখেন যে কার কাছে থাকলে সন্তান সবচেয়ে বেশি নিরাপদ ও ভালো থাকবে। মা বা বাবা যদি সন্তানের অকল্যাণ করেন, তবে অন্য পক্ষ পূর্ণ অভিভাবকত্ব চাইতে পারেন।
খ. ভরণপোষণ (Maintenance)
স্বামীর দায়িত্ব: তালাকের পর সন্তানের ভরণপোষণ দেওয়ার দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে বাবার। এই দায়িত্ব সন্তানের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া বা তার সাবলম্বী হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকে।
আদালতে মামলা: যদি বাবা ভরণপোষণ দিতে অস্বীকার করেন বা ব্যর্থ হন, তবে মা সন্তানের পক্ষ থেকে পারিবারিক আদালতে ভরণপোষণের মামলা দায়ের করতে পারেন।
গ. দেখাশোনার অধিকার (Access/Visitation)
অ-অভিভাবকের অধিকার: যে পক্ষ সন্তানের অভিভাবকত্ব পান না (যেমন, মা যদি অভিভাবকত্ব হারান বা বাবা), তিনি সন্তানের সাথে দেখা করার এবং সময় কাটানোর অধিকার রাখেন।
আদালতের সিদ্ধান্ত: আদালত সাধারণত এই দেখাশোনার সময়সূচি ও পদ্ধতি নির্ধারণ করে দেন, যাতে উভয় পক্ষই সন্তানের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে পারে।
আপনার পরামর্শ
বাচ্চা থাকলে ডিভোর্সের বিষয়টি অনেক সংবেদনশীল। এই ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত কাজগুলো করুন:
আইনজীবীর পরামর্শ নিন: একজন অভিজ্ঞ পারিবারিক আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করুন। তিনিই আপনাকে ডিভোর্স নোটিশ তৈরি ও জারি করার পাশাপাশি সন্তানের অভিভাবকত্ব, ভরণপোষণ এবং দেখাশোনার অধিকার সংক্রান্ত মামলা পরিচালনার সঠিক পথ দেখাবেন।
পারস্পরিক সমঝোতা: যদি সম্ভব হয়, তবে সন্তানের বিষয়গুলো নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে একটি লিখিত চুক্তিতে পৌঁছান। এতে আদালতের দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা এড়ানো সম্ভব হয়।
বাচ্চা (সন্তান) থাকা অবস্থায় ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম বা প্রক্রিয়াটি বাংলাদেশে অন্যান্য ডিভোর্সের মতোই। তবে, সন্তানের বিষয়টি প্রক্রিয়াটিকে আরও সংবেদনশীল এবং আইনি জটিলতাপূর্ণ করে তোলে, বিশেষত সন্তানের অভিভাবকত্ব (Custody) এবং ভরণপোষণ (Maintenance)-এর ক্ষেত্রে।
বাংলাদেশে (মুসলিম আইন অনুযায়ী) সন্তান থাকা অবস্থায় ডিভোর্স দেওয়ার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হয় এবং যে নিয়মগুলো অনুসরণ করতে হয়, তা নিচে দেওয়া হলো:
১. ডিভোর্স দেওয়ার সাধারণ প্রক্রিয়া
বাচ্চা থাকা বা না থাকা সত্ত্বেও ডিভোর্সের মূল ধাপগুলো একই:
নোটিশ জারি: যিনি তালাক দিচ্ছেন (স্বামী, অথবা স্ত্রী যদি কাবিননামায় তালাকের ক্ষমতা পান), তাকে তালাক ঘোষণার পর লিখিত নোটিশ স্বামীর স্থায়ী ঠিকানার সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান/পৌরসভার মেয়র/সিটি কর্পোরেশন মেয়রকে এবং অপর পক্ষকে পাঠাতে হবে।
সালিশি পরিষদ: নোটিশ পাওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সালিশি পরিষদ গঠন করে মিটমাটের চেষ্টা করেন।
কার্যকারিতা: ৯০ দিনের মধ্যে মীমাংসা না হলে বা তালাক প্রত্যাহার না করা হলে ডিভোর্সটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হয়।
২. সন্তানের ক্ষেত্রে আইনি বিষয়গুলো (সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ)
সন্তান থাকা অবস্থায় ডিভোর্স দিলে প্রধানত দুটি বিষয় আইনিভাবে মীমাংসা করতে হয়:
ক. সন্তানের অভিভাবকত্ব (Custody)
আইন অনুযায়ী, মুসলিম শিশুদের অভিভাবকত্বের অধিকার পর্যায়ক্রমে নিম্নরূপ:
| সন্তানের বয়স | অভিভাবকত্বের অধিকার | ব্যাখ্যা |
| পুত্র সন্তান | ৭ বছর বয়স পর্যন্ত | মা (হাজানতের অধিকার) |
| কন্যা সন্তান | বয়ঃসন্ধি (সাধারণত ১৮ বছর) পর্যন্ত | মা (হাজানতের অধিকার) |
| ৭ বছর/ বয়ঃসন্ধি পর | আইনগত অভিভাবকত্ব (Legal Guardianship) | বাবা (যদি তিনি যোগ্য হন) |
বিচ্ছেদ সত্ত্বেও অধিকার: বাবা আইনগত অভিভাবক হলেও, মা নির্ধারিত বয়স পর্যন্ত সন্তানদের নিজের কাছে রাখতে পারেন (Hizanat)।
আদালতের সিদ্ধান্ত: বাবা-মায়ের মধ্যে মতবিরোধ হলে, পারিবারিক আদালত সব সময় সন্তানের সর্বোচ্চ মঙ্গল (Best interest of the child) বিবেচনা করে অভিভাবকত্বের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেন।
খ. সন্তানের ভরণপোষণ (Maintenance)
সন্তান কার কাছেই থাকুক না কেন, বাবা তার প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত সন্তানের ভরণপোষণ দিতে আইনত বাধ্য।
খরচ: সন্তানের শিক্ষা, চিকিৎসা, খাদ্য, বাসস্থানসহ সমস্ত ব্যয় বাবাকে বহন করতে হয়।
আদালতের মাধ্যমে: যদি বাবা স্বেচ্ছায় ভরণপোষণ না দেন, তবে মা পারিবারিক আদালতে ভরণপোষণের মামলা (Suit for Maintenance) করে আদালতের মাধ্যমে ভরণপোষণ আদায় করতে পারেন। এই মামলা ডিভোর্স কার্যকর হওয়ার পরও করা যায়।
৩. দেনমোহর ও ইদ্দত কাল
দেনমোহর: ডিভোর্স কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে স্ত্রীকে তার সম্পূর্ণ দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে স্বামী আইনত বাধ্য।
ইদ্দত কাল: ডিভোর্স কার্যকর হওয়ার আগে স্ত্রীকে তিন মাসিক পিরিয়ড (বা ৯০ দিন) ইদ্দত পালন করতে হয়। এই সময়ে তারা একই বাড়িতে আলাদা থাকতে পারেন এবং এই সময়ে স্বামীকেই স্ত্রীর ভরণপোষণ দিতে হয়।
আপনার পরামর্শ
বাচ্চা থাকলে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই একজন পারিবারিক আইন বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করে নিন, যাতে সন্তানের অভিভাবকত্ব ও আর্থিক নিরাপত্তা সুরক্ষিত থাকে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন