ডিভোর্স দেওয়ার কতদিন পর বিয়ে করা যায়

 ডিভোর্স দেওয়ার কতদিন পর বিয়ে করা যায়


ডিভোর্স দেওয়ার পর কতদিন পর বিয়ে করা যাবে, তা নির্ভর করে তালাকপ্রাপ্ত ব্যক্তিটি পুরুষ নাকি নারী তার ওপর এবং বাংলাদেশের মুসলিম পারিবারিক আইনশরিয়তের বিধান দ্বারা এটি নিয়ন্ত্রিত হয়।

সংক্ষেপে উত্তরটি হলো:

ব্যক্তিপুনর্বিবাহের জন্য প্রয়োজনীয় সময়সীমা
পুরুষ (স্বামী)তালাক কার্যকর হওয়ার সাথে সাথেই পুনরায় বিয়ে করতে পারেন।
নারী (স্ত্রী)তালাক কার্যকর হওয়ার পর ইদ্দতকাল (প্রতীক্ষা সময়) শেষ না হওয়া পর্যন্ত পুনরায় বিয়ে করতে পারেন না।

১. নারীদের জন্য ইদ্দতকাল (প্রতীক্ষা সময়)

তালাকপ্রাপ্তা নারীকে অবশ্যই শরিয়ত ও আইন অনুযায়ী 'ইদ্দতকাল' বা প্রতীক্ষা সময় পার করতে হয়। এই সময়ের মধ্যে অন্য কাউকে বিয়ে করা আইনত ও ধর্মীয়ভাবে অবৈধ

ইদ্দতকালের সময়সীমা নিম্নরূপ:

পরিস্থিতিইদ্দতকাল
সাধারণ ক্ষেত্রেতিনটি মাসিক চক্র (তিন হায়েজ) পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত।
মাসিক বন্ধ থাকলে/অপ্রাপ্তবয়স্ক হলেতিন চান্দ্র মাস (Three Lunar Months)।
স্ত্রী গর্ভবতী হলেসন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত (সন্তান প্রসবের সাথে সাথেই ইদ্দত শেষ হবে)।
মিলন হওয়ার আগে তালাক হলেকোনো ইদ্দত পালনের প্রয়োজন নেই

গুরুত্বপূর্ণ আইনগত বিধান:

  • মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ অনুযায়ী, স্বামী তালাকের নোটিশ দেওয়ার পর ৯০ দিন পর্যন্ত তালাক কার্যকর হয় না।

  • আইনিভাবে তালাক কার্যকর হওয়ার (নোটিশের ৯০ দিন পর) পর যদি তখনো ইদ্দতকাল শেষ না হয়, তবে ইদ্দতকাল শেষ হওয়ার পরই স্ত্রী পুনরায় বিয়ে করতে পারবেন। তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, নোটিশের ৯০ দিন সময়টি ইদ্দতকাল পূরণে যথেষ্ট হয়।

  • যদি ৯০ দিন পূর্ণ হওয়ার আগেই ইদ্দতকাল শেষ হয়ে যায়, তবুও তালাক কার্যকর না হওয়ায় ৯০ দিন পূর্ণ হওয়ার আগে বিয়ে করা উচিত নয়।

২. পুরুষের (স্বামীর) জন্য পুনর্বিবাহের নিয়ম

পুরুষের ক্ষেত্রে তালাকের পর পুনর্বিবাহের জন্য কোনো ইদ্দত পালনের বাধ্যবাধকতা নেই।

  • স্বামী তালাকের নোটিশ পাঠানোর পর ৯০ দিন পার হয়ে তালাক কার্যকর হওয়ার সাথে সাথেই অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারেন।

তবে, একটি বিষয় মনে রাখতে হবে— যদি কোনো পুরুষ তার চতুর্থ স্ত্রীকে তালাক দেন, তবে সেই তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর ইদ্দতকাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি পঞ্চম কাউকে বিয়ে করতে পারবেন না, কারণ আইনত একজন পুরুষ একসাথে চারজনের বেশি স্ত্রী রাখতে পারেন না।

৩. তালাক প্রত্যাহার এবং নতুন করে বিয়ে

  • ৯০ দিনের মধ্যে আপস: যদি তালাকের নোটিশ পাঠানোর ৯০ দিনের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী আপস করে পুনরায় সংসার করতে চান, তবে স্বামী তালাক প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলে তালাক বাতিল হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে নতুন করে বিয়ে করার প্রয়োজন হয় না।

  • ৯০ দিন পার হলে আপস: ৯০ দিন পার হয়ে তালাক কার্যকর হয়ে যাওয়ার পর যদি স্বামী-স্ত্রী আবার সংসার করতে চান, তবে তাদের নতুন করে কাবিন করে আবার বিয়ে করতে হবে।

যেকোনো ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা এড়াতে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করা সবচেয়ে ভালো।

ডিভোর্স দেওয়ার পর পুনরায় বিয়ে করার ক্ষেত্রে নারীর জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষা করা আইন ও ধর্মমতে বাধ্যতামূলক, যা ইদ্দতকাল (Iddat) নামে পরিচিত। পুরুষের জন্য এমন কোনো বাধ্যতামূলক ইদ্দতকাল নেই।

বাংলাদেশে প্রচলিত মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এবং ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী সময়সীমা নিচে বিস্তারিতভাবে বলা হলো:


ডিভোর্সের পর পুনরায় বিয়ে করার সময়সীমা

১. ডিভোর্স কার্যকর হওয়ার সময় (৯০ দিন)

স্বামী বা স্ত্রী (তালাক-এ-তাফويض থাকলে) যখন ডিভোর্সের লিখিত নোটিশ সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বরাবর পাঠান, তখন থেকেই আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়।

  • তালাক কার্যকর হওয়ার সময়: নোটিশ প্রাপ্তির দিন থেকে ৯০ দিন পার না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হয় না। এই ৯০ দিনের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী চাইলে আপোস করে বিবাহ বজায় রাখতে পারেন।

  • এই সময়ে বিয়ে: এই ৯০ দিনের মধ্যে অন্য কোথাও বিয়ে করা আইনত অবৈধ এবং ইসলামী শরিয়ত মতেও তা বৈধ নয়।

২. ইদ্দতকাল (তালাক কার্যকর হওয়ার পর)

তালাক কার্যকর হওয়ার পর (অর্থাৎ ৯০ দিন পার হওয়ার পর) স্ত্রীকে ইদ্দতকাল বা প্রতীক্ষা período অবশ্যই পালন করতে হবে।

পরিস্থিতিইদ্দতকাল বা প্রতীক্ষার সময়সীমা
সাধারণ ক্ষেত্রেতিন মাসিক চক্র (তিন হায়েজ) বা ৯০ দিন (যা আইনত নির্ধারিত)।
যদি স্ত্রী গর্ভবতী হনসন্তান ভূমিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত। এই সময় ৯০ দিনের বেশি হলেও সন্তান জন্মদানের পরেই ইদ্দত শেষ হবে।
যদি বিয়ের পর সহবাস না হয়এ ক্ষেত্রে স্ত্রীর জন্য কোনো ইদ্দতকাল নেই। তালাক কার্যকর হওয়ার সাথে সাথেই তিনি পুনরায় বিয়ে করতে পারবেন।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

তালাকের নোটিশ দেওয়ার পর ৯০ দিন পূর্ণ হলেই ধরে নিতে হবে তালাক আইনত কার্যকর হয়েছে। এর পর থেকে একজন মহিলা তার ইদ্দতকাল পূর্ণ করেছেন কিনা তা নিশ্চিত হয়েই নতুন বিয়ে করতে পারেন।

যদি ডিভোর্স আজ কার্যকর হয়, তবে আপনার উচিত ইদ্দতকাল পূর্ণ হওয়ার পরেই কেবল নতুন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। ইদ্দতকাল পূর্ণ না করে বিয়ে করলে সেটি ইসলামে ও প্রচলিত আইনে অবৈধ বলে গণ্য হতে পারে এবং পরবর্তীতে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকলে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন