ভূমিরূপ বিদ্যার জনক কে
ভূমিরূপবিদ্যার জনক হিসেবে সাধারণভাবে দুই জন প্রধান পণ্ডিতকে বিবেচনা করা হয়: উইলিয়াম মরিস ডেভিস এবং জেমস হাটন। এই দুজনের অবদান ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
উইলিয়াম মরিস ডেভিস (William Morris Davis)
অনেক ক্ষেত্রেই আধুনিক ভূমিরূপবিদ্যার জনক হিসেবে উইলিয়াম মরিস ডেভিস-এর নাম উল্লেখ করা হয়। তিনি একজন আমেরিকান ভূগোলবিদ, ভূতত্ত্ববিদ এবং আবহাওয়াবিদ ছিলেন। ভূমিরূপবিদ্যার ক্ষেত্রে তাঁর সবচেয়ে বড় অবদান হলো ভূমিরূপের "ক্ষয়চক্র" (Cycle of Erosion) তত্ত্ব।
ক্ষয়চক্র তত্ত্ব: এই তত্ত্ব অনুসারে, ভূমিরূপের বিবর্তন একটি নির্দিষ্ট চক্রাকার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ঘটে, যেখানে ভূমিরূপগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে (যৌবন, পরিণত ও বার্ধক্য) বিবর্তিত হয়। এই তত্ত্বটি ভূমিরূপের বিবর্তনকে একটি পদ্ধতিগত উপায়ে বোঝার সুযোগ করে দিয়েছে, যা এই বিষয়কে একটি স্বতন্ত্র বৈজ্ঞানিক শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করে।
জেমস হাটন (James Hutton)
অন্যদিকে, জেমস হাটন-কে প্রায়শই আধুনিক ভূতত্ত্বের জনক বলা হয়। তবে, তাঁর কাজ ভূমিরূপবিদ্যার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি একত্ববাদ বা একরূপতা নীতি (Principle of Uniformitarianism)-এর প্রবক্তা।
একত্ববাদ নীতি: এই নীতি অনুযায়ী, বর্তমানে যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলো কাজ করছে (যেমন: বৃষ্টিপাত, নদীপ্রবাহ, বায়ুপ্রবাহ), অতীতেও একই প্রক্রিয়াগুলো একইরকমভাবে কাজ করেছে। তাঁর এই ধারণা ভূমিরূপবিদ্যার গবেষণার ভিত্তি স্থাপন করে, কারণ এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা অতীতের ভূমিরূপ গঠন প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হন।
ভূমিরূপবিদ্যার জনক হিসেবে সাধারণত উইলিয়াম মরিস ডেভিস-কে (William Morris Davis) বিবেচনা করা হয়। যদিও ভূমিরূপবিদ্যার ধারণা অনেক প্রাচীন, তবে ডেভিসই প্রথম এই বিষয়টিকে একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত রূপ দেন।
প্রধান অবদান
ক্ষয়চক্রের ধারণা (Cycle of Erosion): ডেভিস ভূমিরূপের বিবর্তনকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করে একটি ক্ষয়চক্রের মডেল উপস্থাপন করেন। এই তিনটি পর্যায় হলো: যৌবন, পরিণত এবং বার্ধক্য। তাঁর মতে, প্রতিটি ভূমিরূপ এই চক্রের মধ্য দিয়ে পরিবর্তিত হয়। এই মডেলটি দীর্ঘদিন ধরে ভূমিরূপবিদ্যা অধ্যয়নের মূল ভিত্তি ছিল।
ভূমিরূপের গঠন, প্রক্রিয়া ও পর্যায় (Structure, Process, and Stage): ডেভিস ভূমিরূপ অধ্যয়নের জন্য একটি ত্রিপক্ষীয় কাঠামো প্রস্তাব করেন। এর মাধ্যমে তিনি বোঝান যে, কোনো ভূমিরূপের বর্তমান অবস্থা তার ভূতাত্ত্বিক গঠন, তার উপর ক্রিয়াশীল প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া (যেমন নদী, হিমবাহ) এবং তার বিবর্তনের পর্যায় (যৌবন, পরিণত, বার্ধক্য) দ্বারা নির্ধারিত হয়।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব
ডেভিসের তত্ত্বের পাশাপাশি আরো অনেক বিজ্ঞানী এই ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। জার্মান ভূবিজ্ঞানী ওয়ালথার পেঙ্ক (Walther Penck) ভূমিরূপের বিবর্তনের উপর ডেভিসের ক্ষয়চক্রের ধারণার বিকল্প একটি তত্ত্ব দেন। তার মতে, ভূমিরূপের বিবর্তন ভূমির উত্থান (uplift) এবং ক্ষয় (erosion) এর আপেক্ষিক হারের উপর নির্ভরশীল। এই দুই বিজ্ঞানীর তত্ত্ব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলে, যা ভূমিরূপবিদ্যাকে আরও সমৃদ্ধ করে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন