জনক মিথিলা কে ছিলেন
পুরাণ এবং মহাকাব্য অনুসারে, জনক ছিলেন প্রাচীন বিদেহ রাজ্যের একজন রাজা, যার রাজধানী ছিল মিথিলা। "জনক" শব্দটি আসলে মিথিলার রাজাদের একটি বংশগত উপাধি ছিল, তাই এই নামে বহু রাজা ছিলেন। তবে সবচেয়ে বিখ্যাত জনক হলেন সেই রাজা, যিনি হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণে সীতার পিতা হিসেবে পরিচিত।
রাজা জনকের পরিচয়:
সীতার পিতা: তিনি দেবী সীতার পালক পিতা ছিলেন। প্রচলিত কাহিনী অনুসারে, তিনি লাঙল দিয়ে জমি কর্ষণ করার সময় লাঙলের ফলায় (সীতা) একটি শিশুকন্যাকে পেয়েছিলেন, যার নাম তিনি সীতা রাখেন।
বিদেহ রাজ্যের শাসক: তিনি বিদেহ রাজ্যের রাজা ছিলেন। এই রাজ্যটি বর্তমান ভারতের বিহার এবং নেপালের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত ছিল।
জ্ঞান ও ধার্মিকতা: রাজা জনক কেবল একজন যোদ্ধা বা শাসক ছিলেন না, বরং তিনি তার জ্ঞান, ধার্মিকতা এবং দার্শনিক চিন্তাধারার জন্যও বিখ্যাত ছিলেন। তিনি উপনিষদের একজন গুরুত্বপূর্ণ ঋষি হিসেবেও পরিচিত। উপনিষদে তাঁর এবং ঋষি যাজ্ঞবল্ক্যের মধ্যে গভীর দার্শনিক আলোচনা লিপিবদ্ধ আছে।
বীরত্ব ও প্রতিজ্ঞা: তিনি সীতার বিয়ের জন্য একটি কঠিন শর্ত দিয়েছিলেন—যে ব্যক্তি শিবের বিশাল ধনুক "হরধনু" ভাঙতে পারবে, সীতাকে তার হাতেই তুলে দেওয়া হবে। রাম সেই শর্ত পূরণ করে সীতাকে বিবাহ করেন।
সুতরাং, যখন "জনক মিথিলা" বলা হয়, তখন সাধারণত রামায়ণের সেই বিখ্যাত রাজা জনকের কথাই বোঝানো হয়, যিনি একই সঙ্গে একজন ধর্মপরায়ণ, জ্ঞানী এবং বীর রাজা ছিলেন এবং সীতার পিতা হিসেবে পরিচিত।
প্রাচীন মিথিলা রাজ্যের রাজা জনক ছিলেন একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানিত চরিত্র। তিনি হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণে সীতার পালক পিতা হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত।
তবে, "জনক" আসলে একজন ব্যক্তির নাম নয়, বরং এটি বিদেহ রাজ্যের রাজাদের একটি কৌলিক উপাধি বা রাজকীয় পদবী। তাই এই রাজবংশের অনেকেই "জনক" উপাধি ধারণ করতেন। তবে, আমরা সাধারণত যাকে রাজা জনক হিসেবে চিনি, তার আসল নাম ছিল সীরধ্বজ।
রাজা জনকের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য:
জ্ঞানী ও ধার্মিক রাজা: তিনি একজন অত্যন্ত জ্ঞানী, ধার্মিক এবং দার্শনিক রাজা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি শুধুমাত্র রাজ্যশাসনই করতেন না, বরং আধ্যাত্মিক আলোচনা ও দর্শনেও গভীরভাবে আগ্রহী ছিলেন। তাকে একজন "রাজর্ষি" (রাজা এবং ঋষি) হিসেবে গণ্য করা হয়।
সীতার পিতা: রামায়ণ অনুসারে, রাজা জনক যজ্ঞের জন্য ভূমি কর্ষণ করার সময় লাঙলের রেখায় একটি শিশুকন্যাকে পেয়েছিলেন। লাঙলের রেখাকে "সীতা" বলা হয়, তাই তিনি সেই কন্যার নাম সীতা রাখেন এবং তাকে নিজের সন্তান হিসেবে লালন-পালন করেন।
শিবধনু ভঙ্গ: সীতার স্বয়ংবর (স্বামীর যোগ্যতা নির্ধারণের জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠান) অনুষ্ঠানে তিনি একটি কঠিন শর্ত দিয়েছিলেন। সেই শর্ত অনুযায়ী, যে বীর শিবের বিশাল ধনুকে জ্যা পরিয়ে সেটি ভাঙতে পারবে, সীতাকে তারই হাতে তুলে দেওয়া হবে। ভগবান রাম এই শর্ত পূরণ করে সীতাকে বিবাহ করেন।
إرسال تعليق