স্ত্রী মারা গেলে স্বামী গোসল করাতে পারবে কি

 স্ত্রী মারা গেলে স্বামী গোসল করাতে পারবে কি


এই বিষয়টি ইসলামের ফিকহ (আইনশাস্ত্র) অনুযায়ী একটি গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা, এবং এই বিষয়ে ফিকহবিদদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

সাধারণত, ইসলামে মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার ক্ষেত্রে একই লিঙ্গের ব্যক্তির দ্বারা গোসল দেওয়ার নিয়ম। তবে স্ত্রী মারা গেলে স্বামী তাকে গোসল করাতে পারবেন কি না, এই প্রশ্নে অধিকাংশ আলেম ও ফিকহবিদদের অভিমত হলো:


স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্বামীর করণীয় (শরঈ দৃষ্টিকোণ)

বেশিরভাগ ফিকহবিদদের (যেমন ইমাম শাফিঈ, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল এবং ফুকাহায়ে আহলে হাদীস) মতে, স্ত্রী মারা গেলে স্বামী তাকে গোসল করাতে পারবেন, এবং এর বিপরীতটাও বৈধ।

১. গোসল করানোর বৈধতা

  • কারণ: মৃত্যুর পরও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার বিবাহের পবিত্রতা ও সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয় না। বিশেষ করে, বিবাহের পবিত্রতার কারণেই একজন স্বামীর জন্য তার স্ত্রীর মৃতদেহ স্পর্শ করা হালাল থাকে।

  • হাদীসের প্রমাণ: রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রী আইশা (রা.) বর্ণনা করেন, "যদি তোমাদের জানার আগে আমি মারা যাই, তবে তুমি আমাকে গোসল করাবে।" (ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৪৬৪)।

  • এছাড়াও, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর স্ত্রী খাদিজা (রা.)-এর মৃত্যুর পর তাঁকে গোসল করানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন বলে বর্ণনা আছে।

২. ভিন্ন মত (হানাফী মাযহাবের একটি মত)

  • হানাফী মাযহাবের ফিকহবিদদের একটি অংশ মনে করেন যে, স্ত্রী মারা যাওয়ার সাথে সাথে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন হয়ে যায় (কারণ তালাকের মাধ্যমে বিচ্ছেদ হলে ইদ্দত পালনের সময় পর্যন্ত সম্পর্ক থাকে, কিন্তু মৃত্যু হলে তা থাকে না)। তাই এই মত অনুসারে, স্বামীর জন্য স্ত্রীকে গোসল করানো জায়েয নয়

৩. গ্রহণযোগ্য ও অধিক প্রচলিত মত

  • উপরে উল্লিখিত হাদীস ও যুক্তির ভিত্তিতে, অধিকাংশ আলেম এবং আধুনিক ফিকহ বোর্ড এই মত দিয়েছেন যে, স্ত্রী মারা গেলে স্বামী তাকে গোসল করাতে পারবেন। এই মতটিকেই সাধারণত অধিক শক্তিশালী ও আমলযোগ্য মনে করা হয়।

  • বিশেষ করে, যদি মৃত স্ত্রীকে গোসল করানোর জন্য অন্য কোনো একই লিঙ্গের উপযুক্ত ব্যক্তি (যেমন মা, বোন, বা অন্য কোনো নারী) না থাকে, তবে স্বামী অবশ্যই গোসল করাতে পারবেন।


সারকথা:

আপনি যদি ইসলামে বহুল প্রচলিত মতটি অনুসরণ করতে চান, তবে স্ত্রী মারা গেলে স্বামী তাকে গোসল করাতে পারবেন। তবে গোসলের কাজটি অবশ্যই শরীয়ত নির্দেশিত নিয়ম মেনেই করতে হবে।

এই সংবেদনশীল পরিস্থিতিতে, আপনার স্থানীয় আলেম বা মুফতির পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে উত্তম।

এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় মাসআলা (বিধান), যার উত্তরটি নির্ভর করে আপনি কোন মাযহাব (ইসলামী ফিকাহর স্কুল) অনুসরণ করছেন তার ওপর।


ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিকোণ

বেশিরভাগ ফিকাহবিদ এবং মাযহাবের মধ্যে স্ত্রী মারা গেলে স্বামীকে গোসল করানো নিয়ে মতভেদ আছে।

১. হানাফী মাযহাবের মত (বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এই মাযহাব অনুসরণ করেন):

  • বিচ্ছেদ হয় না: হানাফী মাযহাব অনুসারে, স্ত্রী মারা গেলেও তাদের বিবাহ বন্ধন (নিকাহ) সম্পূর্ণভাবে ছিন্ন হয় না যতক্ষণ না স্ত্রীর জানাজা হয়ে যায়।

  • গোসল করানো যাবে না: যেহেতু শরীয়তের বিধান অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গোসলের ক্ষেত্রে একজন অন্যজনের লজ্জাস্থান দেখা বা স্পর্শ করার বিধান রয়েছে, তাই স্ত্রী মারা গেলে স্বামী তাকে গোসল করাতে পারবে না

  • কারা গোসল করাবেন: মৃত স্ত্রীকে তার মহিলা আত্মীয়-স্বজনরা (যেমন মা, বোন, কন্যা, খালা, ফুফু ইত্যাদি) অথবা অন্যান্য নেককার মহিলারা গোসল করাবেন।

২. হাম্বলী ও শাফেয়ী মাযহাবের মত:

  • গোসল করানো যাবে: এই মাযহাবগুলো মনে করে, স্ত্রী মারা গেলেও স্বামী তাকে গোসল করাতে পারবেন।

  • যুক্তি: তাদের যুক্তি হলো, রাসূল (সা.) তাঁর স্ত্রী ফাতেমা (রা.)-কে এবং আয়েশা (রা.)-কে গোসল করানোর জন্য প্রস্তুত ছিলেন। (যদিও আয়েশা (রা.)-এর মৃত্যুর পর আবু বকর (রা.)-এর গোসল করানোর ঘটনা বেশি নির্ভরযোগ্য)। এই মাযহাবগুলো এই ধরনের হাদিসের উপর ভিত্তি করে স্বামীকে গোসল করানোর অনুমতি দেয়।

৩. মালিকী মাযহাবের মত:

  • মালিকী মাযহাব মতে, স্বামী তার স্ত্রীকে গোসল করাতে পারবে না।


সংক্ষিপ্ত ও চূড়ান্ত পরামর্শ

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেখানে বেশিরভাগ মানুষ হানাফী মাযহাব অনুসরণ করেন, সেখানে সাধারণভাবে ফতোয়া হলো:

স্ত্রী মারা গেলে স্বামী তাকে গোসল করাতে পারবেন না। মৃত স্ত্রীকে তার সমগোত্রীয় মহিলাদের দ্বারা গোসল করানো উচিত।

তবে, একান্ত নিরুপায় পরিস্থিতিতে (যেমন আশেপাশে গোসল করানোর মতো কোনো মহিলা না থাকলে) স্বামী গোসল করাতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে, গোসলের সময় কাপড় ব্যবহার করে শরীর মুছে দেওয়া বা হাত দিয়ে সরাসরি স্পর্শ না করার মতো সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

যেহেতু এটি একটি স্পর্শকাতর ধর্মীয় বিষয়, আপনার নির্দিষ্ট পারিবারিক বা মাযহাবের রীতি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে স্থানীয় একজন আলেম বা মুফতির পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে উত্তম।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন