গল্প ডিভোর্স ফিলিপ সরকার

 গল্প ডিভোর্স ফিলিপ সরকার


"ডিভোর্স" (Divorce) শিরোনামে ফিলিপ সরকার-এর লেখা একটি কাল্পনিক গল্প নিচে দেওয়া হলো:


ডিভোর্স

— ফিলিপ সরকার

টেবিলের উপর পড়ে থাকা সাদা কাগজটার দিকে তাকিয়েছিল রজত। নীল কালির দুটো স্বাক্ষর— রজত আর অনিন্দিতা। গতকালও এই দুটো নামের মাঝে একটা অদৃশ্য বন্ধন ছিল, যা আজ এই সরকারি কাগজপত্রের মাধ্যমে ছিন্ন হলো। গত তেরো বছরের পথচলা, ঘর বাঁধা, স্বপ্ন দেখা—সবকিছুকে একটা "পূর্ণচ্ছেদ" দিয়ে থামিয়ে দেওয়া হলো।

বাইরে তখন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, আর রজতের ভেতরের শূন্যতাটাও যেন ভারী নীরবতায় ভরে উঠেছে। এই নীরবতা কোনো ঝগড়া বা তর্কের ফল নয়, বরং দীর্ঘদিনের জমে থাকা বোধগম্যতার অভাবের পরিণতি। তাদের সম্পর্কটা ভালোবাসার অভাবে ভাঙেনি, ভেঙেছে সময়ের সাথে সাথে তৈরি হওয়া এক অদৃশ্য দূরত্বে। পাশাপাশি থেকেও তারা দুজন দুজনকে হারিয়ে ফেলেছিল।

রজতের মনে পড়ল তাদের বিয়ের দিনের প্রতিজ্ঞাগুলো। 'সুখে-দুঃখে সর্বদা পাশে থাকব'—এই কথাগুলো আজ কতটা ফাঁপা শোনায়। অথচ একসময় এই শব্দগুলোই ছিল তাদের জীবনের ভিত্তি। সেবার যখন প্রথম অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিল অনিন্দিতা, রজত সারা রাত জেগেছিল তার পাশে। সেই স্পর্শ, সেই নির্ভরতা—কোথায় গেল সব?

অনিন্দিতা নিঃশব্দে ঘর ছেড়ে যাওয়ার আগে একবারও ফিরে তাকাল না। তার চোখে ছিল এক গভীর বিষাদ, যা মুক্তির আনন্দের চেয়েও বেশি ভারী। সে তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন কাজটি শেষ করে যেন ক্লান্ত শরীর নিয়ে হেঁটে চলেছে এক নতুন অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে।

কফির মগ হাতে রজত জানালার কাছে গেল। দেয়ালের দিকে তাকিয়ে দেখল, তাদের পুরোনো বিয়ের ছবিটা এখনও ঝোলানো। সেই হাসিমুখ, সেই ঝলমলে দিন। এখন সেই ঘরটা কেবলই স্মৃতির ভারে ন্যুব্জ এক কাঠামো

সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবল, ডিভোর্স মানে সব শেষ নয়। ডিভোর্স মানে সম্পর্ক শেষ করা, কিন্তু জীবন শেষ করা নয়। এই বিচ্ছেদ হয়তো তাদের দুজনকে আরও ভালো থাকার সুযোগ দেবে—একসাথে না থেকেও নিজেদের মতো করে বাঁচতে শেখাবে। এই কাগজে সই করার মাধ্যমে তারা দুজনেই স্বীকার করে নিল যে, তারা 'আমরা' হয়ে থাকতে পারেনি, কিন্তু অন্তত 'আমি' হিসেবে ভালো থাকার অধিকার তাদের আছে।

বৃষ্টি তখন থেমে গেছে। রজত আস্তে করে কফির মগটা টেবিলে রাখল। এখন থেকে নতুন ভোর, নতুন নিয়ম। শূন্যতা আছে, তবে সেটার মধ্যে দিয়ে নতুন আলো এসে পড়ার একটা ক্ষীণ আশাও যেন তার মনকে ছুঁয়ে গেল।


গল্পটি কেমন লাগল? আপনি যদি চান, আমি অন্য কোনো বিষয় বা লেখকের গল্প লিখতে পারি।

"গল্প ডিভোর্স" (Divorce Story) নামে ফিলিপ সরকারের লেখা কোনো সুনির্দিষ্ট বা বহুল পরিচিত গল্পের তথ্য আমার কাছে নেই। তবে, আপনার অনুরোধ অনুযায়ী "ডিভোর্স" থিম নিয়ে ফিলিপ সরকার-এর লেখা একটি কাল্পনিক গল্প নিচে তুলে ধরা হলো:


ডিভোর্স

— ফিলিপ সরকার

আজ টেবিলের ওপর রাখা তালাকের কাগজ দুটো যেন শেষ পেরেক। সাদা কাগজের বুক জুড়ে নীল কালির দুটো স্বাক্ষর—রজত আর অনিন্দিতা। এরাই ছিল প্রায় পনেরো বছরের 'আমরা'।

রজত জানালার ধারে দাঁড়িয়ে। বাইরে শীতের এক বিষণ্ন দুপুর, আকাশ ধূসর। এই ধূসরতা যেন আজ তাদের সম্পর্কের ভেতরের রঙ। কাল সকাল থেকে সে আর কারো স্বামী নয়। আর অনিন্দিতা নয় তার স্ত্রী। এই মুক্তি, নাকি এই বিচ্ছেদ—কোনটা বেশি ভারি, রজত বুঝে উঠতে পারল না।

তাদের মাঝে কোনো তীব্র ঝগড়া, প্রতারণা বা অন্য কোনো নাটকীয়তা ছিল না। সম্পর্কটা মরতে শুরু করেছিল অতি নীরবে, আলতো অবহেলায়। একসময় যে ভালোবাসা ছিল উষ্ণতার উৎস, তা পরিণত হলো অভ্যাসে। অভ্যাসের ঘর ভেঙে নতুন করে বাঁচা যায় না, শুধু টেনে নিয়ে যাওয়া যায়। শেষ পর্যন্ত তারা দুজনেই অনুভব করল—এই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত ঘৃণার নয়, বরং পরস্পরের প্রতি থাকা শেষ সম্মানটুকু

অনিন্দিতা তার ট্রলি ব্যাগটা নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়ালো। একবারও রজতের দিকে তাকালো না। হয়তো তার চোখেও ছিল মুক্তির আনন্দ, যা ঢেকে ছিল গভীর বিষাদের আস্তরণে।

"আমি চললাম," শান্ত, প্রায় ফিসফিস করে বলল অনিন্দিতা।

"সাবধানে যেও," গলাটা কেঁপে উঠল রজতের। এই শব্দ দুটোই শেষ। আর কোনো বাক্য বিনিময়ের প্রয়োজন নেই। তাদের সমস্ত কথা যেন ঐ আইনি কাগজে শেষ হয়ে গেছে।

অনিন্দিতা বেরিয়ে গেল। নিঃশব্দে ফ্ল্যাটের দরজায় তালা পড়ল। সেই তালা যেন শুধু দরজায় পড়ল না, পড়ল রজতের হৃদয়ের এক নিভৃত কোণে। সে ফিরে এসে তালাকের কাগজ দুটো হাতে নিল।

রজতের মনে পড়ল তাদের বিয়ের দিনটি। ঝলমলে হাসি, বাজির শব্দ আর মন্ত্রপাঠ—সেদিন তারা শপথ নিয়েছিল 'মৃত্যু পর্যন্ত' একসাথে থাকার। অথচ 'মৃত্যু' নয়, একটি সাধারণ সরকারি দলিলই সেই শপথের ইতি টেনে দিল।

কাগজ দুটো বুকের কাছে চেপে ধরে সে অনুভব করল—ডিভোর্স মানে সব শেষ নয়। ডিভোর্স মানে একটি ভুল অধ্যায়কে শ্রদ্ধাভরে বন্ধ করা। এই শূন্যতা কষ্টের হলেও, এতে এক নতুন সম্ভাবনার জন্ম আছে। হয়তো এই বিচ্ছেদ তাদের দু’জনকেই সেই সুযোগ দেবে, যা তারা একসাথে থেকে পাচ্ছিল না: নিজেকে খুঁজে পাওয়ার সুযোগ।

রজত ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস ফেলল। সে জানে, এই বিচ্ছেদের বেদনা ধীরে ধীরে কমবে। এখন থেকে শুধু সামনের দিকে তাকানো। এই ডিভোর্স ধ্বংস নয়, বরং এক নতুন, একাকী জীবনের সাহসী সূচনা।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন