ডিভোর্স সম্পর্কে জানতে চাই
ডিভোর্স বা তালাক হলো আইনসম্মত উপায়ে স্বামী-স্ত্রীর বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রক্রিয়া। বাংলাদেশে এই প্রক্রিয়াটি মূলত ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ (Muslim Family Laws Ordinance, 1961) এবং পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়।
ডিভোর্স সম্পর্কে আপনার জানার সুবিধার জন্য এর প্রকারভেদ, মূল নিয়ম এবং প্রক্রিয়া নিচে তুলে ধরা হলো:
১. ডিভোর্সের প্রকারভেদ
মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী, কে ডিভোর্স দিচ্ছেন, তার ওপর ভিত্তি করে প্রধানত তিন ধরনের তালাক হয়ে থাকে:
| প্রকারভেদ | কে দিচ্ছেন? | আইনি ভিত্তি |
| তালাক-এ-তাফউইজ (তালাকের ক্ষমতা অর্পণ) | স্ত্রী | বিবাহের সময় কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা দেওয়া থাকলে। এটি স্ত্রীর পক্ষ থেকে দেওয়া সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। |
| তালাক-উল-সুন্নত (স্বামী কর্তৃক) | স্বামী | স্বামী যেকোনো যুক্তিসঙ্গত কারণে সরাসরি তালাক ঘোষণা করতে পারেন। |
| খুলা/মুবারাত (পারস্পরিক সম্মতি) | স্বামী ও স্ত্রী উভয়ই | স্বামী-স্ত্রী উভয়ের পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার ভিত্তিতে বিচ্ছেদ। |
| আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ | স্ত্রী | যদি স্ত্রীকে কাবিননামায় তালাকের ক্ষমতা দেওয়া না থাকে, তবে নির্দিষ্ট আইনগত কারণ দেখিয়ে (যেমন: ভরণপোষণ না দেওয়া, শারীরিক নির্যাতন, স্বামীর চার বছর নিখোঁজ থাকা ইত্যাদি) স্ত্রী পারিবারিক আদালতে তালাকের ডিক্রি চেয়ে মামলা করতে পারেন। |
২. ডিভোর্সের মূল প্রক্রিয়া (যে নিয়মগুলো মানতেই হবে)
ডিভোর্স যেই দিক থেকেই দেওয়া হোক না কেন, এটি কার্যকর করার জন্য নিচের ধাপগুলো বাধ্যতামূলক:
ক. লিখিত নোটিশ জারি
তালাক ঘোষণার পর যিনি তালাক দিচ্ছেন, তাকে অবিলম্বে নিম্নলিখিত তিনটি পক্ষকে লিখিত নোটিশ পাঠাতে হবে:
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান / পৌরসভার মেয়র / সিটি কর্পোরেশনের মেয়র (স্ত্রীর স্থায়ী ঠিকানার)।
তালাক গ্রহীতাকে (অপর পক্ষকে)।
খ. সালিশি পরিষদ গঠন
চেয়ারম্যান/মেয়র নোটিশ পাওয়ার পর ৩০ দিনের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমঝোতার উদ্দেশ্যে একটি সালিশি পরিষদ (Conciliation Council) গঠন করবেন এবং তাদের আপসের জন্য ডাকবেন।
গ. কার্যকারিতা (৯০ দিন অপেক্ষা)
যদি ৯০ দিনের মধ্যে আপস না হয় এবং কোনো পক্ষ নোটিশ প্রত্যাহার না করে, তবে নোটিশ পৌঁছানোর তারিখ থেকে ঠিক ৯০ দিন পর তালাকটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আইনত কার্যকর হয়ে যায়।
দ্রষ্টব্য: স্ত্রী যদি গর্ভবতী থাকেন, তবে গর্ভকাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হয় না।
৩. ডিভোর্সের পর স্ত্রীর আইনগত প্রাপ্য
তালাক কার্যকর হওয়ার পর একজন স্ত্রী নিম্নলিখিত অধিকারগুলো আইনত প্রাপ্য:
দেনমোহর: কাবিননামায় লিখিত বকেয়া দেনমোহর (তাৎক্ষণিক বা বিলম্বিত—যা বকেয়া ছিল) সম্পূর্ণ পরিশোধ করতে স্বামী আইনত বাধ্য।
ভরণপোষণ:
ইদ্দতকালের ভরণপোষণ: তালাক কার্যকর হওয়ার আগে পর্যন্ত (অর্থাৎ নোটিশ পৌঁছানোর পর থেকে ৯০ দিন বা গর্ভকাল শেষ হওয়া পর্যন্ত) স্ত্রী তার স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য ভরণপোষণ পাবেন।
সন্তানের ভরণপোষণ: সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত বাবা তার সন্তানের ভরণপোষণ দিতে আইনত বাধ্য, সন্তান মায়ের কাছে থাকুক বা বাবার কাছে।
ডিভোর্সের প্রক্রিয়াটি যেহেতু একটি আইনি বিষয়, তাই যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে একজন পারিবারিক আইন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া সবসময়ই নিরাপদ।
ডিভোর্সের কোন দিকটি বা কোন প্রকারটি সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে চান?
ডিভোর্স বা বিবাহবিচ্ছেদ (তালাক) হলো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক আইনগতভাবে বিচ্ছিন্ন করার প্রক্রিয়া। এটি একটি সংবেদনশীল ও জটিল আইনি বিষয়।
আপনি ডিভোর্স সম্পর্কে যেহেতু জানতে চেয়েছেন, নিচে বাংলাদেশের মুসলিম পারিবারিক আইন, ১৯৬১ অনুযায়ী এর প্রকারভেদ এবং প্রক্রিয়া সম্পর্কে মূল তথ্যগুলো তুলে ধরা হলো:
১. ডিভোর্সের প্রকারভেদ
মুসলিম আইনে সাধারণত তিন ধরনের বিবাহবিচ্ছেদ দেখা যায়:
| প্রকারভেদ | কে ডিভোর্স দেন | শর্ত |
| তালাক (Talaq) | স্বামী (একতরফাভাবে) | স্বামী যেকোনো যুক্তিসংগত কারণে স্ত্রীকে তালাক দিতে পারেন। |
| তালাক-এ-তাফويض (Talaq-e-Tafwid) | স্ত্রী | বিয়ের চুক্তিতে (কাবিননামা বা নিকাহনামার ১৮ নম্বর কলামে) যদি স্বামীকে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা স্ত্রীকে দেওয়া থাকে। |
| খুলা/মুবারাত (Khula/Mubara'at) | পারস্পরিক সম্মতি | স্বামী-স্ত্রী উভয়েই যখন আর একসাথে থাকতে চান না। (খুলা-তে স্ত্রী উদ্যোগী হন, মুবারাত-এ উভয়েই)। |
| আদালতের মাধ্যমে | স্ত্রী | যদি কাবিননামায় স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা দেওয়া না থাকে, তবে স্ত্রী নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদের ডিক্রি চাইতে পারেন। |
২. ডিভোর্স দেওয়ার আইনি প্রক্রিয়া (তালাক ও তালাক-এ-তাফويض)
স্বামী বা স্ত্রী (তালাকের ক্ষমতাপ্রাপ্ত) যখন ডিভোর্স দেন, তখন প্রক্রিয়াটি নিম্নোক্ত ধাপগুলো মেনে চলতে হয়:
ধাপ ১: লিখিত নোটিশ জারি
তালাক ঘোষণার পর যিনি তালাক দিচ্ছেন, তাঁকে যত দ্রুত সম্ভব লিখিত নোটিশ পাঠাতে হবে তিনটি ঠিকানায়:
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান / পৌরসভার মেয়র / সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে। (স্ত্রীর স্থায়ী ঠিকানার)
তালাক গ্রহীতাকে (অপর পক্ষকে)।
সাধারণত, নোটিশটি রেজিস্টার্ড ডাকযোগে (প্রাপ্তি স্বীকার সহ) বা কাজীর (নিকাহ রেজিস্ট্রার) মাধ্যমে পাঠানো হয়।
ধাপ ২: সালিশি পরিষদ গঠন
চেয়ারম্যান/মেয়র নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী উভয়কে ডেকে একটি সালিশি পরিষদ (Conciliation Council) গঠন করেন। এই পরিষদের উদ্দেশ্য হলো ৯০ দিনের মধ্যে আপস বা সমঝোতার চেষ্টা করা।
ধাপ ৩: ডিভোর্স কার্যকর হওয়া
নোটিশ পাওয়ার তারিখ থেকে ৯০ দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না।
যদি এই ৯০ দিনের মধ্যে সালিশি পরিষদে কোনো সমঝোতা না হয় এবং কোনো পক্ষ নোটিশটি প্রত্যাহার না করে, তবে ৯০ দিন পর ডিভোর্সটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর বলে গণ্য হবে।
স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে, সন্তান ভূমিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হয় না।
৩. ডিভোর্সের পর আর্থিক ও সন্তানের অধিকার
তালাক কার্যকর হওয়ার পর কিছু আইনি অধিকার ও দায়িত্ব বর্তায়:
দেনমোহর: তালাক কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে স্ত্রীকে তাঁর সম্পূর্ণ দেনমোহর (Prompt and Deferred Dower) পরিশোধ করতে স্বামী আইনত বাধ্য।
ভরণপোষণ: ডিভোর্স প্রক্রিয়া চলাকালীন (ইদ্দতকালে) এবং সন্তানের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত সন্তানের ভরণপোষণ দিতে স্বামী বাধ্য।
সন্তানের জিম্মা: ডিভোর্সের পর সন্তান সাধারণত একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত মায়ের কাছে (Hizanat) থাকে। তবে বাবা সন্তানের আইনগত অভিভাবক (Legal Guardian) থাকেন এবং বাবা ভরণপোষণ দিতে বাধ্য।
যদি আপনি ডিভোর্স নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে জানতে চান (যেমন: দেনমোহর বা সন্তানের অভিভাবকত্ব), তবে তা জানাতে পারেন। যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই একজন পারিবারিক আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া উচিত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন