বিয়ের রাতে স্বামী স্ত্রী কি করে
বিয়ের রাত (বাসর রাত) হলো স্বামী-স্ত্রীর নতুন জীবন শুরুর প্রথম ধাপ। ইসলামে এই রাতকে আধ্যাত্মিক এবং আবেগিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। এই রাতে স্বামী-স্ত্রীর কিছু সুন্নাত ও আদব পালন করা উচিত:
১. আবেগিক ও সামাজিক করণীয়
বিয়ের প্রথম রাতে স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই উচিত পরস্পরের প্রতি কোমল আচরণ করা এবং একে অপরের সাথে পরিচিত হওয়া।
শান্তি ও স্বস্তি দেওয়া: স্ত্রী তার পরিচিত পরিবেশ ও পরিবার ছেড়ে নতুন এক পরিবেশে আসেন, তাই স্বামীর উচিত তাকে ভালোবাসা ও কোমল ব্যবহারের মাধ্যমে স্বস্তি দেওয়া।
কোমল আচরণ ও কথা বলা: তাড়াহুড়ো না করে স্ত্রীর সাথে আন্তরিকভাবে কথা বলা, তার ভালো লাগা-মন্দ লাগা জানার চেষ্টা করা এবং সুন্দর ব্যবহার করা।
উপহার দেওয়া (মুস্তাহাব): স্ত্রীকে খুশি করার জন্য ছোট কোনো উপহার দেওয়া উত্তম।
খাবার গ্রহণ: হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) তাঁর স্ত্রী আয়িশা (রা.)-কে দুধ পান করতে দিয়েছিলেন। সম্ভব হলে হালকা কিছু মিষ্টি বা হালাল খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে।
২. গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত আমলসমূহ
বাসর রাতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত আমল রয়েছে যা স্বামী-স্ত্রীকে একসাথে পালন করা উচিত:
| সুন্নাত/আমল | পদ্ধতি |
| একত্রে দু'রাকাত সালাত | স্বামী-স্ত্রী একসাথে দু'রাকাত নফল নামাজ আদায় করবেন। এটি হলো বিবাহের জন্য আল্লাহ তা'আলার কাছে শুকরিয়া আদায় ও কল্যাণ কামনার নামাজ। |
| স্ত্রীর কপালে হাত রেখে দু'আ | সালাত আদায়ের পর স্বামী স্ত্রীর মাথার অগ্রভাগ ধরে এই দু'আ পড়বেন: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ (অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তার কল্যাণটুকু এবং যে কল্যাণের ওপর তাকে সৃষ্টি করেছেন, সেটা প্রার্থনা করি। আর তার অনিষ্ট থেকে ও যে অনিষ্টের ওপর তাকে সৃষ্টি করেছেন তা থেকে আশ্রয় চাই।)। (আবু দাউদ) |
| মিলনের (সহবাসের) দু'আ | শারীরিক মিলনের ইচ্ছা হলে অবশ্যই এই দু'আ পড়ে শুরু করতে হবে: بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا (অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ! আমাদেরকে তুমি শয়তান থেকে দূরে রাখ এবং আমাদেরকে তুমি যা দান করবে (মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবে) তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখ।)। (বুখারি, মুসলিম) |
৩. শারীরিক সম্পর্কের বিষয়ে ইসলামি নির্দেশনা
বিয়ের প্রথম রাতে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা সম্পূর্ণ বৈধ ও হালাল, এটি স্বামী-স্ত্রীর অধিকার। এটি কখন হবে, তা স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক স্বাচ্ছন্দ্য ও সম্মতির ওপর নির্ভর করে। কোনো প্রকার জোর-জবরদস্তি করা যাবে না।
সহবাসের সময় স্ত্রীকে মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত করা (foreplay) রাসূল (সা.)-এর সুন্নাত।
সহবাসের সময় স্বামী-স্ত্রী নিজেদের স্বাচ্ছন্দ্য অনুযায়ী যেকোনো বৈধ ভঙ্গি অবলম্বন করতে পারেন, তবে পায়ুপথে (Anal Sex) মিলন করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
মিলনের পর স্বামী-স্ত্রীকে অবশ্যই গোসল (ফরয গোসল/জানাবাতের গোসল) করে পবিত্র হতে হবে। তবে গোসল করার আগে অজু করে ঘুমানো জায়েয।
মোটকথা, বিয়ের রাতে স্বামী-স্ত্রীর উচিত সব কাজ সুন্নাতের আলোকে শুরু করা এবং পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা ও কোমল আচরণ প্রদর্শন করে একটি সুখী দাম্পত্য জীবনের ভিত্তি স্থাপন করা।
আপনার যদি এই বিষয়ে বা অন্য কোনো ইসলামিক বিষয়ে আরও কিছু জানার থাকে, তবে জিজ্ঞেস করতে পারেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন