ঈশ্বর গুপ্তের মতে পক্ষী দলের প্রতিষ্ঠাতা কে
ঈশ্বর গুপ্তের মতে পক্ষী দলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জগৎ শেঠ।
১৮৩৬ সালে ঈশ্বর গুপ্তের সম্পাদনায় প্রকাশিত 'সংবাদ প্রভাকর' পত্রিকায় তিনি এই মত প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি লেখেন যে, বাংলার নবাব মুর্শিদ কুলি খানের সময় থেকেই এই "পক্ষী দল" বা "পক্ষী সম্প্রদায়ের" উদ্ভব হয়েছিল এবং জগৎ শেঠ ছিলেন এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক।
তবে আধুনিক ঐতিহাসিকরা এই তত্ত্বকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না। তাদের মতে, উনিশ শতকে কলকাতার সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিতর্কের একটি অংশ হিসেবে এই "দল"গুলো (যেমন - পক্ষী দল, ভারতচন্দ্র দল, গোপী দল ইত্যাদি) গঠিত হয়েছিল, এবং এর পেছনে কোনো একক ব্যক্তির ভূমিকা ছিল না, বরং বিভিন্ন সামাজিক ও সাহিত্যিক গোষ্ঠী এর জন্ম দিয়েছিল। ঈশ্বর গুপ্তের এই বর্ণনা মূলত তৎকালীন কলকাতার সমাজ ও সংস্কৃতির একটি চিত্র তুলে ধরে।
ঈশ্বর গুপ্তের মতে পক্ষী দলের প্রতিষ্ঠাতা হলেন রামনিধি গুপ্ত।
রামনিধি গুপ্ত, যিনি নিধু বাবু নামে সমধিক পরিচিত, অষ্টাদশ শতকের একজন বিখ্যাত টপ্পা সঙ্গীত রচয়িতা ও গায়ক ছিলেন। ঈশ্বর গুপ্ত তাঁর সম্পাদিত 'সংবাদ প্রভাকর' পত্রিকায় নিধু বাবুর জীবনী ও সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে 'পক্ষী দল' নামে একটি উপদলের উল্লেখ করেন, যার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি নিধু বাবুকে চিহ্নিত করেন।
'পক্ষী দল' বলতে নিধু বাবুর অনুসারী ও শিষ্যদের একটি গোষ্ঠী বোঝানো হয়েছে, যারা তাঁর টপ্পা গানের ধারা অনুসরণ করতেন এবং তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে গান রচনা করতেন।
ঈশ্বর গুপ্তের মতে পক্ষী দলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রামমোহন রায়।
তিনি তার সম্পাদিত সংবাদপত্রে রামমোহন রায়ের সমাজ সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ডকে ব্যঙ্গ করে 'পক্ষী দল' বা 'ইয়ং বেঙ্গল' হিসেবে অভিহিত করেন। ঈশ্বর গুপ্তের মতে, রামমোহন ও তার অনুসারীরা, যারা পশ্চিমা শিক্ষা ও আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিল, তারা ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিরোধী। তাই তিনি তাদেরকে ব্যঙ্গ করে 'পক্ষী দল' নামে ডাকতেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন