ওর স্যালাইনের আবিষ্কারক কে
১৯৭০ সালে ড. দিলীপ কুমার মহলানবিশ এর নেতৃত্বে একটি গবেষক দল আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশে (International Centre for Diarrhoeal Disease Research, Bangladesh - ICDDR,B) একটি যুগান্তকারী গবেষণা পরিচালনা করেন। তাদের গবেষণার ফলস্বরূপ একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত হয় যে, কলেরা রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে শিরায় ইনজেকশনের মাধ্যমে স্যালাইন পুশের পরিবর্তে মুখে খাওয়ার ওর স্যালাইন প্রয়োগে মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমিয়ে আনা যায়।
তাই বলা যায়, ওর স্যালাইনের ব্যবহার এবং কার্যকারিতা প্রথম সফলভাবে প্রমাণ করেন ড. দিলীপ কুমার মহলানবিশ। তার এই আবিষ্কার লক্ষ লক্ষ জীবন বাঁচিয়েছে। এই আবিষ্কারের জন্য তাকে ২০২৩ সালে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মবিভূষণ (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।
১৯৭০ সালে, বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) মহাখালীর কলেরা হাসপাতালে (বর্তমানে আইসিডিডিআর,বি) কর্মরত চিকিৎসক ড. রফিকুল ইসলাম সর্বপ্রথম খাবার স্যালাইন বা ওআরএস (Oral Rehydration Saline) আবিষ্কার করেন।
ঐ সময়ে ড. রফিকুল ইসলাম কলেরা রোগীর মৃত্যুহার কমানোর জন্য সহজ এবং কার্যকর একটি উপায় খুঁজছিলেন। কারণ কলেরা রোগে আক্রান্ত রোগীদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে জল ও লবণ বেরিয়ে যায়, যার ফলে দ্রুত পানিশূন্যতা ও দুর্বলতা দেখা দেয়, যা শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ হয়। তিনি দেখতে পান যে, শিরায় স্যালাইন দেওয়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং সবার জন্য তা সহজলভ্য নয়। তাই তিনি এমন একটি সহজলভ্য সমাধান নিয়ে কাজ শুরু করেন যা মুখে খাওয়া যাবে।
তিনি গবেষণা করে দেখেন যে, গ্লুকোজ বা শর্করা খাদ্যনালী থেকে জল ও লবণ শোষণে সাহায্য করে। এই নীতির উপর ভিত্তি করে তিনি চিনি, লবণ এবং সামান্য পরিমাণ খাবার সোডা মিশিয়ে এক নতুন মিশ্রণ তৈরি করেন। তিনি এটি কলেরা আক্রান্ত রোগীদের উপর প্রয়োগ করে বিস্ময়কর সাফল্য পান। এই মিশ্রণটিই পরবর্তীতে ওরস্যালাইন নামে পরিচিতি লাভ করে।
ড. রফিকুল ইসলামের এই আবিষ্কার চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। এটি কলেরা, ডায়রিয়া এবং অন্যান্য পানিশূন্যতা সৃষ্টিকারী রোগের চিকিৎসায় বিপ্লব এনেছে এবং বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন