বিদেশ থেকে ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম

 বিদেশ থেকে ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম


বিদেশ থেকে ডিভোর্স দেওয়ার নিয়মটি বাংলাদেশের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এবং পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি (আমমোক্তারনামা) আইন, ২০১২ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রক্রিয়াটি কিছুটা জটিল, তবে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে এটি করা সম্ভব।

এখানে স্বামী বা স্ত্রী (তালাক-ই-তৌফিজের ক্ষমতাপ্রাপ্ত হলে) কিভাবে বিদেশ থেকে ডিভোর্স প্রক্রিয়া শুরু করবেন তার ধাপগুলি দেওয়া হলো:


১. আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ এবং ক্ষমতা প্রদান (পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি)

বিদেশ থেকে ডিভোর্স দেওয়ার মূল উপায় হলো বাংলাদেশে একজন প্রতিনিধি (আমমোক্তার) নিয়োগ করা।

  1. আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ: প্রথমে দেশে একজন পারিবারিক আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করুন এবং আপনার ডিভোর্সের কারণ ও পদ্ধতি (স্বামী কর্তৃক তালাক, তালাক-ই-তৌফিজ বা খোলা তালাক) নিয়ে আলোচনা করুন।

  2. আমমোক্তারনামা (Power of Attorney) তৈরি: আইনজীবী আপনার পক্ষে কাজ করার জন্য একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে (যেমন: পরিবারের সদস্য বা আইনজীবী নিজেই) মনোনীত করে একটি আমমোক্তারনামা তৈরি করবেন। এই দলিল আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার পক্ষে তালাকের নোটিশ তৈরি ও জারি করার আইনি ক্ষমতা দেবে।

  3. বিদেশে আমমোক্তারনামা স্বাক্ষর ও সত্যায়ন:

    • আপনি যে দেশে আছেন, সেখানে বাংলাদেশের দূতাবাস বা হাইকমিশন-এ গিয়ে আমমোক্তারনামা এবং তালাকের নোটিশে স্বাক্ষর করুন।

    • দূতাবাস বা হাইকমিশন কর্তৃক দলিলটি সত্যায়িত (Attested) করিয়ে নিন।

    • যেসব দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস নেই, সেখানে স্থানীয় নোটারি পাবলিক এবং সংশ্লিষ্ট দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করিয়ে বাংলাদেশে পাঠাতে হবে।

  4. বাংলাদেশে বৈধতা: আমমোক্তারনামাটি বাংলাদেশে আসার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসনের কার্যালয় (স্ট্যাম্পযুক্তকরণের জন্য) থেকে আরও একবার সত্যায়িত করে আইনি বৈধতা নিশ্চিত করতে হবে।


২. তালাকের নোটিশ জারি (ধারা-৭, মুসলিম পারিবারিক আইন, ১৯৬১)

আমমোক্তারনামা বৈধ হওয়ার পর আপনার প্রতিনিধি দেশে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করবেন:

  1. নোটিশ প্রস্তুত: আমমোক্তারের মাধ্যমে তালাকের নোটিশ প্রস্তুত করা হবে। নোটিশে তালাকদাতার পূর্ণ নাম, ঠিকানা, তালাকের কারণ এবং অন্য পক্ষের নাম ও ঠিকানা উল্লেখ থাকতে হবে।

  2. নোটিশ প্রেরণ: তালাকের নোটিশটি তিনটি ঠিকানায় রেজিস্টার্ড ডাকযোগে পাঠাতে হবে:

    • স্ত্রীর/স্বামীর স্থায়ী ঠিকানায়

    • বিবাহ যে এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেই এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/পৌরসভার মেয়র/সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে

    • আমমোক্তারনামা অনুযায়ী আপনার প্রতিনিধি (আমমোক্তার) যিনি নোটিশটি জারি করছেন।

  3. সালিশি পরিষদ (Arbitration Council): নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান/মেয়র একটি সালিশি পরিষদ গঠন করবেন। এই পরিষদে আপনার মনোনীত প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন।


৩. তালাক কার্যকর ও সনদপত্র লাভ

  • নোটিশ জারির তারিখ থেকে ৯০ দিন অপেক্ষা করতে হবে।

  • যদি এই ৯০ দিনের মধ্যে সালিশি পরিষদে কোনো মীমাংসা না হয় এবং আপনি (তালাকদাতা) নোটিশ প্রত্যাহার না করেন, তবে ৯০ দিন পর তালাকটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হবে।

  • তালাক কার্যকর হওয়ার পর আমমোক্তারের মাধ্যমে কাজি অফিস থেকে তালাকনামার সনদপত্র (Divorce Certificate) সংগ্রহ করা যাবে।


গুরুত্বপূর্ণ নোট:

  • মধ্যপ্রাচ্যের দেশ: কিছু ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে তালাকের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে আইনজীবীর পরামর্শ অনুযায়ী একবার দেশে এসে কাজীর ভলিউমে স্বাক্ষর করে যাওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ।

  • তালাক-ই-তৌফিজ: যদি স্ত্রী তার অর্পিত ক্ষমতা বলে ডিভোর্স দেন, তবে প্রক্রিয়াটি প্রায় একই, কেবল নোটিশ পাঠানোর ভূমিকা পরিবর্তন হবে।

  • খোলা তালাক (পারস্পরিক): পারস্পরিক সম্মতিতে বিচ্ছেদ হলে প্রক্রিয়াটি অপেক্ষাকৃত দ্রুত হয় এবং চুক্তিনামাটি যথাযথভাবে সত্যায়িত করতে হয়।

বিদেশ থেকে কোনো বাংলাদেশী নাগরিকের ডিভোর্স দেওয়ার প্রক্রিয়াটি কিছুটা জটিল হলেও তা সম্পন্ন করা সম্ভব। এটি মূলত পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তারনামা (Power of Attorney - PoA)-এর মাধ্যমে দেশে একজন প্রতিনিধি নিয়োগ করে করা হয়।

নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করে একজন প্রবাসী স্বামী বা স্ত্রী (যদি স্ত্রীকে তালাক-ই-তৌফিজের ক্ষমতা দেওয়া থাকে) ডিভোর্স দিতে পারেন:


১. দেশে আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ

  • আইনজীবী নিয়োগ: প্রথমে বাংলাদেশে একজন পারিবারিক আইনজীবী বা বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে (যেমন নিকটাত্মীয়) চিহ্নিত করুন, যিনি আপনার পক্ষে ডিভোর্স প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করবেন।

  • পরামর্শ গ্রহণ: আইনজীবীর সাথে বিস্তারিত আলোচনা করে তালাকের কারণ, দেনমোহর, সন্তানের অভিভাবকত্ব (যদি থাকে) ইত্যাদি বিষয়ে আইনি পরামর্শ নিন।

২. আমমোক্তারনামা (Power of Attorney - PoA) তৈরি

বিদেশ থেকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো আপনার নিয়োগকৃত ব্যক্তিকে আইনি ক্ষমতা দেওয়া।

  • PoA তৈরি: আপনার আইনজীবী একটি বিশেষ আমমোক্তারনামা বা ক্ষমতাপত্র প্রস্তুত করবেন। এই দলিলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে যে আপনার পক্ষে আপনার প্রতিনিধি তালাকের নোটিশ দেওয়া, সালিশি পরিষদে উপস্থিত থাকা এবং অন্যান্য আইনি কাজ করার ক্ষমতা রাখে।

  • PoA আপনার কাছে পাঠানো: আইনজীবী প্রস্তুতকৃত PoA-এর কপি বিদেশে আপনার কাছে পাঠাবেন।

  • PoA স্বাক্ষর ও সত্যায়ন (Authentication):

    1. আপনি প্রবাসে যে দেশে আছেন, সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসে বা কনস্যুলেটে গিয়ে নোটারি পাবলিকের সামনে PoA-তে স্বাক্ষর করবেন।

    2. এরপর দূতাবাস বা কনস্যুলেট থেকে এটি সত্যায়িত (Attested) করিয়ে নিতে হবে। এটিই আপনার স্বাক্ষরের আইনি বৈধতা নিশ্চিত করবে।

    3. কিছু কিছু দেশে প্রথমে স্থানীয় নোটারি দ্বারা PoA সত্যায়িত করে তারপর বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে তা প্রমাণীকরণের প্রয়োজন হতে পারে।

৩. দেশে PoA-এর আইনি প্রক্রিয়া

  • দেশে ফেরত পাঠানো: সত্যায়িত করা PoA ডকুমেন্টটি দেশে আপনার আইনজীবীর কাছে বা নিয়োগকৃত প্রতিনিধির কাছে পাঠাতে হবে।

  • পররাষ্ট্র ও জেলা প্রশাসন থেকে স্ট্যাম্পযুক্তকরণ: আপনার প্রতিনিধিকে সেই PoA-টি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে স্ট্যাম্পযুক্ত বা সত্যায়িত করাতে হবে, যাতে এটি বাংলাদেশে আইনিভাবে কার্যকর হয়।

৪. তালাকের নোটিশ জারি (ধারা-৭ নোটিশ)

আমমোক্তারনামা কার্যকর হওয়ার পর আপনার প্রতিনিধি আপনার পক্ষে তালাকের প্রক্রিয়া শুরু করবেন।

  • নোটিশ তৈরি ও জারি: আপনার প্রতিনিধি তালাকের নোটিশ তৈরি করে তা নিম্নোক্ত দুটি ঠিকানায় রেজিস্টার্ড ডাকযোগে পাঠাবেন:

    1. স্থানীয় কর্তৃপক্ষ: আপনার স্ত্রী/স্বামীর স্থায়ী ঠিকানার সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/পৌরসভার মেয়র/সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বরাবর।

    2. আপনার স্ত্রী/স্বামী বরাবর।

  • তালাক রেজিস্ট্রি: কাজী তালাকের নোটিশটি রেজিস্ট্রি করে রাখবেন।

৫. সালিশি ও কার্যকারিতা

  • সালিশি পরিষদ: নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পক্ষদ্বয়ের মধ্যে মীমাংসা (Reconciliation) ঘটানোর জন্য একটি সালিশি পরিষদ গঠন করবে। আপনার প্রতিনিধি আপনার পক্ষে এই পরিষদে উপস্থিত থাকবেন।

  • চূড়ান্ত কার্যকর: নোটিশ জারির দিন থেকে ৯০ দিন পার হওয়ার পর (যদি এই সময়ের মধ্যে মীমাংসা না হয়), তালাকটি চূড়ান্তভাবে কার্যকর হবে।


গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা

  • মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ: কিছু সূত্র মতে, মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে PoA-এর মাধ্যমে ডিভোর্স প্রক্রিয়ায় কিছু জটিলতা থাকতে পারে এবং সেক্ষেত্রে ডিভোর্স দাতার বাংলাদেশে ব্যক্তিগত উপস্থিতি প্রয়োজন হতে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস বা আইনজীবীর কাছ থেকে নিশ্চিত হয়ে নিন।

  • বিদেশী ডিভোর্স: আপনি যে দেশে আছেন, সেখানে যদি আপনি স্থানীয় আইন মেনে ডিভোর্স নেন, তবে সেটি বাংলাদেশেও কার্যকর হবে কিনা তা নিশ্চিত করতে একজন আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কে অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নিতে হবে।

  • দেনমোহর: ডিভোর্স কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে স্ত্রীকে তার সম্পূর্ণ দেনমোহর (খোলা তালাক না হলে) পরিশোধ করতে স্বামী বাধ্য থাকেন।

বিদেশে অবস্থান করলে এই প্রক্রিয়াটি শুরু করার আগে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ বাংলাদেশী আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করা অত্যাবশ্যক।

 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন