স্ত্রী যৌথ পরিবারে থাকতে না চাইলে ইসলাম কী বলে

 স্ত্রী যৌথ পরিবারে থাকতে না চাইলে ইসলাম কী বলে


যৌথ পরিবারে বা স্বামীর মা-বাবার সাথে থাকতে না চাইলে ইসলাম কী বলে, এই বিষয়টি ইসলামি শরীয়ত ও পারিবারিক অধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল।

ইসলামী শরীয়তে এ বিষয়ে স্ত্রীর অধিকারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।


স্ত্রীর মৌলিক অধিকার: পৃথক আবাসন (Independent Residence)

ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী, বিবাহের পর স্ত্রীর এটি একটি মৌলিক অধিকার যে স্বামী তাঁকে একটি পৃথক এবং স্বতন্ত্র বাসস্থান (Separate and Independent Residence) প্রদান করবেন।

  • স্ত্রী স্বাধীন: স্ত্রী যদি স্বামীর মা-বাবা, ভাই-বোন বা অন্য কোনো আত্মীয়ের সাথে একই বাড়িতে বা যৌথ পরিবারে থাকতে না চান, তবে তাঁকে সেই বাড়িতে থাকতে বাধ্য করা যায় না।

  • স্বামীর দায়িত্ব: স্বামীর দায়িত্ব হলো স্ত্রীর জন্য এমন একটি বাসস্থান বা থাকার ব্যবস্থা করা যেখানে স্ত্রী নিরাপদে ও স্বাধীনভাবে বসবাস করতে পারেন।

  • যৌথ বাসস্থানে বাধ্য করা যায় না: স্বামী যদি স্ত্রীকে যৌথ পরিবারে থাকতে বাধ্য করেন, তবে স্ত্রী তা প্রত্যাখ্যান করতে পারেন এবং ইসলামি আইন অনুযায়ী তিনি স্বামীর কাছ থেকে পৃথক আবাসন দাবি করতে পারেন।

দ্রষ্টব্য: পৃথক আবাসন বলতে সব সময়ই সম্পূর্ণ আলাদা বাড়ি বোঝায় না। এটি এমন একটি ব্যবস্থা বোঝায় যেখানে স্ত্রীর জন্য আলাদা শয়নকক্ষ, ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সুরক্ষা এবং রান্নার প্রয়োজন হলে আলাদা রান্নার ব্যবস্থা থাকে। তবে স্ত্রী যদি সম্পূর্ণ আলাদা বাড়ি দাবি করেন এবং স্বামী আর্থিকভাবে সক্ষম হন, তবে তাঁর সেই দাবি পূরণ করা উচিত।


কেন এই অধিকার দেওয়া হয়েছে?

ইসলামী আইনে এই অধিকার দেওয়ার কিছু প্রধান কারণ রয়েছে:

  1. গোপনীয়তা রক্ষা (Privacy): দাম্পত্য জীবনের গোপনীয়তা রক্ষা করা স্ত্রীর একটি অধিকার, যা যৌথ পরিবারে ব্যাহত হতে পারে।

  2. স্বাচ্ছন্দ্য ও স্বাধীনতা: স্ত্রী যেন নিজের মতো করে জীবন যাপন করতে এবং সংসার পরিচালনা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

  3. ঝগড়া বা মনোমালিন্য এড়ানো: যৌথ পরিবারে প্রায়শই শাশুড়ি বা ননদদের সাথে মনোমালিন্য হওয়ার ঝুঁকি থাকে, যা এড়িয়ে দাম্পত্য শান্তি বজায় রাখার জন্য ইসলাম এই অধিকার দিয়েছে।


স্বামীর প্রতি ইসলামি নির্দেশনা

যদিও ইসলাম যৌথ পরিবার প্রথাকে নিরুৎসাহিত করে না এবং মা-বাবার সেবা করাকে সন্তানের জন্য ফরজ করেছে, তবুও স্ত্রীর আবাসন অধিকারের সাথে এর কোনো সংঘাত নেই।

  • ভারসাম্য রক্ষা: স্বামীর কর্তব্য হলো স্ত্রী এবং মা-বাবার অধিকারের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা। তিনি মা-বাবাকে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী দেখভাল করবেন, কিন্তু স্ত্রীকে তার স্বাধীন আবাসন থেকে বঞ্চিত করবেন না।

  • মা-বাবার সেবার পদ্ধতি: স্বামী যদি স্ত্রীকে আলাদা বাড়িতে রাখেন, তবে তাঁর উচিত মা-বাবার কাছে নিয়মিত যাওয়া, তাদের সেবা ও খোঁজখবর নেওয়া অথবা মা-বাবাকে তাদের দেখভালের জন্য একজন লোক বা ব্যবস্থা করে দেওয়া। স্ত্রীকে তাঁর শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করতে বাধ্য করা যায় না, তবে স্ত্রী যদি স্বেচ্ছায় সেবা করেন, তা অনেক সওয়াবের কাজ।

চূড়ান্ত কথা

স্ত্রী যদি যৌথ পরিবারে থাকতে না চান, তবে ইসলামি শরীয়ত অনুযায়ী স্ত্রী একত্রে থাকতে বাধ্য নন, এবং স্বামীর কর্তব্য হলো স্ত্রীর জন্য পৃথক আবাসন বা থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া। এই মৌলিক অধিকার পূরণ না করলে স্ত্রী নাফরমান (বাধ্যতামূলক কর্তব্য লঙ্ঘনকারী) হবেন না।

যৌথ পরিবারে থাকার বিষয়ে স্ত্রী যদি স্বামীর সাথে একমত না হন বা থাকতে না চান, তাহলে ইসলামী শরীয়তের কিছু নির্দিষ্ট বিধান রয়েছে যা এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ইসলামে স্ত্রীর অধিকার ও স্বামীর দায়িত্ব—উভয়কেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।


ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিকোণ

ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী, স্ত্রীর প্রধান অধিকারগুলোর মধ্যে একটি হলো স্বতন্ত্র বাসস্থান (Separate Residence) বা স্বামীর সাথে নির্জন বাসস্থানের অধিকার।

১. স্ত্রীর স্বতন্ত্র বাসস্থানের অধিকার

  • স্বামীর দায়িত্ব: স্বামী স্ত্রীকে এমন একটি বাসস্থান দিতে বাধ্য, যেখানে স্ত্রী তার স্বামীর সাথে নিরাপদে ও একান্তে বসবাস করতে পারবেন। এই বাসস্থানটি অবশ্যই স্বামীর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রভাবমুক্ত হতে হবে, যাতে স্ত্রী সেখানে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এবং দাম্পত্য জীবনের গোপনীয়তা বজায় থাকে।

  • যৌথ পরিবারের বাধ্যবাধকতা নেই: স্ত্রী যদি স্বামীর পরিবার থেকে আলাদা একটি বাড়িতে বা স্বতন্ত্র ফ্ল্যাটে থাকতে চান, তাহলে স্বামীকে সে ব্যবস্থা করতে হবে। স্ত্রীকে তার শাশুড়ি, ননদ বা দেবর-ভাসুরদের সাথে একই রান্নাঘর বা একই শোবার ঘরে থাকতে বাধ্য করা যায় না।

  • স্বামীর পরিবারের সাথে সম্পর্ক: স্ত্রী আলাদা বাসস্থানে থাকলেও তিনি তার ইচ্ছানুযায়ী স্বামীর পরিবারের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখবেন এবং তাদের প্রতি সম্মান দেখাবেন। তবে একসাথে থাকা তার জন্য বাধ্যতামূলক নয়।

২. যৌথ পরিবারে থাকার সুবিধা-অসুবিধা

যদিও ইসলামে স্ত্রীকে বাধ্য করা হয়নি, তবুও যৌথ পরিবারে থাকার কিছু সুবিধা ও অসুবিধা উভয়ই রয়েছে:

দিকসুবিধা (ঐচ্ছিক)অসুবিধা (স্ত্রীর আপত্তির কারণ হতে পারে)
পারিবারিক বন্ধনস্বামীর অসুস্থ মা-বাবার সেবা করা বা পরিবারের ছোটদের দেখাশোনা করা সহজ হয়।ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও স্বাধীনতা (Privacy) কমে যাওয়া।
নিরাপত্তা ও সমর্থনবিপদের সময় পরিবারের সমর্থন দ্রুত পাওয়া যায়।শাশুড়ি-ননদের সাথে মতের অমিল বা ঝগড়ার সৃষ্টি হওয়া।
অর্থনৈতিক দিকখরচ ভাগ করে নেওয়ায় আর্থিক সাশ্রয় হয়।সাংসারিক কাজের অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হওয়া।

৩. করণীয় ও পরামর্শ

যদি স্ত্রী যৌথ পরিবারে থাকতে না চান, তবে ইসলাম স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই সমঝোতা ও ন্যায়পরায়ণতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়:

  • স্বামীর দায়িত্ব: স্বামীকে স্ত্রীর স্বতন্ত্র বাসস্থানের অধিকারকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং সামর্থ্য অনুযায়ী তার জন্য আলাদা থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, স্ত্রীর অধিকার নিশ্চিত করা স্বামীর জন্য একটি ফরজ দায়িত্ব

  • স্ত্রীর করণীয়: স্ত্রীর উচিত, আলাদা থাকার ব্যবস্থা করার আগে শান্তিপূর্ণভাবে স্বামীর সাথে আলোচনা করা এবং কেন তিনি আলাদা থাকতে চান তার যৌক্তিক কারণগুলো তুলে ধরা। স্বামীর মা-বাবার প্রতি সেবা ও দায়িত্ব পালনে কোনো ত্রুটি না করে দূর থেকে হলেও তাদের খোঁজখবর রাখা।

  • সর্বোত্তম সমাধান: যদি সম্পূর্ণ আলাদা থাকা সম্ভব না হয়, তবে স্বামী এমন একটি অন্তর্বর্তী সমাধান খুঁজতে পারেন যেখানে একই বাড়িতে থাকলেও স্ত্রীর জন্য আলাদা কক্ষ, রান্নাঘর বা প্রবেশপথ-এর ব্যবস্থা করা যায়, যা তার একাকীত্ব নিশ্চিত করবে।

ফলাফল:

যদি স্ত্রী আলাদা থাকতে চান এবং স্বামীর সেই ব্যবস্থা করার সামর্থ্য থাকে, তবে স্বামীকে তা করতে হবে। স্ত্রী যদি ন্যায্য অধিকার চান, তাকে অবাধ্য (নাশিযাহ) বলা যাবে না। এই বিষয়ে মনোমালিন্য বা ঝগড়া সৃষ্টি করা দাম্পত্য সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর। দ্রুত ও শান্তিপূর্ণভাবে সমঝোতায় পৌঁছানোই হলো ইসলামের শিক্ষা।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন