কাবিননামা ছাড়া কি ডিভোর্স দেওয়া যায়
হ্যাঁ, বাংলাদেশে কাবিননামা (নিকাহনামা) ছাড়াও ডিভোর্স দেওয়া যায়, তবে এক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল হতে পারে।
ডিভোর্স কার্যকর করার জন্য কাবিননামা থাকা বাধ্যতামূলক নয়, কারণ তালাক কার্যকর হয় মূলত মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১-এর বিধান এবং তালাকের নোটিশ পাঠানোর মাধ্যমে।
কাবিননামা ছাড়া ডিভোর্স দেওয়ার প্রক্রিয়া
কাবিননামা (যা বিয়ের চুক্তির প্রমাণপত্র) না থাকলেও, আপনার বিবাহিত জীবনের প্রমাণ এবং তালাকের নোটিশ প্রেরণের আইনি বাধ্যবাধকতা পূরণের জন্য নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে:
১. স্বামীর ক্ষেত্রে (সহজতম প্রক্রিয়া)
স্বামী যেকোনো সময় স্ত্রীকে তালাক দিতে পারেন। কাবিননামা না থাকলেও তিনি সরাসরি লিখিতভাবে তালাকের ঘোষণা দিয়ে নোটিশ পাঠাতে পারেন।
স্বামী সাদা কাগজে তালাকের নোটিশ প্রস্তুত করবেন।
নোটিশে বিবাহিত সম্পর্ক থাকার তথ্য (বিয়ের তারিখ, স্থান—যদি মনে থাকে) এবং তালাকের কারণ উল্লেখ করবেন।
আইনের বিধান মেনে এটি রেজিস্টার্ড ডাকে মেয়র/চেয়ারম্যান এবং স্ত্রীর ঠিকানায় পাঠাবেন।
নোটিশ প্রাপ্তির ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হবে।
২. স্ত্রীর ক্ষেত্রে (আদালতের মাধ্যমে)
স্ত্রীর ক্ষেত্রে কাবিননামা না থাকা একটি বড় বাধা হতে পারে, কারণ:
কাবিননামার ১৮ নং কলাম: কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা (তালাক-এ-তাফويض) দেওয়া না থাকলে স্ত্রী সরাসরি নোটিশ দিতে পারেন না।
আদালতে আবেদন: এই পরিস্থিতিতে স্ত্রীকে পারিবারিক আদালতে (মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন, ১৯৩৯ অনুযায়ী) বিবাহবিচ্ছেদের জন্য মামলা করতে হয়।
বিয়ের প্রমাণ: এই মামলায় কাবিননামা না থাকলে, স্ত্রীকে সাক্ষী বা অন্যান্য প্রমাণ (যেমন: বিয়ের ছবি, আত্মীয়-স্বজনের সাক্ষ্য, জন্মনিবন্ধনপত্রে স্বামীর নাম ইত্যাদি) দিয়ে বিয়েটি যে বৈধভাবে সম্পন্ন হয়েছে, তা আদালতে প্রমাণ করতে হবে। আদালত এই প্রমাণ গ্রহণ করলে তবেই বিবাহবিচ্ছেদের ডিক্রি দিতে পারেন।
৩. আইনি প্রমাণ হিসেবে যা ব্যবহার করা যেতে পারে
যদি কাবিননামা না থাকে বা হারিয়ে যায়, তবে তার বিকল্প হিসেবে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবাহের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে:
এফিডেভিট (হলফনামা): একজন আইনজীবীর মাধ্যমে বিবাহের তথ্য উল্লেখ করে একটি হলফনামা তৈরি করে নোটারি পাবলিক বা প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা সত্যায়িত করা যেতে পারে।
সাক্ষী: বিয়ের সাক্ষী, আত্মীয়-স্বজন বা কাজীর কাছ থেকে তথ্য বা মৌখিক সাক্ষ্য।
দেনমোহর পরিশোধের প্রমাণ: দেনমোহর আংশিক বা সম্পূর্ণ পরিশোধের কোনো রশিদ বা প্রমাণ।
গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ:
যদিও কাবিননামা ছাড়া ডিভোর্স দেওয়া যায়, কিন্তু ভবিষ্যতে দেনমোহর, ভরণপোষণ বা সম্পত্তি সংক্রান্ত কোনো আইনি বিরোধ দেখা দিলে কাবিননামার অনুপস্থিতি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই, এই ধরনের পরিস্থিতিতে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ পারিবারিক আইন আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া উচিত।
হ্যাঁ, কাবিননামা (বিবাহের নিবন্ধন সনদ) ছাড়া ডিভোর্স বা তালাক দেওয়া যায়, তবে প্রক্রিয়াটি একটু জটিল হতে পারে এবং এতে আইনি প্রমাণ সংক্রান্ত সমস্যা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশে মুসলিম পারিবারিক আইন ও শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী:
১. ডিভোর্স দেওয়ার জন্য কাবিননামা বাধ্যতামূলক নয়
ইসলামী শরিয়ত ও প্রচলিত আইন: বিবাহ যেমন মৌখিকভাবে বা সাক্ষীর মাধ্যমে সম্পন্ন হলে বৈধ হয়, তেমনি তালাক দেওয়ার জন্য কাবিননামা একটি অনिवार্য শর্ত নয়। কাবিননামা হলো বিয়ের একটি সরকারি দলিল ও প্রমাণপত্র, যা বিয়ে এবং তালাকের প্রক্রিয়াকে সহজ ও আইনসম্মত করে তোলে।
তালাকের মূল প্রক্রিয়া: তালাক কার্যকর করার মূল বিধান হলো, মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এর ধারা ৭ মেনে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান/মেয়রকে লিখিত নোটিশ পাঠানো এবং ৯০ দিন অপেক্ষা করা। এই নোটিশ পাঠানোর জন্য কাবিননামা দেখানো বাধ্যতামূলক নয়।
২. কাবিননামা না থাকলে যে জটিলতা তৈরি হতে পারে
কাবিননামা না থাকার অর্থ হলো বিয়ের কোনো লিখিত সরকারি নথি নেই। এতে তালাকের প্রক্রিয়ায় নিচের সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে:
| সমস্যা | কেন গুরুত্বপূর্ণ |
| বিয়ের প্রমাণ | যদি বিপরীত পক্ষ (স্বামী/স্ত্রী) বা সালিশি বোর্ড বিবাহটি অস্বীকার করে, তবে আপনার আইনিভাবে বিয়ে প্রমাণ করা কঠিন হবে। সেক্ষেত্রে সাক্ষী এবং অন্যান্য প্রমাণ (যেমন ছবি, জন্মসনদ) দিয়ে বিয়ে প্রমাণ করতে হবে। |
| স্ত্রী কর্তৃক তালাক | যদি স্ত্রী তালাক দিতে চান, তবে কাবিননামার ১৮ নং কলামে তালাক-এ-তাফويض (স্বামীর মাধ্যমে স্ত্রীকে দেওয়া তালাকের ক্ষমতা) দেওয়া আছে কিনা, তা প্রমাণ করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে স্ত্রীকে আদালতের মাধ্যমে ডিভোর্স চাইতে হবে। |
| দেনমোহর ও ভরণপোষণ | দেনমোহর এবং তালাক পরবর্তী ভরণপোষণ (ইদ্দতকালীন) দাবি করার ক্ষেত্রে কাবিননামা শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। এটি না থাকলে দেনমোহরের পরিমাণ এবং বিয়ের বৈধতা নিয়ে আইনি বিরোধ তৈরি হতে পারে। |
৩. কাবিননামা ছাড়া ডিভোর্সের প্রক্রিয়া
যদি আপনার কাছে কাবিননামা না থাকে, তবুও আপনি একজন আইনজীবী বা কাজীর সহায়তায় নিম্নলিখিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারেন:
১. বিয়ের প্রমাণ সংগ্রহ: আপনার বিয়ের সাক্ষী, ছবি, বা অন্য কোনো সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্ট সংগ্রহ করুন যা আদালতে আপনার বিয়ে প্রমাণে সহায়তা করতে পারে।
২. তালাকের নোটিশ প্রস্তুত: একজন আইনজীবী/কাজীর মাধ্যমে তালাকের নোটিশ প্রস্তুত করুন। নোটিশে বিয়ের তারিখ, স্থান এবং বিপরীত পক্ষের নাম-ঠিকানা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন।
৩. নোটিশ প্রেরণ: নোটিশটি অবশ্যই রেজিস্টার্ড ডাকে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান/মেয়র এবং বিপরীত পক্ষকে পাঠাতে হবে।
৪. সালিশি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ: চেয়ারম্যান/মেয়র কর্তৃক গঠিত সালিশি পরিষদে বিয়ের প্রমাণ ও তালাকের কারণ ব্যাখ্যা করুন।
পরিশেষে বলা যায়, কাবিননামা না থাকলেও তালাক দেওয়া সম্ভব, তবে আইনি জটিলতা এড়াতে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন