স্বামী স্ত্রীর খেদমত

 স্বামী স্ত্রীর খেদমত


স্বামী-স্ত্রীর 'খেদমত' (সেবা) বা দায়িত্ব-কর্তব্যের বিষয়টি ইসলাম ধর্মে ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি একটি পারস্পরিক বিষয়। খেদমত বলতে শুধু একপক্ষের দায়িত্ব বোঝায় না, বরং একে অপরের প্রতি সহানুভূতি, সহযোগিতা এবং যত্ন বোঝায়।

এখানে ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে স্বামী ও স্ত্রীর খেদমত/দায়িত্বগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:


১. স্ত্রীর প্রতি স্বামীর খেদমত ও কর্তব্য (স্বামীর দায়িত্ব)

ইসলাম স্বামীর ওপর আর্থিক এবং মানসিক দায়িত্ব অর্পণ করেছে, যা স্ত্রীর জন্য খেদমত স্বরূপ।

স্বামীর কর্তব্য (স্ত্রীর প্রতি খেদমত)ব্যাখ্যা
ভরণপোষণ (আর্থিক নিরাপত্তা)স্ত্রীর বাসস্থান, খাদ্য, বস্ত্র এবং চিকিৎসা—এই মৌলিক প্রয়োজনগুলো মেটানো স্বামীর জন্য ফরজ (আবশ্যিক)।
উত্তম ব্যবহার ও সহমর্মিতাস্ত্রীর সাথে সর্বদা সুন্দর ও কোমল আচরণ করা। রাসূল (সা.) বলেছেন, "তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম।"
আবাসনের ব্যবস্থাস্ত্রীর জন্য এমন একটি বাসস্থানের ব্যবস্থা করা, যেখানে তিনি নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারেন এবং তাঁর অনুমতি ছাড়া কেউ প্রবেশ করবে না।
মানসিক ও শারীরিক চাহিদা পূরণস্ত্রীর মানসিক শান্তি নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী তাঁর শারীরিক চাহিদা পূরণে সচেষ্ট হওয়া।
ঘরের কাজে সহযোগিতাসাংসারিক কাজে স্ত্রীকে সাধ্যমতো সাহায্য করা। মহানবী (সা.) নিজেও ঘরের কাজ করতেন এবং তাঁর স্ত্রীদের সহযোগিতা করতেন।

২. স্বামীর প্রতি স্ত্রীর খেদমত ও কর্তব্য (স্ত্রীর দায়িত্ব)

স্ত্রীও স্বামীর প্রতি কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন, যা দাম্পত্য জীবনের মূল ভিত্তি।

স্ত্রীর কর্তব্য (স্বামীর প্রতি খেদমত)ব্যাখ্যা
আনুগত্য ও সম্মানস্বামীর বৈধ ও শরীয়তসম্মত আদেশ-নিষেধ মেনে চলা এবং তাঁকে যথাযথ সম্মান করা। (তবে শরীয়তবিরোধী কোনো কাজে স্বামীর আনুগত্য করা যাবে না।)
আত্মীয়তার রক্ষণাবেক্ষণস্বামীর উপস্থিতিতে বা অনুপস্থিতিতে নিজের সতীত্ব ও সম্মান রক্ষা করা।
সম্পদ ও সন্তানের রক্ষণাবেক্ষণস্বামীর অনুপস্থিতিতে তাঁর ধন-সম্পদ ও সন্তানদের যত্ন ও হেফাজত করা। (সূরা নিসা: ৩৪)
স্বামীর মনোরঞ্জনস্বামীর চোখে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলা এবং তাঁর আনন্দ ও সন্তুষ্টির কারণ হওয়া। হাদিসে উত্তম স্ত্রীর গুণ হিসেবে এটি উল্লেখ করা হয়েছে।
ঘরের কাজ পরিচালনাসাধারণত ঘরের অভ্যন্তরীণ কাজগুলো (যেমন: সংসার দেখাশোনা, রান্না, সন্তানের প্রতিপালন) স্ত্রীই করে থাকেন, যদিও এটি তাঁর ওপর ফরজ নয় বরং নৈতিক কর্তব্য ও রেওয়াজ হিসেবে গণ্য হয়। তবে স্বামী-স্ত্রী মিলেমিশে কাজ করাই আদর্শ।

সারসংক্ষেপ:

স্বামী-স্ত্রীর খেদমত মূলত পরস্পরের অধিকার (হক) যথাযথভাবে আদায় করা। ইসলামে স্বামী-স্ত্রীকে পরস্পরের পোশাকস্বরূপ (সূরা বাকারা: ১৮৭) বলা হয়েছে, যার অর্থ হলো তারা একে অপরের ত্রুটি ঢেকে রাখবে, সুরক্ষা দেবে এবং জীবনের সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে।

স্বামী-স্ত্রীর খেদমত বা পারস্পরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসলাম পরিবারকে ভালোবাসা, সহনশীলতা ও কল্যাণের চর্চার কেন্দ্র হিসেবে দেখে। এই খেদমত বা দায়িত্বগুলো স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য, যদিও উভয়ের ভূমিকার ভিন্নতা রয়েছে।

এখানে ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে স্বামী ও স্ত্রীর প্রধান প্রধান খেদমত ও দায়িত্বগুলো তুলে ধরা হলো:

১. স্ত্রীর প্রতি স্বামীর খেদমত ও দায়িত্ব

স্বামী হলেন পরিবারের কর্তা ও দায়িত্বশীল (কুরআন ৪:৩৪), তাই স্ত্রীর প্রতি তাঁর কর্তব্য অনেক ব্যাপক। স্বামীর প্রধান খেদমতগুলো হলো:

কর্তব্যবিবরণ
ভরণ-পোষণ (খোরপোষ)স্ত্রীকে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এবং চিকিৎসার সুব্যবস্থা করা। এটি স্বামীর ফরজ (বাধ্যতামূলক) দায়িত্ব, স্ত্রী সামর্থ্যবান হলেও।
সুন্দর আচরণস্ত্রীর সাথে কোমল ও সুন্দর আচরণ করা। রাসূল (সা.) বলেছেন, "তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর সঙ্গে উত্তম আচরণ করে।"
আবাসন ব্যবস্থাস্ত্রীর জন্য একটি নিরাপদ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ আবাসন বা থাকার ব্যবস্থা করা, যেখানে স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া কেউ প্রবেশ করবে না।
মানসিক ও দৈহিক চাহিদাস্ত্রীর প্রতি আন্তরিক থাকা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী তাঁর মানসিক ও দৈহিক চাহিদা পূরণ করা।
শিক্ষাদান ও নিরাপত্তাস্ত্রীকে দ্বীনের আবশ্যকীয় জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া এবং সকল প্রকার ফিতনা ও পাপ থেকে রক্ষা করার জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।
স্ত্রীর কাজে সহযোগিতাঅসুস্থ হলে বা কষ্টসাধ্য কাজে স্ত্রীকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করা। রাসূল (সা.) নিজেও গৃহস্থালি কাজে সহযোগিতা করতেন।

২. স্বামীর প্রতি স্ত্রীর খেদমত ও দায়িত্ব

স্ত্রীর প্রধান কর্তব্য হলো স্বামীর প্রতি অনুগত থাকা (যা শরীয়ত বিরোধী নয়) এবং তাঁর অনুপস্থিতিতে পরিবারের দায়িত্ব ও সম্পদ রক্ষা করা। স্ত্রীর প্রধান খেদমতগুলো হলো:

কর্তব্যবিবরণ
স্বামীর আনুগত্যবৈধ ও শরীয়তসম্মত সকল কাজে স্বামীর অনুগত থাকা। রাসূল (সা.) বলেছেন, যে নারী স্বামীর আনুগত্য করে, তাঁর জন্য জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে।
সতীত্ব ও সম্মান রক্ষানিজের সতীত্ব রক্ষা করা এবং স্বামীর উপস্থিত-অনুপস্থিত সর্বাবস্থায় তাঁর মান-সম্মান ও ইজ্জত-আব্রুর হেফাজত করা।
সম্পদ সংরক্ষণস্বামীর সম্পদ ও গৃহস্থালির জিনিসের রক্ষণাবেক্ষণ করা।
স্বামীর খেদমতসংসারের দেখাশোনা করা, ঘর-বাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখা এবং সাধ্যমতো স্বামীর সেবা করা।
অনুমতি ছাড়া না বের হওয়াস্বামীর অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া এবং তাঁর অনুমতি ছাড়া অন্য কাউকে (অনাত্মীয় পুরুষ) ঘরে প্রবেশ করতে না দেওয়া।
সন্তুষ্ট রাখাএমনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করা যাতে স্বামী তাঁকে দেখলে আনন্দিত হন এবং স্বামীর আদেশ পালন করা।

মূল কথা

ইসলামে দাম্পত্য জীবন মানে শুধু অধিকার আদায় নয়, বরং পারস্পরিক ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও ত্যাগ-এর বন্ধন। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতি খেদমত করে চললে সেই সংসারে শান্তি ও সুখ স্থায়ী হয়। কুরআন বলেছে, "তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক" (সূরা বাকারা: ১৮৭), যা উভয়ের গভীর সম্পর্ক, নিরাপত্তা ও পরস্পরের প্রতি মুখাপেক্ষিতার ইঙ্গিত দেয়।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন