অবিবাহিত মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার কেন হয়
অবিবাহিত মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা, যাকে চিকিৎসা পরিভাষায় ইউটেরাইন ফাইব্রয়েড (Uterine Fibroid) বা মায়োমা (Myoma) বলা হয়। এগুলো সাধারণত জরায়ুর পেশী ও তন্তুময় কলায় অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে সৃষ্টি হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্যানসারবিহীন (benign) হয়।
যদিও এর সঠিক কারণ এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে কিছু কারণ এবং ঝুঁকির কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে:
প্রধান কারণ ও ঝুঁকির কারণ
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা: এটি জরায়ু টিউমারের প্রধান কারণগুলির মধ্যে একটি।
ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন: এই দুটি হরমোন মেয়েদের মাসিক চক্র এবং গর্ভাবস্থায় জরায়ুর ভেতরের আবরণ (lining) তৈরিতে সাহায্য করে। ধারণা করা হয়, এই হরমোনগুলোর মাত্রা বৃদ্ধি পেলে বা এদের ভারসাম্যে তারতম্য ঘটলে জরায়ুর পেশী কোষগুলো অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেয়ে টিউমার তৈরি করতে পারে। ফাইব্রয়েডগুলিতে স্বাভাবিক জরায়ু কোষের চেয়ে বেশি ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন রিসেপ্টর থাকে। মাসিক চক্র চলাকালীন যখন এই হরমোনগুলির মাত্রা বেশি থাকে, তখন ফাইব্রয়েডের বৃদ্ধি ঘটতে পারে।
বয়স: প্রজননক্ষম বয়সে (৩০-৫০ বছর) মহিলাদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়, কারণ এই সময়ে হরমোনের মাত্রা বেশি থাকে। মেনোপজের পর সাধারণত হরমোনের মাত্রা কমে যাওয়ায় ফাইব্রয়েডগুলো সংকুচিত হয়।
বংশগত কারণ (Genetics): পরিবারের অন্য কোনো নারী সদস্যের (যেমন মা বা বোন) যদি জরায়ুতে টিউমার থেকে থাকে, তাহলে অন্য সদস্যদেরও এই সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। গবেষকরা ফাইব্রয়েড কোষে কিছু জিনগত পরিবর্তন (gene changes) দেখতে পেয়েছেন যা স্বাভাবিক জরায়ু কোষ থেকে ভিন্ন।
অন্যান্য বৃদ্ধি উপাদান (Other Growth Factors): শরীরের টিস্যুগুলো রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্যকারী কিছু উপাদান, যেমন ইনসুলিন-লাইক গ্রোথ ফ্যাক্টর (Insulin-like growth factor - IGF), ফাইব্রয়েডের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে।
জাতিগত কারণ (Race): গবেষণায় দেখা গেছে যে, আফ্রিকান আমেরিকান মহিলাদের মধ্যে জরায়ু টিউমার হওয়ার প্রবণতা বেশি। তাদের মধ্যে ফাইব্রয়েড কম বয়সে দেখা যায় এবং এর লক্ষণগুলোও বেশি তীব্র হতে পারে।
বয়স: সাধারণত ৩০ বছরের বেশি বয়সী মহিলাদের মধ্যে ফাইব্রয়েড বেশি দেখা যায়, তবে অবিবাহিত বা কম বয়সী মেয়েদেরও হতে পারে।
অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা (Obesity): শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে, যা ফাইব্রয়েডের বৃদ্ধিতে সহায়ক।
ভিটামিন ডি-এর অভাব (Vitamin D Deficiency): কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভিটামিন ডি-এর অভাবে ফাইব্রয়েডের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
খাদ্যাভ্যাস: লাল মাংস বেশি খাওয়া এবং ফলমূল, শাকসবজি ও দুগ্ধজাত খাবার কম খাওয়ার সাথেও ফাইব্রয়েডের ঝুঁকির সম্পর্ক থাকতে পারে।
অল্প বয়সে মাসিক শুরু হওয়া (Early Menarche): যাদের মাসিক খুব অল্প বয়সে শুরু হয়, তাদের ফাইব্রয়েড হওয়ার ঝুঁকি বেশি হতে পারে, সম্ভবত ইস্ট্রোজেনের প্রতি দীর্ঘ সময় ধরে এক্সপোজারের কারণে।
অবিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো পার্থক্য আছে কি?
অবিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে জরায়ু টিউমার হওয়ার কারণ বিবাহিত মহিলাদের থেকে খুব বেশি ভিন্ন নয়। মূল কারণগুলো একই থাকে, যেমন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, বংশগত কারণ, এবং জীবনযাপন সম্পর্কিত কিছু বিষয়। গর্ভাবস্থা বা সন্তান ধারণের সাথে ফাইব্রয়েডের বৃদ্ধি সম্পর্কিত হলেও, এটি তাদের উৎপত্তির জন্য অপরিহার্য নয়। অর্থাৎ, সন্তান ধারণ না করলেও বা অবিবাহিত থাকলেও যে কোনো মেয়ের জরায়ুতে টিউমার হতে পারে।
যদি কোনো অবিবাহিত মেয়ের জরায়ুতে টিউমারের লক্ষণ (যেমন অতিরিক্ত মাসিক রক্তপাত, তলপেটে ব্যথা বা চাপ, বারবার প্রস্রাব হওয়া ইত্যাদি) দেখা যায়, তবে দ্রুত একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের (Gynecologist) পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক কারণ নির্ণয় করে উপযুক্ত চিকিৎসা দিতে পারবেন।
আপনার কি এ বিষয়ে আরও কিছু জানার আছে?
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন