ডিভোর্স আর তালাক কি এক

 ডিভোর্স আর তালাক কি এক


ব্যাপক অর্থে, ডিভোর্স (Divorce) এবং তালাক (Talaq) একই জিনিসকে বোঝায়—তা হলো বিবাহ-বিচ্ছেদ (Dissolution of Marriage)। তবে, বাংলাদেশের আইনি ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে এই দুটি শব্দের মধ্যে সামান্য পার্থক্য রয়েছে, যা পদ্ধতি ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

সংক্ষেপে পার্থক্যটি হলো:

বৈশিষ্ট্যতালাক (Talaq)ডিভোর্স (Divorce)
উৎপত্তি/ব্যবহারআরবি শব্দ। মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ধর্মীয় ও আইনি পরিভাষা।ইংরেজি শব্দ। বিবাহ-বিচ্ছেদ বা আইনি বিচ্ছেদের সাধারণ পরিভাষা।
কার জন্য প্রযোজ্যপ্রধানত মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য প্রযোজ্য।সব ধর্মাবলম্বী (মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ) এবং স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টের আওতায় সবার জন্য প্রযোজ্য।
পদ্ধতিএটি মূলত স্বামী কর্তৃক একতরফা ঘোষণা (তালাক উচ্চারণ বা লেখা), যা পরে মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ অনুযায়ী নোটিশের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।এটি একটি সাধারণ আইনি প্রক্রিয়া, যা সাধারণত আদালতের ডিক্রির মাধ্যমে অথবা (মুসলিমদের ক্ষেত্রে) তালাকের আইনি পদ্ধতি অনুসরণ করে কার্যকর হয়।

বিস্তারিত ব্যাখ্যা:

১. তালাক (Talaq)

  • তালাক শব্দটি ইসলাম ধর্মীয় আইন (শরিয়ত) থেকে এসেছে। এর আভিধানিক অর্থ হলো "বিচ্ছিন্ন করা" বা "ত্যাগ করা"।

  • বাংলাদেশে মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ (Muslim Family Laws Ordinance, 1961) অনুযায়ী তালাকের প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়।

  • পদ্ধতি:

    • স্বামী একতরফাভাবে তালাক ঘোষণা করতে পারেন।

    • স্ত্রীকে যদি কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা (তালাক-ই-তাফويض) দেওয়া থাকে, তবে তিনিও স্বামীকে তালাক দিতে পারেন।

    • উভয় ক্ষেত্রেই, ঘোষণার পর চেয়ারম্যান/মেয়রের কাছে লিখিত নোটিশ পাঠানো বাধ্যতামূলক।

২. ডিভোর্স বা বিবাহ-বিচ্ছেদ (Divorce)

  • ডিভোর্স হলো বিবাহ-বিচ্ছেদের একটি সাধারণ (General) এবং আইনি (Legal) শব্দ। এটি যেকোনো ধর্ম বা চুক্তির অধীনে বিবাহিত সম্পর্কের সমাপ্তিকে বোঝায়।

  • কোর্ট/আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ:

    • হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী এবং যারা বিশেষ বিবাহ আইন (Special Marriage Act)-এর অধীনে বিবাহ করেছেন, তাদের ক্ষেত্রে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য অবশ্যই পারিবারিক আদালতে মামলা (Judicial Divorce) করতে হয় এবং আদালতের ডিক্রির মাধ্যমে তা কার্যকর হয়।

  • মুসলিম স্ত্রীর পক্ষ থেকে বিচ্ছেদ (জুডিশিয়াল):

    • যদি মুসলিম স্ত্রীকে তালাক-ই-তাফويضের ক্ষমতা না দেওয়া থাকে, তবে স্বামী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হলে বা আইন দ্বারা নির্ধারিত অন্য কোনো কারণে স্ত্রী আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ চাইতে পারেন। একেও সাধারণত 'ডিভোর্স' বা জুডিশিয়াল ডিভোর্স বলা হয়।

সারসংক্ষেপ:

আপনি যদি মুসলিম হন, তবে আপনার বিবাহবিচ্ছেদকে সাধারণত তালাক বলা হয় এবং এটি ১৯৬১ সালের আইন মেনে চলে। আর আপনি যদি অন্য ধর্মাবলম্বী হন, তবে আপনার বিবাহবিচ্ছেদকে ডিভোর্স বলা হয় এবং এটি সাধারণত আদালতের মাধ্যমে কার্যকর হয়। তবে বর্তমানে কথোপকথনে বা সাধারণ আইনি পরিমণ্ডলে 'ডিভোর্স' শব্দটি সব ধরনের বিবাহবিচ্ছেদকেই বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।

+সংক্ষেপে বলতে গেলে, ডিভোর্স (Divorce) হলো বিবাহবিচ্ছেদ-এর ইংরেজি প্রতিশব্দ, আর তালাক হলো এর আরবী প্রতিশব্দ। সাধারণ অর্থে, এ দুটো শব্দ একই বিষয়—অর্থাৎ আইনিভাবে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করাকে বোঝায়।

তবে বাংলাদেশের আইনি ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে এই দুটি শব্দের ব্যবহারে সামান্য পার্থক্য রয়েছে:

১. ডিভোর্স (Divorce) বা বিবাহবিচ্ছেদ (বাংলা প্রতিশব্দ)

  • এটি একটি সাধারণ এবং ব্যাপক আইনি পরিভাষা

  • এই শব্দটি সকল ধর্মের বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

  • যেমন:

    • মুসলিমদের বিবাহবিচ্ছেদকে 'ডিভোর্স' বলা যায় (যদিও 'তালাক' বেশি প্রচলিত)।

    • খ্রিস্টানদের বিবাহবিচ্ছেদ (দ্য ডিভোর্স অ্যাক্ট, ১৮৬৯ অনুযায়ী) বা বিশেষ বিবাহ আইনের (স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট) অধীনে হওয়া বিচ্ছেদকে বিশেষভাবে ডিভোর্স বলা হয়, কারণ এখানে সাধারণত আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ কার্যকর হয়।

২. তালাক (Talaq)

  • এটি একটি ইসলামী শরিয়াহ পরিভাষা

  • এটি শুধুমাত্র মুসলিমদের বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

  • মুসলিম আইনে স্বামী বা স্ত্রী (তালাকের ক্ষমতা অর্পণ করা থাকলে) ঘোষণার মাধ্যমে তালাক প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন এবং নোটিশ জারির মাধ্যমে তা কার্যকর হয় (যা মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত)।

  • ইসলামী শরিয়তে 'তালাক' বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে (যেমন: তালাক-ই-তাফويض, খোলা, মুবারাত)।

মূল পার্থক্য

ক্ষেত্রতালাক (Talaq)ডিভোর্স (Divorce)
পরিভাষাআরবী শব্দ।ইংরেজি শব্দ (বাংলায় 'বিবাহবিচ্ছেদ')।
প্রয়োগের ক্ষেত্রশুধুমাত্র মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের বিবাহবিচ্ছেদ।সকল ধর্মাবলম্বীর বিবাহবিচ্ছেদ (একটি সাধারণ আইনি শব্দ)।
আইনি ভিত্তিমুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এবং ইসলামী শরিয়াহ।রাষ্ট্রের প্রচলিত দেওয়ানি আইন (যেমন: পারিবারিক আদালত আইন, বিশেষ বিবাহ আইন)।
পদ্ধতিনোটিশ জারির মাধ্যমে চেয়ারম্যান/মেয়রের সালিসি পরিষদ এবং ৯০ দিন পর কার্যকর।সাধারণত আদালতের ডিক্রির (রায়ের) মাধ্যমে কার্যকর (তবে মুসলিমদের ক্ষেত্রে নোটিশ পদ্ধতিই প্রধান)।

সারকথা:

তালাক হলো মুসলিমদের জন্য প্রযোজ্য এক ধরনের ডিভোর্স বা বিবাহবিচ্ছেদ। যখন কেউ সাধারণভাবে 'ডিভোর্স' শব্দটি ব্যবহার করেন, তখন তিনি যেকোনো ধর্ম বা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হওয়া বিবাহবিচ্ছেদকে বোঝাতে পারেন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন