স্ত্রী ছেলে পোকা পাটের কোন অংশে ক্ষতি করে
পাটের পোকার ক্ষেত্রে "স্ত্রী পোকা" (Female insect) এবং "ছেলে পোকা" (Male insect) বলতে সাধারণত পূর্ণাঙ্গ মথ বা প্রজাপতি-কে বোঝানো হয়। এই পূর্ণাঙ্গ পোকা দুটি সরাসরি পাটের কোনো অংশ খায় না, তবে তারা বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে পাটের প্রধান ক্ষতি করে থাকে।
পাটের কোন অংশে কীভাবে ক্ষতি হয়, তা নিচে দেওয়া হলো:
১. পূর্ণাঙ্গ পোকার ভূমিকা (স্ত্রী ও ছেলে পোকা)
ক্ষতির স্থান: পাতার নিচের দিক (Underside of the leaves)।
ক্ষতির ধরন: স্ত্রী পোকা পাটের পাতার নিচের দিকে ডিম পাড়ে। এই ডিম পাটাই হলো তাদের ক্ষতির মূল সূচনা। পুরুষ পোকাটির কাজ প্রজননে সহযোগিতা করা।
২. আসল ক্ষতি করে পোকার যে অংশটি (শূঁয়ো পোকা)
ডিম ফুটে বের হওয়া শূঁয়ো পোকা বা লার্ভা (Caterpillar)-ই পাটের প্রধান ক্ষতিসাধন করে।
ক্ষতির স্থান:
প্রাথমিক ক্ষতি: পাতার সবুজ অংশ (Leaf Lamina)।
ক্ষতির ধরন: লার্ভাগুলো প্রথমে দলবদ্ধভাবে থেকে পাতা খেতে শুরু করে এবং পাটের পাতা ঝাঁঝরা (Skeletonize) করে দেয়। পাতা খাওয়ার ফলে গাছ দুর্বল হয়ে যায় এবং সালোকসংশ্লেষণে বাধা সৃষ্টি হয়, যা ফলন মারাত্মকভাবে কমিয়ে দেয়।
সুতরাং, স্ত্রী পোকার প্রধান "ক্ষতি" হলো পাতায় ডিম পাড়া, আর আসল এবং সবচেয়ে বেশি খাওয়ার ক্ষতি করে তাদের সন্তান বা শূঁয়ো পোকা (Larva)।
আপনি সম্ভবত পাটের একটি ক্ষতিকর পোকা চেলে পোকা (Jute Apion) বা "পাটের স্ত্রী পোকা"-র (Jute Stem Weevil - Apion corchori) কথা বলছেন, যা পাটের ফলনের মারাত্মক ক্ষতি করে।
এই পোকাটি মূলত পাটের কাণ্ড বা গিঁটে (Stem or Node) ক্ষতি করে থাকে।
স্ত্রী পোকা (চেলে পোকা/জুট স্টেম উইভিল) দ্বারা পাটের ক্ষতি
পাটের চেলে পোকার ক্ষতির ধরনটি সুনির্দিষ্ট:
১. ডিম পাড়ার কারণে ক্ষতি (ডগা ও গিঁট)
ডগা ও গিঁটে ছিদ্র: পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী পোকা তাদের শুঁড় (snout) দ্বারা পাটের ডগা, গিঁট বা পর্বে ছিদ্র করে ডিম পাড়ে।
ডগা মারা যাওয়া: ডিম পাড়ার ফলে গাছের ডগা শুকিয়ে মারা যায় (die-back) এবং গাছ লম্বায় বাড়তে না পেরে পাশ থেকে শাখা-প্রশাখা বের হয়। এতে পাটের গুণগত মান কমে যায়।
২. কীড়া দ্বারা কাণ্ডের ক্ষতি (আঁশের মান হ্রাস)
কাণ্ডের ভেতরে প্রবেশ: ডিম ফুটে কীড়া (লার্ভা) বের হয় এবং তারা কাণ্ড ছিদ্র করে ভেতরে প্রবেশ করে কাণ্ডের ভেতরের কলা (টিস্যু) ও মজ্জা খেতে থাকে।
শক্ত গিঁট সৃষ্টি: আক্রান্ত স্থান থেকে এক প্রকার আঠালো পদার্থ বের হয়। এই আঠালো পদার্থ কীড়ার মলের সাথে মিশে কাণ্ডের ভেতরে শক্ত গিঁটের সৃষ্টি করে।
ফলাফল: আঁশের মারাত্মক ক্ষতি
সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় ফলন তোলার পর। পাট যখন পচানো হয়, তখন এই শক্ত গিঁটগুলো পচে না। এই গিঁটযুক্ত আঁশ বাজারে নিম্নমানের বলে বিবেচিত হয় এবং আঁশের ওজন কমে যাওয়ার পাশাপাশি দামও অনেক কম পাওয়া যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন