২০২৫ সালের যাকাতের পরিমাণ নির্ধারণ করতে, আপনাকে কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করতে হবে:
২০২৫ যাকাতের পরিমাণ
**১. নিসাব:**
* যাকাত দেওয়ার জন্য আপনার সম্পদের একটি নির্দিষ্ট ন্যূনতম স্তরে (নিসাব) পৌঁছাতে হবে।
* নিসাবের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় স্বর্ণ বা রৌপ্যের মূল্যের ওপর ভিত্তি করে।
* ঐতিহ্যগতভাবে, নিসাব হলো ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ অথবা ৫৯৫ গ্রাম রৌপ্যের সমমূল্য।
* বর্তমানে স্বর্ণ ও রৌপ্যের বাজার মূল্যের ওপর ভিত্তি করে নিসাবের আর্থিক পরিমাণ পরিবর্তিত হতে পারে।
* কিছু ফিকহবিদ রৌপ্যের মূল্যকে নিসাব হিসেবে গণ্য করার পরামর্শ দেন, কারণ এটি সাধারণত কম হয়ে থাকে এবং এর ফলে বেশি সংখ্যক মানুষ যাকাত দেওয়ার যোগ্য হন।
**আজকের (৩০ এপ্রিল, ২০২৫) তারিখে বাংলাদেশে স্বর্ণ ও রৌপ্যের আনুমানিক বাজার মূল্য:**
* ১ গ্রাম স্বর্ণ: প্রায় ১১,৭৮১ টাকা (এটি পরিবর্তিত হতে পারে)
* ৮৫ গ্রাম স্বর্ণের নিসাব: প্রায় ১০,০১৩৫১ টাকা
* ১ গ্রাম রৌপ্য: প্রায় ১২৯ টাকা (এটি পরিবর্তিত হতে পারে)
* ৫৯৫ গ্রাম রৌপ্যের নিসাব: প্রায় ৭৬,৫৫৯ টাকা
সুতরাং, আপনার যাকাতযোগ্য সম্পদ যদি রৌপ্যের হিসাবে প্রায় ৭৬,৫৫৯ টাকা বা তার বেশি হয় অথবা স্বর্ণের হিসাবে প্রায় ১০,০১৩৫১ টাকা বা তার বেশি হয়, তাহলে আপনাকে যাকাত দিতে হবে।
**২. যাকাতযোগ্য সম্পদ:**
আপনার যে সম্পদগুলো যাকাতের হিসাবে আসবে সেগুলো হলো:
* নগদ অর্থ ও ব্যাংক ব্যালেন্স
* স্থায়ী আমানত, ডিপিএস, বিশেষ সঞ্চয় (যেমন: হজ, বিবাহ ইত্যাদি)
* বীমা এবং বীমার কিস্তির ওপর অর্জিত বোনাস
* শেয়ার, স্টক, সঞ্চয়পত্র, বন্ড ইত্যাদি
* বন্ধুদের ও আত্মীয়দের কাছ থেকে প্রাপ্য নিশ্চিত ঋণ
* সিকিউরিটি ডিপোজিট ও অগ্রিম পরিশোধ (যদি চলতি যাকাত বছরে ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে)
* প্রভিডেন্ট ফান্ডের ব্যালেন্স (যদি চলতি যাকাত বছরে উত্তোলনযোগ্য হয়)
* খরচ বাদে অন্যান্য আয়ের উদ্বৃত্ত (যেমন: বেতন, সম্মানী, উপহার, বাড়ি ভাড়া ইত্যাদি)
* ব্যবসায়িক পণ্য ও সম্পদ
* স্বর্ণ ও রৌপ্যের অলংকার (ব্যবহার্য অলংকারও যাকাতযোগ্য)
* বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে রাখা জমি, ফ্ল্যাট, বাড়ি ইত্যাদি
**৩. বাদ দেওয়া হবে:**
* আপনার ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিসপত্র, যেমন বসবাসের বাড়ি, পরিধানের বস্ত্র, ব্যবহার্য আসবাবপত্র ইত্যাদি যাকাতযোগ্য সম্পদ হিসেবে গণ্য হবে না।
* আপনার ওপর থাকা ঋণ (এক বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে এমন ঋণ) যাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে বাদ দেওয়া যাবে।
**৪. যাকাতের হার:**
* আপনার মোট যাকাতযোগ্য সম্পদের ২.৫% (শতকরা আড়াই টাকা) হারে যাকাত দিতে হবে।
**উদাহরণ:**
ধরা যাক, আপনার কাছে নিম্নলিখিত সম্পদগুলো আছে:
* নগদ টাকা: ৫০,০০০ টাকা
* ব্যাংক ব্যালেন্স: ১,০০,০০০ টাকা
* স্বর্ণালংকার (বাজার মূল্য): ৭০,০০০ টাকা
মোট যাকাতযোগ্য সম্পদ = ৫০,০০০ + ১,০০,০০০ + ৭০,০০০ = ২,২০,০০০ টাকা
যদি নিসাবের পরিমাণ রৌপ্যের মূল্যে ৭৬,৫৫৯ টাকা ধরা হয়, তাহলে আপনার সম্পদ নিসাবের বেশি।
সুতরাং, আপনার যাকাতের পরিমাণ হবে: ২,২০,০০০ টাকার ২.৫% = ৫,৫০০ টাকা।
**গুরুত্বপূর্ণ দ্রষ্টব্য:**
* স্বর্ণ ও রৌপ্যের বাজার মূল্য প্রতিদিন পরিবর্তিত হতে পারে। তাই যাকাত দেওয়ার আগে সর্বশেষ মূল্য জেনে নেওয়া উচিত।
* যাকাত হিসাব করার ক্ষেত্রে একজন অভিজ্ঞ আলেমের পরামর্শ নেওয়া prudent।
* বিভিন্ন ফিকহি মাজহাবের মধ্যে যাকাতের হিসাবের কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নতা দেখা যেতে পারে।
আপনি যদি আপনার যাকাতের সঠিক পরিমাণ জানতে চান, তাহলে একজন নির্ভরযোগ্য আলেম বা যাকাত ক্যালকুলেটরের সাহায্য নিতে পারেন। উপরে দেওয়া তথ্যগুলো আপনাকে একটি সাধারণ ধারণা দেবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন