গল্প ডিভোর্স লেখা ফিলিপ সরকার
আমি ফিলিপ সরকার রচিত 'ডিভোর্স' নামে কোনো নির্দিষ্ট গল্পের তথ্য খুঁজে পাইনি।
তবে, যদি আপনি ফিলিপ সরকার-এর লেখা কোনো বিশেষ গল্প বা অন্য কোনো লেখকের গল্প খুঁজে থাকেন, তাহলে অনুগ্রহ করে গল্পের নাম বা লেখকের নাম আরও একবার নিশ্চিত করলে আমি সাহায্য করতে চেষ্টা করতে পারি।
অনেক সময় গল্পের নাম বা বানান ভিন্ন হওয়ার কারণে সঠিক তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় না।
আপনার অনুরোধ অনুযায়ী, ডিভোর্স নিয়ে লেখা একটি কাল্পনিক গল্প নিচে দেওয়া হলো:
ডিভোর্স
— ফিলিপ সরকার
আজ তাদের ফ্ল্যাটের নীরবতা বড্ড ভারী। প্রতিটি নিঃশ্বাস যেন কাঁচের দেয়াল ভেঙে বেরিয়ে আসতে চাইছে। টেবিলের ওপর নিস্প্রাণ দুটো সাদা কাগজ পড়ে আছে। দুটো নীল কালির স্বাক্ষর—রজত এবং অনিন্দিতা। এই দুটি স্বাক্ষরই গত বারো বছরের ‘আমরা’ শব্দটিকে আজ চিরতরে মুছে দিল।
ঘড়িতে তখন রাত এগারোটা। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর থেকে রজত আর অনিন্দিতা আইনত স্বামী-স্ত্রী থাকবে না। কাল সকাল থেকে তাদের জীবন দুটো ভিন্ন স্রোতে বয়ে যাবে।
অনিন্দিতা জানালার ধারে গিয়ে দাঁড়ালো। বাইরে এক আকাশজোড়া শ্রাবণ ধারা। বৃষ্টি যেন তাদের দীর্ঘ দাম্পত্যের চাপা দীর্ঘশ্বাস। সে একবারও ফিরে তাকালো না রজতের দিকে। ঘৃণা? না। কোনো তীব্র রাগ বা ক্ষোভ তাদের এই বিচ্ছেদের কারণ নয়। তাদের বিচ্ছেদ হয়েছে অনেক নীরবে, অতি সন্তর্পণে।
ভালোবাসার মৃত্যু ঘটেনি, তবে সজীবতা হারিয়ে গিয়েছিল। এক ছাদের নিচে থেকেও তারা ছিল যেন দুটো ভিন্ন গ্রহের বাসিন্দা। ঝগড়া বা চিৎকার নয়, বরং একটা হিমশীতল নীরবতা তাদের মাঝে দেয়াল তুলে দিয়েছিল—যা কোনোদিন আর ভাঙা সম্ভব হয়নি।
রজত তার শেষ কফির মগ হাতে দাঁড়িয়েছিল। মনে পড়ল বিয়ের প্রথম বছর। সে সময় অনিন্দিতার ছোট ছোট আবদার, গভীর রাতে ছাদে বসে তারার গল্প—সবকিছু আজ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। 'চিরকাল'-এর শপথটা আজ একটি ছাপানো সরকারি কাগজে শেষ হয়ে গেল।
"আমি চললাম, রজত," মৃদু স্বরে বলল অনিন্দিতা। তার হাতে শুধুমাত্র একটি ছোট ট্রলি ব্যাগ, যা সে আসার সময়ও এনেছিল।
রজত শুধু মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। সে জানতো, এখন কথা বলতে গেলেই বাঁধ ভেঙে যাবে। আর এই বাঁধ ভাঙা জল আর কেউ দেখতে চায় না।
অনিন্দিতা দরজা ঠেলে বেরিয়ে গেল। লিফটের আওয়াজ মিলিয়ে যাওয়ার পর রজত ধীরে ধীরে টেবিলে ফিরে এলো। কাগজগুলো তখনও সেখানে পড়ে আছে—তালাকের চূড়ান্ত নোটিশ। তার নামের নিচে তার স্বাক্ষর।
সেদিন রাতে রজত বুঝতে পারল, ডিভোর্স মানে সম্পর্ক শেষ হওয়া নয়, ডিভোর্স হলো একটি অস্বাস্থ্যকর এবং ক্ষতিকর অভ্যাস থেকে মুক্তি পাওয়া। এটা কোনো ধ্বংস নয়, বরং একটি নতুন, ভয়ংকর অথচ প্রয়োজনীয় শুরু। এখন থেকে তার দিনগুলো শুধু তার নিজের। তার ঘর, তার জীবন, তার সময়—সবকিছুর মালিক সে নিজেই।
কিন্তু এই মুক্তি এবং স্বাধীনতার মাঝেও এক গভীর বিষাদের ছায়া ছিল। রজত মনে মনে বললো, "অনিন্দিতা, ভালো থেকো। তোমার নীরব দুঃখগুলো যেন নতুন জীবনে পূর্ণতা পায়।"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন