ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম মেয়েদের

 ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম মেয়েদের


ঈদুল ফিতরের নামাজ পুরুষদের মতো মেয়েদের জন্যও দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ। তবে কিছু বিষয় আছে যা মেয়েদের জন্য আলাদা বা বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে।


মেয়েদের ঈদগাহে যাওয়া বা ঘরে নামাজ পড়া

মেয়েদের জন্য ঈদের নামাজ জামাতে পড়া ওয়াজিব নয়, তবে সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সময়ে মেয়েরা ঈদগাহে যেতেন এবং ঈদের আনন্দ ও বরকত প্রত্যক্ষ করতেন, এমনকি ঋতুবতী মেয়েরাও উপস্থিত হতেন, তবে তারা নামাজ পড়তেন না।

  • ঈদগাহে যাওয়া: অনেক আলেমের মতে, মেয়েরা যদি পূর্ণ পর্দা ও নিরাপত্তার সাথে ঈদগাহে যেতে পারেন এবং ফিতনার কোনো আশঙ্কা না থাকে, তাহলে তাদের ঈদগাহে যাওয়া জায়েজ। এটি ফজিলতপূর্ণও বটে, কারণ এতে মুসলিমদের বিশাল জামাত এবং ঈদের কল্যাণ প্রত্যক্ষ করা যায়। তবে এক্ষেত্রে পুরুষদের সাথে মেলামেশা থেকে বিরত থাকা উচিত।

  • ঘরে নামাজ পড়া: বেশিরভাগ আলেমের মতে, মেয়েদের জন্য ঘরে নামাজ পড়া বেশি ফজিলতপূর্ণ, বিশেষত যদি ঈদগাহে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার অভাব বা ফিতনার আশঙ্কা থাকে। নারীরা ঘরে জামাত করে নামাজ পড়বেন না, বরং একাকী পড়বেন। অনেকে মনে করেন, একা ঈদের নামাজ পড়ার কোনো বিধান নেই, তাই তারা ঘরে একা ঈদের নামাজ না পড়ার কথা বলেন। তবে যদি কেউ জামাতে শরিক হতে না পারেন, তাহলে ঘরে একা ঈদ নামাজ আদায় করা বৈধ বলে কিছু মত পাওয়া যায়।


ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম (মেয়েদের জন্য)

ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম পুরুষ ও মহিলাদের জন্য প্রায় একই, তবে কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেহেতু নারীরা সাধারণত জামাতে ইমামের পেছনে নামাজ পড়েন, তাই নিয়মটি ইমামের অনুসরণ করে থাকে।

১. নিয়ত:

নামাজের শুরুতে মনে মনে নিয়ত করতে হবে। মুখে নিয়ত উচ্চারণ করা জরুরি নয়, তবে বলা যেতে পারে:

"নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাআতাইন সালাতিল ইদিল ফিতরি মাআ সিত্তাতিত তাকবিরাতি ওয়াজিবুল্লাহি তাআলা ইকতাদাইতু বিহাজাল ইমামি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা ঝিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি 'আল্লাহু আকবার'।

অর্থ: আমি ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ছয় তাকবিরের সঙ্গে এই ইমামের পেছনে কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য আদায় করছি— আল্লাহু আকবার।

২. প্রথম রাকাত:

  • ইমামের সঙ্গে তাকবিরে তাহরিমা 'আল্লাহু আকবার' বলে হাত বাঁধবেন (পুরুষরা নাভির নিচে এবং মহিলারা বুকের উপর হাত বাঁধবেন)।

  • এরপর সানা পড়বেন (সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা...)

  • তারপর অতিরিক্ত তিনটি তাকবির দিবেন। প্রতিটি তাকবিরে হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে ছেড়ে দিবেন এবং তৃতীয় তাকবিরে হাত বেঁধে ফেলবেন। প্রতি তাকবিরের মাঝে ৩ তাসবিহ পরিমাণ সময় অপেক্ষা করা মুস্তাহাব।

  • এরপর ইমাম সাহেব সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পাঠ করবেন।

  • সাধারণ নামাজের মতো রুকু ও সিজদা করবেন।

৩. দ্বিতীয় রাকাত:

  • ইমাম সাহেব যখন দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবেন, তখন সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পাঠ করবেন।

  • এরপর রুকুতে যাওয়ার আগে অতিরিক্ত তিনটি তাকবির দিবেন। এই তিনটি তাকবিরে হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে ছেড়ে দিবেন।

  • চতুর্থ তাকবিরে হাত না উঠিয়ে সরাসরি রুকুতে যাবেন।

  • এরপর স্বাভাবিক নামাজের মতো রুকু ও সিজদা করে নামাজ শেষ করবেন।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ:

  • ঈদের নামাজে খুতবা (বক্তব্য) শোনা সুন্নত, তবে নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য খুতবা শোনা জরুরি নয়।

  • যদি কোনো নারী ঋতুবতী হন, তাহলে তিনি ঈদগাহে উপস্থিত হতে পারবেন, তবে নামাজ পড়বেন না।

  • ঈদের নামাজের আগে গোসল করা, পরিষ্কার কাপড় পরা এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নত।

যদি আপনার আরও কিছু জানার থাকে, তাহলে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন