ডিভোর্স দিতে কত টাকা লাগে
ডিভোর্স বা বিবাহবিচ্ছেদ দিতে ঠিক কত টাকা লাগবে, তা কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এটি কোনো নির্দিষ্ট সরকারি ফি নয়, বরং এটি প্রধানত আইনজীবীর ফি, নোটিশ পাঠানোর খরচ ও অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়া-র খরচের সমষ্টি।
খরচগুলো সাধারণত নিম্নলিখিত প্রধান খাতগুলোতে ভাগ করা যায়:
১. ডিভোর্সের মূল খরচ (আইনজীবী ও নোটিশ)
এটি হলো সবচেয়ে বড় এবং পরিবর্তনশীল অংশ:
খরচের খাত | খরচ কেমন হতে পারে | ব্যাখ্যার |
আইনজীবীর ফি (Legal Fees) | ৳৫,০০০ থেকে ৳১,০০,০০০ বা তার বেশি | এটি সবচেয়ে পরিবর্তনশীল। অভিজ্ঞ আইনজীবীর ফি, মামলার জটিলতা, মামলা জেলা শহরে নাকি ঢাকা/চট্টগ্রামের মতো বড় শহরে হচ্ছে—এসবের ওপর নির্ভর করে। কেবল ডিভোর্সের নোটিশ তৈরি ও জমা দেওয়ার জন্য ফি কম হতে পারে, কিন্তু যদি পারিবারিক আদালতে দেনমোহর, ভরণপোষণ বা সন্তানের অভিভাবকত্ব নিয়ে মামলা করতে হয়, তবে ফি অনেক বেড়ে যায়। |
নোটিশ পাঠানোর খরচ | ৳১,০০০ থেকে ৳৩,০০০ | ডিভোর্স নোটিশ সাধারণত রেজিস্টার্ড ডাকযোগে বা আইনজীবীর মাধ্যমে পাঠানো হয়। এর মধ্যে নোটিশ তৈরি, টাইপিং, স্ট্যাম্প পেপার এবং মেয়রের বা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে জমা দেওয়ার খরচ অন্তর্ভুক্ত। |
২. সরকারি ফি ও অন্যান্য খরচ
এই খরচগুলো তুলনামূলকভাবে কম এবং স্থির:
খরচের খাত | খরচ কেমন হতে পারে | ব্যাখ্যার |
নোটিশ গ্রহণের ফি | ৳ ৫০০ থেকে ৳ ১,০০০ | সিটি কর্পোরেশন বা ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে ডিভোর্স নোটিশ জমা দেওয়ার জন্য একটি নামমাত্র ফি বা চালান দিতে হয়। |
হলফনামা (Affidavit) ও স্ট্যাম্প | ৳ ১০০ থেকে ৳ ৫০০ | তালাক ঘোষণার জন্য বা আইনি নথি তৈরি করতে হলফনামা ও নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের জন্য এই খরচ হতে পারে। |
শুনানির খরচ (পারিবারিক আদালতের ক্ষেত্রে) | ক্ষেত্র বিশেষে ভিন্ন | যদি আদালতে কাউন্সেলিং বা শুনানির জন্য যেতে হয়, তবে সেখানে বিভিন্ন ছোটখাটো প্রশাসনিক খরচ লাগতে পারে। |
খরচের তারতম্যের প্রধান কারণ
আপনার ডিভোর্স খরচ কত হবে তা এই বিষয়গুলোর ওপর নির্ভর করে:
জটিলতা: যদি কেবল নোটিশের মাধ্যমে ডিভোর্স হয়ে যায় এবং দেনমোহর বা ভরণপোষণ নিয়ে কোনো বিরোধ না থাকে, তবে খরচ কম হবে।
বিরোধ: যদি স্বামী-স্ত্রী যেকোনো একটি পক্ষ নোটিশ বা ডিভোর্স মানতে না চান এবং পারিবারিক আদালতে মামলা করেন, তবে আইনজীবীর ফি ও প্রক্রিয়া খরচ অনেক বেড়ে যাবে।
শহর বনাম গ্রাম: বড় শহরগুলিতে (ঢাকা, চট্টগ্রাম) সাধারণত আইনজীবীর ফি তুলনামূলকভাবে বেশি হয়।
পরামর্শ: ডিভোর্স প্রক্রিয়া শুরু করার আগে একজন পারিবারিক আইন বিশেষজ্ঞ আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করে আপনার নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে মোট আনুমানিক খরচ সম্পর্কে জেনে নেওয়া ভালো।
ডিভোর্স বা বিবাহবিচ্ছেদ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আসলে কত টাকা লাগবে, তা বেশ কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। বাংলাদেশে ডিভোর্সের খরচ মূলত নির্ভর করে আপনি কোন পদ্ধতিতে এবং কী ধরনের আইনি সহায়তায় প্রক্রিয়াটি করছেন।
এখানে ডিভোর্সের খরচের একটি সাধারণ ধারণা দেওয়া হলো:
১. আইনি ফি বা আইনজীবীর খরচ (সবচেয়ে বড় অংশ)
ডিভোর্সের মোট খরচের সবচেয়ে বড় অংশ হলো আইনজীবীর ফি (Legal Fee)। এটি নির্ভর করে:
খরচের কারণ | খরচের ধারণা |
পদ্ধতি ও জটিলতা | সাধারণ নোটিশ প্রদান: যদি স্বামী বা স্ত্রী সহজে তালাক নোটিশ দিতে চান এবং অপর পক্ষ কোনো জটিলতা তৈরি না করেন, তবে খরচ তুলনামূলকভাবে কম। |
আদালতে মামলা: দেনমোহর, ভরণপোষণ, বা সন্তানের অভিভাবকত্ব (Custody) নিয়ে বিরোধ থাকলে পারিবারিক আদালতে মামলা করতে হয়। এতে আইনজীবীর ফি অনেক বেশি হয় এবং মামলা যত দীর্ঘ হয়, খরচ তত বাড়ে। | |
আইনজীবীর অভিজ্ঞতা | একজন অভিজ্ঞ ও সুপরিচিত আইনজীবীর ফি নতুন বা কম অভিজ্ঞ আইনজীবীর চেয়ে স্বভাবতই অনেক বেশি হয়। |
শহরের অবস্থান | ঢাকা বা চট্টগ্রামের মতো বড় শহরের আইনজীবীদের ফি সাধারণত মফস্বল বা জেলা পর্যায়ের আইনজীবীদের চেয়ে বেশি হয়। |
খরচের একটি সাধারণ রেঞ্জ: শুধুমাত্র একটি তালাক নোটিশ তৈরি ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য আইনি ফি সাধারণত ৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫,০০০ টাকা বা তার বেশি হতে পারে। কিন্তু পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের হলে এই খরচ ৫০,০০০ টাকা থেকে লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
২. সরকারি ফি এবং অন্যান্য প্রশাসনিক খরচ
আইনজীবীর ফি ছাড়াও কিছু সরকারি বা প্রশাসনিক খরচ থাকে, যা সাধারণত তুলনামূলকভাবে কম:
নোটিশ ফি: সিটি কর্পোরেশন বা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে তালাক নোটিশ জমা দেওয়ার জন্য সামান্য ফি লাগে।
কোর্ট ফি: যদি পারিবারিক আদালতে কোনো মামলা দায়ের করা হয়, তবে মামলা অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণে কোর্ট ফি জমা দিতে হয়।
নথিপত্রের খরচ: হলফনামা তৈরি (নোটারি), ফটোকপি, টাইপিং এবং অন্যান্য দাপ্তরিক কাজের খরচ।
৩. অপ্রত্যাশিত ও অতিরিক্ত খরচ
বিচ্ছেদের সময় এই খরচগুলোও বিবেচনা করতে হয়:
দেনমোহর পরিশোধ: যদি দেনমোহর বাকি থাকে, তবে ডিভোর্সের আগে বা পরে স্বামীকে সেই দেনমোহরের পুরো অর্থ স্ত্রীকে পরিশোধ করতে হয়। এটি ডিভোর্সের সবচেয়ে বড় আর্থিক দায় হতে পারে।
ভরণপোষণ: সন্তানের ভরণপোষণ বা স্ত্রীর খোরপোশ সংক্রান্ত আইনি নির্দেশ থাকলে সেই খরচও ডিভোর্সের খরচের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
সংক্ষেপে
যদি কোনো জটিলতা ছাড়া কেবল তালাক নোটিশ প্রক্রিয়াকরণ করতে চান, তবে আইনি ও প্রশাসনিক খরচ মিলিয়ে মোট খরচ ১০,০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকার মধ্যে থাকতে পারে (আইনজীবীর ওপর নির্ভর করে)।
তবে, যদি আদালতে মামলা দায়ের করতে হয়, তবে কোনো নির্দিষ্ট খরচ বলা কঠিন, এটি মামলার জটিলতা, সময় এবং আইনজীবীর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অনেক বেশি হতে পারে।
আপনার পরিস্থিতি অনুসারে সুনির্দিষ্ট খরচের ধারণা পেতে, একজন পারিবারিক আইন বিশেষজ্ঞ আইনজীবীর সাথে সরাসরি পরামর্শ করা সবচেয়ে ভালো।
আপনার কি ডিভোর্সের প্রক্রিয়া বা অন্য কোনো বিষয়ে আরও কিছু জানার আছে?
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন