ঔপনিবেশিক বাংলায় মেয়েদের পোশাক
ঔপনিবেশিক আমলে বাংলায় মেয়েদের পোশাকে এক বড় পরিবর্তন আসে। এর আগে, বাঙালি নারীরা মূলত শাড়ি পরতেন। এটি ছিল দৈনন্দিন এবং বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য তাদের প্রধান পোশাক। শাড়ি পরার ধরনেও বিভিন্নতা ছিল।
তবে ব্রিটিশ শাসনকালে ইউরোপীয় সংস্কৃতির প্রভাবে পোশাকের ধরনে কিছু নতুনত্ব আসে। এই সময়ে কিছু উচ্চবিত্ত বাঙালি নারী শাড়ির সঙ্গে ইউরোপীয় ধাঁচের জ্যাকেট বা ব্লাউজ পরা শুরু করেন। এর মূল কারণ ছিল শালীনতার ধারণা। ব্রিটিশ সমাজে পুরো শরীর ঢাকা পোশাককে সম্মানজনক মনে করা হতো। এর প্রভাবে বাঙালি সমাজেও শাড়ি পরার ধরন পাল্টে যায়।
এছাড়াও, সেই সময়ে পেটিকোট বা সায়া পরার চল শুরু হয়, যা শাড়িকে আরও ভালোভাবে শরীর জড়িয়ে রাখতে সাহায্য করত। এসব নতুন পোশাক পরার ধরনকে জনপ্রিয় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন জ্ঞানদানন্দিনী দেবী, যিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বৌদি। তিনি শাড়ি পরার এক নতুন পদ্ধতি নিয়ে আসেন যা আজকের দিনে আমরা যেভাবে শাড়ি পরি তার অনেকটাই কাছাকাছি।
সংক্ষেপে, ঔপনিবেশিক বাংলায় মেয়েদের পোশাকে শাড়ির প্রাধান্য থাকলেও, ব্রিটিশ সংস্কৃতির প্রভাবে ব্লাউজ, পেটিকোট এবং শাড়ি পরার আধুনিক পদ্ধতির প্রচলন হয়। এটি ছিল ঐতিহ্যবাহী এবং আধুনিকতার এক মিশ্রণ।
ঔপনিবেশিক বাংলায় মেয়েদের পোশাক মূলত দুটি ধারায় বিভক্ত ছিল: ঐতিহ্যবাহী এবং পাশ্চাত্য প্রভাবিত। এই দুটি ধারাই সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী পোশাক
ঐতিহ্যবাহী বাংলা সমাজে নারীদের প্রধান পোশাক ছিল শাড়ি।
শাড়ি পরার ধরন: শাড়ি পরার দুটি প্রধান শৈলী ছিল— আঁটোসাঁটো করে শাড়ি পরা এবং আঁচল দিয়ে মাথা ঢেকে রাখা, যা ছিল বাঙালি হিন্দু বিধবাদের মধ্যে প্রচলিত।
ব্লাউজ ও সায়া: ১৯শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ব্রাহ্মসমাজের নেতা জ্ঞানদানন্দিনী দেবী শাড়ির সাথে ব্লাউজ ও পেটিকোট বা সায়া পরার প্রচলন করেন। এটি পরবর্তীতে বাঙালি নারীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয় এবং এটিই আধুনিক শাড়ি পরার ভিত্তি তৈরি করে।
পাশ্চাত্য প্রভাবিত পোশাক
ঔপনিবেশিক শাসনের ফলে বাংলার উচ্চবিত্ত এবং শিক্ষিত নারীদের মধ্যে পাশ্চাত্য পোশাকের প্রভাব দেখা যায়।
গাউন ও স্কার্ট: ব্রিটিশ সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কিছু নারী পশ্চিমা ধাঁচের গাউন, ফ্রক এবং স্কার্ট পরতে শুরু করেন, বিশেষ করে বিশেষ অনুষ্ঠানে বা সামাজিক মেলামেশার জন্য।
জ্যাকেট ও কোট: শাড়ির ওপর হালকা জ্যাকেট বা কোট পরার প্রচলনও দেখা যায়, যা পাশ্চাত্য ফ্যাশনের সাথে দেশীয় পোশাকের এক ধরনের সংমিশ্রণ ছিল।
এছাড়াও, সাধারণ মুসলিম নারীদের মধ্যে বোরকা এবং হিজাব পরার চল ছিল, যা তাদের ধর্মীয় ও সামাজিক পরিচয়কে তুলে ধরত। এই পোশাকগুলো ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা এবং সামাজিক রীতিনীতির অংশ ছিল।
ঔপনিবেশিক সময়কালের এই মিশ্র ধারাই পরবর্তীকালে আধুনিক বাঙালি নারীদের পোশাকের বৈচিত্র্যকে প্রভাবিত করেছে। আজও, শাড়ি বাঙালি নারীর প্রধান পোশাক হলেও, পাশ্চাত্য পোশাকের জনপ্রিয়তাও কম নয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন