আমি আমার স্বামীকে ডিভোর্স দিতে চাই
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল সিদ্ধান্ত। আপনার স্বামীকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য বাংলাদেশে প্রচলিত আইন এবং ইসলামিক শরীয়তের অধীনে যে প্রধান আইনি পদ্ধতিগুলি রয়েছে, তা নিচে ধাপে ধাপে উল্লেখ করা হলো।
কোন পদ্ধতিতে আপনি ডিভোর্স দিতে পারবেন, তা নির্ভর করে আপনার কাবিননামা (বিবাহের চুক্তিপত্র) এবং বর্তমান পরিস্থিতির ওপর।
১. ডিভোর্সের তিনটি প্রধান আইনি পথ
পথ ১: তালাক-ই-তৌফিজ (Talaq-e-Tafweez) বা অর্পিত তালাক (সবচেয়ে সহজ)
যদি আপনার কাবিননামায় স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা দেওয়া থাকে, তবে এটি সবচেয়ে কার্যকর পথ।
শর্ত: বিবাহের কাবিননামার ১৮ নং কলামে যদি স্বামী স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা (তালাক-ই-তৌফিজ) অর্পণ করে থাকেন।
করণীয়:
নোটিশ: আপনাকে আপনার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/পৌরসভার মেয়র/সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে উদ্দেশ্য করে লিখিতভাবে তালাকের নোটিশ পাঠাতে হবে।
কপি প্রদান: একই সাথে নোটিশের একটি কপি আপনার স্বামীর ঠিকানায় রেজিস্টার্ড ডাকযোগে পাঠাতে হবে।
কার্যকর: নোটিশ জারির ৯০ দিন পর তালাক স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হবে (যদি এই সময়ের মধ্যে সালিশি পরিষদে মীমাংসা না হয়)।
পথ ২: খোলা তালাক (Khula) বা পারস্পরিক সম্মতিতে বিচ্ছেদ
যদি আপনার কাবিননামায় তালাকের ক্ষমতা না থাকে এবং স্বামী বিচ্ছেদে সম্মত হন।
শর্ত: স্ত্রী স্বামীর কাছে বিচ্ছেদের প্রস্তাব করবেন। স্ত্রী সাধারণত তার দেনমোহরের কিছু অংশ বা সম্পূর্ণ অংশ স্বামীকে ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে এই বিচ্ছেদ চান।
করণীয়:
স্বামী-স্ত্রী দু'জনই বিচ্ছেদের বিষয়ে সম্মত হবেন।
নিকাহ রেজিস্টার (কাজী) বা আইনজীবীর মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়ার সূচনা করা যেতে পারে।
স্বামী বা স্ত্রী—যিনি নোটিশ পাঠাবেন, সেই অনুযায়ী ৯০ দিনের আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
পথ ৩: আদালতের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ (Judicial Divorce)
যদি স্বামী তালাক দিতে বা খোলা তালাকে সম্মত না হন।
আইন: আপনাকে পারিবারিক আদালতে (Family Court) মামলা করতে হবে।
মামলার কারণ (মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদ আইন, ১৯৩৯ অনুযায়ী): আদালত নিম্নলিখিত কয়েকটি সুনির্দিষ্ট কারণে বিচ্ছেদ মঞ্জুর করতে পারে:
স্বামী দুই বছর বা তার বেশি সময় ধরে স্ত্রীর ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থ হলে।
স্বামী চার বছর বা তার বেশি সময় নিরুদ্দেশ থাকলে।
স্বামী নিষ্ঠুর আচরণ করলে (শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন)।
স্বামী সাত বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে।
স্বামী তার দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে।
করণীয়:
আপনার এলাকার পারিবারিক আদালতে একটি মামলা দায়ের করতে হবে।
আদালত যদি আপনার দেওয়া কারণগুলো উপযুক্ত প্রমাণ সাপেক্ষে গ্রহণ করেন, তবে বিচ্ছেদের ডিক্রি (রায়) জারি করবেন।
পরামর্শ ও পরবর্তী ধাপ
এই ধরনের সংবেদনশীল আইনি প্রক্রিয়ায় ভুল পদক্ষেপ এড়াতে:
কাবিননামা পর্যালোচনা: সবার আগে আপনার কাবিননামার ১৮ নং কলামটি একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীকে দিয়ে ভালো করে দেখে নিন।
আইনজীবীর পরামর্শ: একজন অভিজ্ঞ পারিবারিক আইনজীবী-র সাথে পরামর্শ করুন। তিনি আপনার পরিস্থিতি বিবেচনা করে সবচেয়ে উপযুক্ত এবং দ্রুততম পথটি বাতলে দিতে পারবেন।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: ডিভোর্স প্রক্রিয়া শুরুর জন্য সাধারণত কাবিননামার কপি, জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) এবং বর্তমান ঠিকানার প্রমাণ প্রয়োজন হয়।
আপনার পরিস্থিতি অনুসারে সেরা আইনি পরামর্শ নেওয়ার জন্য আমি আপনাকে একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলার জন্য অনুরোধ করছি।
আপনার এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমি সহানুভূতি জানাচ্ছি। ডিভোর্স বা বিবাহবিচ্ছেদ একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি এবং ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশে একজন স্ত্রী তিনটি প্রধান আইনি উপায়ে স্বামীকে ডিভোর্স দিতে পারেন।
আপনার পরিস্থিতি অনুযায়ী কোন পথটি সবচেয়ে উপযুক্ত হবে, তা নির্ভর করে আপনার কাবিননামা (বিবাহের নিবন্ধন দলিল)-এর শর্তাবলি এবং আপনাদের বর্তমান পরিস্থিতির ওপর।
আপনার ডিভোর্স প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য ধাপগুলো এবং আইনি ভিত্তি নিচে দেওয়া হলো:
১. ডিভোর্স দেওয়ার প্রধান আইনি উপায়সমূহ
উপায় ক: তালাক-ই-তৌফিজ (Talaq-e-Tafweez) বা অর্পিত তালাক
এটি স্ত্রীর জন্য সবচেয়ে সহজ এবং দ্রুততম উপায়, যদি কাবিননামায় এই ক্ষমতা দেওয়া থাকে।
শর্ত: বিবাহের সময় সম্পাদিত কাবিননামার ১৮ নং কলামে যদি স্বামী স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা (তালাক-ই-তৌফিজ) অর্পণ করে থাকেন।
করণীয়:
আপনি আপনার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, বা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কার্যালয়ে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে লিখিত তালাকের নোটিশ পাঠান।
নোটিশের একটি কপি স্বামীর ঠিকানায় রেজিস্টার্ড ডাকযোগে পাঠান।
নোটিশ জারির ৯০ দিন পর তালাকটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হবে, যদি এই সময়ের মধ্যে সালিশি পরিষদের মাধ্যমে মীমাংসা না হয়।
উপায় খ: খোলা তালাক (Khula) বা পারস্পরিক সম্মতিতে বিচ্ছেদ
যদি কাবিননামায় তালাক-ই-তৌফিজের ক্ষমতা না থাকে, তবে এই প্রক্রিয়ায় স্ত্রীর পক্ষ থেকে বিচ্ছেদের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
শর্ত: স্ত্রী স্বামীকে ক্ষতিপূরণ (সাধারণত দেনমোহরের কিছু অংশ বা সম্পূর্ণ অংশ) দেওয়ার বিনিময়ে বিচ্ছেদের প্রস্তাব করেন এবং স্বামী তাতে সম্মত হন।
করণীয়:
স্বামী-স্ত্রী দু'জনই স্বেচ্ছায় বিচ্ছেদের বিষয়ে সম্মত হয়ে কাজী বা আইনজীবীর মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন।
এই ক্ষেত্রেও স্থানীয় চেয়ারম্যান/মেয়রের কাছে নোটিশ জারি এবং ৯০ দিনের সালিশি পরিষদের প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
উপায় গ: আদালতের মাধ্যমে ডিভোর্স (ফাসখ)
যদি স্বামী কোনোভাবেই তালাক দিতে রাজি না হন এবং কাবিননামায় স্ত্রীকে ক্ষমতা দেওয়া না থাকে, তবে স্ত্রী পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করে ডিভোর্স চাইতে পারেন (মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদ আইন, ১৯৩৯ অনুযায়ী)।
যেসব কারণে মামলা করা যায়:
স্বামী দুই বছর বা তার বেশি সময় ধরে স্ত্রীর ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থ হলে।
স্বামী নিষ্ঠুর আচরণ করলে (শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন)।
স্বামী চার বছর বা তার বেশি সময় ধরে নিরুদ্দেশ থাকলে।
স্বামী সাত বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে।
স্বামী তাঁর দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে।
করণীয়: আপনার কারণগুলো প্রমাণ করতে পারলে আদালত বিচ্ছেদের ডিক্রি (রায়) জারি করবেন। আদালতের রায়ের পর চেয়ারম্যান/মেয়রের মাধ্যমে নোটিশ জারি হবে এবং ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হবে।
আপনার জন্য পরবর্তী ধাপ
কাবিননামা যাচাই করুন: আপনার কাবিননামার ১৮ নং কলামটি (তালাক-ই-তৌফিজ সংক্রান্ত) অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর কাছে নিয়ে যান এবং যাচাই করান। যদি ক্ষমতা দেওয়া থাকে, তবে এটাই আপনার জন্য সবচেয়ে সহজ পথ।
আইনজীবীর পরামর্শ নিন: আপনার বর্তমান পরিস্থিতি, ডিভোর্সের কারণ এবং কাবিননামার ভিত্তিতে একজন অভিজ্ঞ পারিবারিক আইনজীবীর সাথে বিস্তারিত আলোচনা করুন। তিনি আপনাকে সঠিক পদ্ধতি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে নির্দেশনা দিতে পারবেন।
প্রস্তুত থাকুন: দেনমোহর, ভরণপোষণ এবং যদি সন্তান থাকে তবে তাদের অভিভাবকত্বের (Custody) বিষয়গুলো নিয়ে আইনিভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।
আইনজীবীর সাহায্য নেওয়ার মাধ্যমে আপনি আইনি জটিলতা এড়িয়ে দ্রুত এবং শান্তিপূর্ণভাবে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন