মেয়েদের টিটি টিকা কেন দেওয়া হয়

 মেয়েদের টিটি টিকা কেন দেওয়া হয়


মেয়েদের টিটেনাস টক্সয়েড (TT) টিকা দেওয়া হয় মূলত টিটেনাস নামের একটি মারাত্মক রোগ প্রতিরোধের জন্য। এই রোগটি ক্লস্ট্রিডিয়াম টেটানি (Clostridium tetani) নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়, যা সাধারণত মাটি, ধুলো এবং পশুর মলমূত্রে পাওয়া যায়। এই ব্যাকটেরিয়া শরীরে কোনো কাটা-ছেঁড়া বা ক্ষতের মাধ্যমে প্রবেশ করলে টিটেনাস রোগ হয়।

টিটেনাস রোগ খুবই বিপজ্জনক কারণ এটি স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে এবং পেশী সংকোচন, খিঁচুনি এবং শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা সৃষ্টি করে, যা প্রায়শই মৃত্যুর কারণ হয়।


মেয়েদের কেন টিটি টিকা দেওয়া হয়?

মেয়েদের বিশেষত গর্ভাবস্থায় বা সন্তান ধারণের বয়সের আগে টিটি টিকা দেওয়া হয় দুটি প্রধান কারণে:

  1. মাকে সুরক্ষা দেওয়া (Maternal Tetanus): গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের সময় কোনো ক্ষত হলে মা টিটেনাস রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এই টিকা মাকে এই রোগ থেকে রক্ষা করে।

  2. নবজাতককে সুরক্ষা দেওয়া (Neonatal Tetanus): এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ। প্রসবের সময় যদি জীবাণুমুক্ত ব্যবস্থা না নেওয়া হয় এবং নবজাতকের নাভির নাড়ি কাটার সময় সংক্রমণ হয়, তবে নবজাতক টিটেনাসে আক্রান্ত হতে পারে। একে নবজাতকের টিটেনাস (Neonatal Tetanus) বলা হয়, যা শিশু মৃত্যুর একটি বড় কারণ। মা যদি গর্ভাবস্থায় বা তার আগে টিটি টিকা নিয়ে থাকেন, তবে তার শরীর থেকে অ্যান্টিবডি প্লাসেন্টার মাধ্যমে শিশুর শরীরে চলে যায়, যা নবজাতককে টিটেনাস থেকে রক্ষা করে।

টিটি টিকার সময়সূচী

সাধারণত, মেয়েদের নির্দিষ্ট সময়সূচী অনুযায়ী টিটি টিকা দেওয়া হয়:

  • প্রথম টিকা: ১৫-১৮ বছর বয়সে।

  • দ্বিতীয় টিকা: প্রথম টিকার এক মাস পর।

  • তৃতীয় টিকা: দ্বিতীয় টিকার ছয় মাস পর।

  • চতুর্থ ও পঞ্চম টিকা: সাধারণত এরপর প্রতি ১০ বছর অন্তর একটি করে বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়।

  • গর্ভকালীন সময়: যদি কোনো নারী তার গর্ভকালীন সময়ে টিকা না নিয়ে থাকেন, তবে তাকে গর্ভধারণের চতুর্থ মাসে এবং তার এক মাস পর দুইটি টিকা দেওয়া হয়।

এই টিকাগুলো শুধুমাত্র টিটেনাস রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তাই এটি অন্যান্য রোগের জন্য কাজ করে না। এই টিকাটি নিরাপদ এবং এর কোনো বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

মেয়েদের টিটেনাস টক্সয়েড (টিটি) টিকা দেওয়া হয় মূলত টিটেনাস বা ধনুষ্টংকার নামক মারাত্মক রোগ থেকে সুরক্ষার জন্য। এই টিকা দেওয়ার প্রধান লক্ষ্য হলো মা এবং তার গর্ভস্থ শিশুকে টিটেনাস থেকে রক্ষা করা।


কেন টিটি টিকা দেওয়া হয়?

  1. মাতৃমৃত্যু ও নবজাতকের মৃত্যু রোধ: গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে টিটেনাস সংক্রমণ হলে তা মা এবং নবজাতক উভয়ের জন্যই মারাত্মক হতে পারে। এই রোগ সাধারণত মাটির জীবাণু থেকে হয়, যা অপরিষ্কার যন্ত্রপাতির মাধ্যমে প্রসবের সময় বা প্রসব-পরবর্তী সময়ে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। টিটি টিকা মাকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দেয়, যা পরবর্তীতে গর্ভস্থ শিশুর মধ্যেও চলে যায়। এর ফলে শিশু জন্মাবার পর ধনুষ্টংকার থেকে সুরক্ষিত থাকে।

  2. প্রজনন বয়সের মেয়েদের সুরক্ষা: ১৬ থেকে ৪৯ বছর বয়সী মেয়েদের এই টিকা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এর কারণ হলো, এই বয়সের মেয়েরা ভবিষ্যতে গর্ভধারণ করতে পারে, এবং আগেই সুরক্ষিত থাকলে গর্ভাবস্থায় জটিলতা এড়ানো সহজ হয়।

  3. সাধারণ সুরক্ষা: টিটেনাস শুধু প্রসবের সময়ই হয় না, এটি যেকোনো ধরনের ক্ষত বা আঘাত থেকেও হতে পারে, যেমন: কাটাছেঁড়া, পোড়া, বা পশুর কামড়। তাই মেয়েদের টিটি টিকা দিলে তারা এই ধরনের সাধারণ আঘাত থেকেও সুরক্ষিত থাকেন।

টিটি টিকার ডোজ এবং সময়সূচী:

সাধারণত, ৫টি ডোজের একটি সিরিজ দেওয়া হয়, যা দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা প্রদান করে।

  • ১ম ডোজ: প্রজনন বয়সের একজন মেয়ে যখন প্রথমবার টিটি টিকা নেয়।

  • ২য় ডোজ: প্রথম ডোজের এক মাস পর।

  • ৩য় ডোজ: দ্বিতীয় ডোজের ৬ মাস পর বা প্রথম গর্ভাবস্থায়।

  • ৪র্থ ডোজ: তৃতীয় ডোজের এক বছর পর বা দ্বিতীয় গর্ভাবস্থায়।

  • ৫ম ডোজ: চতুর্থ ডোজের এক বছর পর বা তৃতীয় গর্ভাবস্থায়।

এই ৫টি ডোজ সম্পন্ন হলে সাধারণত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে সুরক্ষা পাওয়া যায়।

সংক্ষেপে, মেয়েদের টিটি টিকা দেওয়া হয় মা এবং নবজাতক উভয়কে টিটেনাস নামক জীবনঘাতী রোগ থেকে রক্ষা করার জন্য। এটি জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন