স্ত্রী মুখে তালাক দিলে কি তালাক হয়
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, যার উত্তরটি ইসলামী শরিয়ত এবং বাংলাদেশের প্রচলিত মুসলিম পারিবারিক আইন (১৯৬১ সালের অধ্যাদেশ) উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে জানা জরুরি।
সাধারণভাবে উত্তর হলো: না, স্ত্রী মুখে তালাক দিলে তালাক হয় না, যদি না স্বামীকে সেই ক্ষমতা অর্পণ করা হয়ে থাকে।
১. ইসলামী শরিয়ত অনুসারে:
ইসলামী শরিয়তে তালাক দেওয়ার মৌলিক অধিকার বা ক্ষমতা স্বামীর হাতে ন্যস্ত।
স্ত্রী কর্তৃক সরাসরি তালাক: স্ত্রী রাগ বা অন্য কোনো কারণে মুখে তালাক শব্দ উচ্চারণ করলেও, তা স্বামীর উপর কার্যকর হয় না এবং এর দ্বারা বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে না।
তালাক-ই-তাফويض (ক্ষমতা অর্পণ): একমাত্র তখনই স্ত্রী তালাক দিতে পারেন, যখন স্বামী তাকে এই তালাক দেওয়ার ক্ষমতা (ইখতিয়ার) অর্পণ করেন। এই প্রক্রিয়াকে 'তালাক-ই-তাফويض' বলা হয়।
এই ক্ষমতা সাধারণত বিবাহের সময় কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে লিখিত শর্তের মাধ্যমে দেওয়া হয়।
স্ত্রী এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে তালাক দিলে তা কার্যকর হয়, তবে সে ক্ষেত্রেও শরিয়তের ও আইনের নির্দিষ্ট নিয়ম মানতে হয়।
খোলা তালাক (Khula): যদি স্ত্রী কোনোভাবেই স্বামীর সাথে সংসার করতে না চান, তবে তিনি কিছু বিনিময়ের (যেমন: মহর ফেরত দেওয়া) মাধ্যমে স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছেদ চাইতে পারেন। এটি স্বামীর তালাকের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
২. বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুসারে:
বাংলাদেশের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ অনুযায়ী:
স্ত্রী কর্তৃক তালাক: স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারেন শুধুমাত্র যদি:
১. কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে স্বামী কর্তৃক তাকে তালাকের ক্ষমতা (তালাক-ই-তাফويض) দেওয়া থাকে। এই ক্ষেত্রে স্ত্রী আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নোটিশের মাধ্যমে তালাক কার্যকর করতে পারেন।
২. আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ (তালাক): তালাকের ক্ষমতা অর্পণ না করা হলেও, স্ত্রী মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন, ১৯৩৯ অনুযায়ী যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে পারিবারিক আদালতে মামলা করে বিবাহ বিচ্ছেদের (ডিক্রি) আবেদন করতে পারেন।
সারসংক্ষেপ:
| প্রেক্ষাপট | স্ত্রী মুখে তালাক দিলে কি তালাক হয়? |
| সাধারণ শরিয়ত ও আইন (ক্ষমতা অর্পণ ছাড়া) | না, হয় না। তালাকের অধিকার মূলত স্বামীর। |
| তালাক-ই-তাফويض (ক্ষমতা অর্পণ) থাকলে | হ্যাঁ, হয়, তবে মুখে উচ্চারণ করার পর তাঁকে অবশ্যই আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নোটিশ দিতে হবে। |
গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ: যেহেতু এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয় এবং এর ধর্মীয় ও আইনি পরিণতি রয়েছে, তাই যেকোনো সিদ্ধান্তে আসার আগে একজন দক্ষ আলেম বা মুফতি এবং একজন আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করা অপরিহার্য।
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, যার উত্তরটি নির্ভর করে মূলত আইনি ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপট এবং স্ত্রীর তালাক দেওয়ার ক্ষমতা-এর উপর।
সাধারণভাবে এবং প্রধানত মুসলিম শরিয়া আইন ও বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এর উত্তর নিচে দেওয়া হলো:
১. ইসলামী শরিয়া দৃষ্টিকোণ
ইসলামী শরীয়তের মূল নীতি অনুসারে, তালাক দেওয়ার প্রধান অধিকার স্বামীর।
স্বাভাবিক অবস্থায়: স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার কোনো ক্ষমতা না দিয়ে থাকেন, তবে স্ত্রী নিজে মুখে তালাক উচ্চারণ করলেও তালাক কার্যকর হয় না।
তালাক-ই-তাফويض (Delegated Divorce): যদি বিবাহের সময় কাবিননামার মাধ্যমে স্বামী স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা অর্পণ করে থাকেন (যা তালাক-ই-তাফويض নামে পরিচিত), তবে স্ত্রী সেই ক্ষমতা বলে মৌখিকভাবে তালাক দিতে পারেন। এই তালাক তখন কার্যকর হবে, তবে নিচে উল্লেখিত আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
২. বাংলাদেশের আইনগত দৃষ্টিকোণ
বাংলাদেশের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ অনুসারে, তালাক কার্যকর হওয়ার জন্য আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক।
স্ত্রী কর্তৃক তালাক (তালাক-ই-তাফويض): যদি কাবিননামায় স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা দেওয়া থাকে এবং স্ত্রী সেই ক্ষমতা ব্যবহার করে মুখে তালাক দেন, তবে সেই তালাক কার্যকর করার জন্য তাকে অবশ্যই নিম্নলিখিত আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে:
লিখিত নোটিশ: স্ত্রীকে অবশ্যই তার তালাকের বিষয়টি স্বামী এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভার চেয়ারম্যান/সিটি কর্পোরেশনের মেয়র-এর কাছে লিখিত নোটিশের মাধ্যমে জানাতে হবে।
সালিশি পরিষদ: নোটিশ পাওয়ার পর চেয়ারম্যান বা মেয়র একটি সালিশি পরিষদ গঠন করবেন, যারা ৯০ দিনের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আপোস বা সমঝোতার চেষ্টা করবেন।
কার্যকর হওয়া: ৯০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও যদি সমঝোতা না হয় এবং স্ত্রী যদি গর্ভবতী না থাকেন, তবে তালাকটি চূড়ান্তভাবে কার্যকর বলে গণ্য হবে।
৩. খুলা তালাক (Mutual Divorce)
যদি স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে বিবাহ বিচ্ছেদ চান, কিন্তু তার কাছে তালাক-ই-তাফويضের ক্ষমতা না থাকে, তবে তিনি খুলা তালাক-এর মাধ্যমে বিচ্ছেদ চাইতে পারেন।
খুলা: এটি হলো স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সমঝোতা ও চুক্তির ভিত্তিতে বিবাহ বিচ্ছেদ। এক্ষেত্রে স্ত্রী সাধারণত তার দেনমোহরের সম্পূর্ণ বা আংশিক অংশ ছেড়ে দেন। এই পদ্ধতি কার্যকর করার জন্যও নোটিশের মাধ্যমে চেয়ারম্যান/মেয়র-এর কাছে আবেদন জানাতে হয়।
সারসংক্ষেপ:
| পরিস্থিতি | মুখে তালাক দিলে কি তালাক হবে? | অতিরিক্ত শর্ত |
| ১. স্বাভাবিক অবস্থায় (স্বামীর ক্ষমতা ছাড়া) | না | তালাক দেওয়ার অধিকার একমাত্র স্বামীর। |
| ২. তালাক-ই-তাফويض (ক্ষমতা থাকলে) | হ্যাঁ, যদি আইনি প্রক্রিয়া মানা হয় | মুখে বলার পর অবশ্যই লিখিত নোটিশ দিয়ে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। |
গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ: যেহেতু তালাক একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয় এবং এর ধর্মীয় ও আইনি পরিণতি রয়েছে, তাই তালাক সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই একজন দক্ষ আলেম (মুফতি) এবং একজন আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করা উচিত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন