স্ত্রী যদি স্বামীকে সময় না দেয়
যদি কোনো স্ত্রী তার স্বামীকে পর্যাপ্ত সময় না দেন, তবে এটি দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে। ইসলাম এবং সাধারণ দাম্পত্য জীবনে এই সমস্যার সমাধান খোঁজা এবং এর পেছনে থাকা কারণগুলো বোঝা জরুরি।
১. ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে স্ত্রীর দায়িত্ব
ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ভিত্তি হলো পারস্পরিক অধিকার ও কর্তব্য। এই ক্ষেত্রে স্ত্রীর কিছু দায়িত্ব রয়েছে:
স্বামীর প্রতি খেয়াল রাখা: স্বামীকে সময় দেওয়া, তার আরামের ব্যবস্থা করা এবং তার মানসিক চাহিদা পূরণে সচেষ্ট থাকা স্ত্রীর অন্যতম দায়িত্ব।
একান্ত সময়: কোনো শরীয়তসম্মত কারণ না থাকলে, স্ত্রী স্বামীর সাথে একান্ত সময় কাটাতে বা তাকে সময় দিতে অস্বীকার করতে পারেন না। এটি দাম্পত্য সম্পর্কের পবিত্রতা ও বন্ধন ধরে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ভারসাম্য রক্ষা: স্ত্রীকে অবশ্যই ঘরোয়া কাজ, চাকরি বা অন্য যেকোনো ব্যস্ততার মাঝে স্বামীর জন্য সময় বের করার চেষ্টা করতে হবে।
তবে, এখানে মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, স্বামীকেও স্ত্রীর প্রতি ন্যায়পরায়ণ হতে হবে এবং তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
২. সমস্যা সমাধানের উপায়
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সময় না দেওয়ার সমস্যাটি সাধারণত Communication Gap (যোগাযোগের ঘাটতি) বা ভুল বোঝাবুঝির কারণে হয়। সমাধান করতে স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই সচেষ্ট হওয়া উচিত:
ক. খোলামেলা আলোচনা (Communication)
শান্তভাবে কথা বলুন: স্বামী স্ত্রীকে আক্রোশ বা অভিযোগের স্বরে নয়, বরং ভালোবাসা ও উদ্বেগের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করুন। বলুন যে আপনি তাঁর সাথে আরও সময় কাটাতে চান।
কারণ অনুসন্ধান: কেন স্ত্রী সময় দিতে পারছেন না, সেই কারণটি বোঝার চেষ্টা করুন। হতে পারে তিনি অতিরিক্ত কাজের চাপে আছেন, অসুস্থ বা কোনো ব্যক্তিগত মানসিক উদ্বেগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।
খ. ব্যস্ততা ভাগ করে নেওয়া
সময় ব্যবস্থাপনায় সহায়তা: যদি স্ত্রী ঘরের কাজ বা সন্তানের পরিচর্যার কারণে ব্যস্ত থাকেন, তবে স্বামী তাঁকে সেই কাজগুলোতে সহায়তা করতে পারেন, যাতে স্ত্রীর হাতে কিছুটা অতিরিক্ত সময় থাকে।
ব্যস্ততা সীমিত করা: যদি স্ত্রীর ব্যস্ততা অযৌক্তিক বা অপ্রয়োজনীয় মনে হয় (যেমন অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া, অপ্রয়োজনীয় আড্ডা), তবে স্বামী-স্ত্রী মিলে রুটিন ঠিক করে সেই ব্যস্ততা সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
গ. গুণগত সময় (Quality Time)
একসাথে কাজ: প্রতিদিন অন্তত ২০-৩০ মিনিটের জন্য এমন কিছু করুন যা দুজনেই উপভোগ করেন (যেমন: একসাথে চা পান করা, নামাজ পড়া, হাঁটতে যাওয়া বা ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করা)। এখানে পরিমাণে কম হলেও যেন তা মানসম্মত হয়।
'ডেট' বা 'আউটডোর টাইম': সপ্তাহে একদিন শুধু স্বামী-স্ত্রীর জন্য নির্দিষ্ট করে রাখতে পারেন—সন্তান বা অন্য কাউকে ছাড়া দু'জনের একান্ত সময়।
ঘ. পারিবারিক বা ধর্মীয় পরামর্শ
যদি আলোচনা বা চেষ্টার পরও সমস্যার সমাধান না হয়, তবে স্বামী-স্ত্রী উভয় পক্ষের নির্ভরযোগ্য মুরব্বি (অভিভাবক) বা একজন বিজ্ঞ আলেম-এর পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। একজন তৃতীয় পক্ষের নিরপেক্ষ পরামর্শ অনেক সময় সমস্যার মূল কারণ উন্মোচন করতে সাহায্য করে।
দাম্পত্য জীবন সফল করার জন্য উভয়কে ছাড় দিতে হয় এবং একে অপরের মানসিক চাহিদা মেটাতে সচেষ্ট থাকতে হয়।
যদি কোনো স্ত্রী তার স্বামীকে পর্যাপ্ত সময় না দেন, তবে ইসলামী শরীয়ত এবং দাম্পত্য সম্পর্কের দৃষ্টিকোণ থেকে এর সমাধানে কিছু বিষয় বিবেচনা করা উচিত।
ইসলামী আইনে, স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের প্রতি কিছু অধিকার ও কর্তব্য রয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো:
মানসিক ও আবেগিক অধিকার: স্বামী-স্ত্রী একে অপরের কাছে মানসিক প্রশান্তি, ভালোবাসা এবং সঙ্গ পাওয়ার অধিকার রাখেন। একে অপরকে সময় দেওয়া এই অধিকার পূরণের জন্য অপরিহার্য।
স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য: স্ত্রীকে তার স্বামীর বৈধ চাহিদাগুলো পূরণ করতে এবং তাঁর সাথে সদ্ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।
১. স্বামীর করণীয়: সমস্যা চিহ্নিত করা ও আলোচনা
স্বামী এই সমস্যাটি সমাধানের জন্য প্রথমে ধৈর্য ও আলোচনার পথ অবলম্বন করবেন:
ক. কারণ খুঁজে বের করুন
স্ত্রী কেন সময় দিতে পারছেন না, তার মূল কারণ জানতে চেষ্টা করুন। এর কয়েকটি সাধারণ কারণ থাকতে পারে:
কর্মজীবনের চাপ: স্ত্রী কি বাইরে চাকরি করেন? কাজের চাপ খুব বেশি?
পারিবারিক দায়িত্ব: ঘরের কাজ, বাচ্চাদের দেখাশোনা বা অন্য কোনো পারিবারিক দায়িত্বে কি তিনি অতিরিক্ত ব্যস্ত?
মানসিক বা শারীরিক সমস্যা: তিনি কি কোনো মানসিক চাপ বা অসুস্থতায় ভুগছেন?
যোগাযোগের ঘাটতি: স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে কি না?
খ. শান্তিপূর্ণ আলোচনা (Best Approach)
দোষারোপ নয়: স্ত্রীকে দোষারোপ না করে বা অভিযোগ না করে, ভালোবাসা ও উদ্বেগ নিয়ে কথা বলুন।
উদ্বেগ প্রকাশ: বলুন, "আমি তোমার সাথে আরও বেশি সময় কাটাতে চাই। আমি মনে করি আমাদের সম্পর্কের জন্য এটি খুব দরকার।"
সমাধানের প্রস্তাব: তাঁর দায়িত্ব বা কাজের চাপ কমাতে আপনি কীভাবে সাহায্য করতে পারেন, তার প্রস্তাব দিন। যেমন—ঘরের কাজে সাহায্য করা বা কাজের সময়গুলোকে ভাগ করে নেওয়া।
২. স্ত্রীর করণীয়: সময়কে অগ্রাধিকার দেওয়া
স্ত্রীরও উচিত দাম্পত্য সম্পর্কের গুরুত্ব অনুধাবন করে তার সময়কে সঠিকভাবে পরিচালনা করা:
সময়ের সদ্ব্যবহার: স্ত্রী যদি খুব ব্যস্ত থাকেন, তবে দিনের নির্দিষ্ট কিছু সময় (যেমন—রাতের খাবার বা ঘুমাতে যাওয়ার আগে) শুধুমাত্র স্বামীর জন্য বরাদ্দ করতে পারেন। গুণগত সময় (Quality Time) পরিমাণের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
স্বামীর প্রতি মনোযোগ: যখন তাঁরা একসাথে থাকবেন, তখন অন্য সব কাজ (যেমন—ফোন দেখা বা অন্যমনস্ক থাকা) বাদ দিয়ে স্বামীর প্রতি মনোযোগ দেওয়া উচিত।
পারস্পরিক সহযোগিতা: স্বামী যদি কাজে সাহায্য করতে চান, তবে স্ত্রীর উচিত হবে সেই সহযোগিতা গ্রহণ করা।
৩. সমস্যা সমাধানের চূড়ান্ত পদক্ষেপ
যদি আলোচনা এবং সমঝোতার পরেও স্ত্রী ইচ্ছাকৃতভাবে স্বামীকে সময় দেওয়া বা তাঁর চাহিদা পূরণের ব্যাপারে অবহেলা করতে থাকেন, তবে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে। এই ক্ষেত্রে:
পারিবারিক সহায়তা: উভয় পরিবারের অভিভাবক বা অভিজ্ঞ মুরুব্বিদের সাথে কথা বলুন। তাঁরা স্বামী-স্ত্রীকে একসাথে থাকার এবং সমাধানের জন্য মধ্যস্থতা করতে পারেন।
পরামর্শ গ্রহণ: যদি সম্পর্ক খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে ধর্মীয় আলেম বা দাম্পত্য সম্পর্ক বিশেষজ্ঞের (Counselor) পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
মনে রাখবেন, দাম্পত্য জীবন পারস্পরিক বোঝাপড়া, শ্রদ্ধা এবং একে অপরের জন্য সময় ও প্রচেষ্টা উৎসর্গ করার মাধ্যমেই সুন্দর হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন